অনলাইন ডেস্ক : একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে করোনার ধাক্কায় পোশাকের আমদানি কমে গেছে ব্যাপকহারে। দেশটির পোশাক আমদানির তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (ওটেক্সা)-এর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে পোশাক আমদানি কমেছে ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত বছরের প্রথম ১০ মাসে দেশটি ৭ হাজার ২৪৯ কোটি ডলারের পোশাক কিনলেও এবার তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৯৫ কোটি ডলারে। মূলত করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় সার্বিকভাবে চাহিদা কমায় দেশটির পোশাক আমদানি এত বেশি হারে কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে চীন থেকে, প্রায় ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যদিও চীন থেকে পোশাক আমদানি কমার পেছনে করোনার পাশাপাশি বাণিজ্যযুদ্ধও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি কমেছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ওটেক্সটর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশটিতে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো করেছে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান। বাদবাকি দেশগুলোর রপ্তানি কমার হার বাংলাদেশের চাইতে বেশি।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইউরোপের চাইতে অপেক্ষাকৃত সাধারণ মানের এবং কম দামের পোশাক বেশি রপ্তানি হয়ে আসছিল। করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যের পোশাকের ব্যবহার কম হওয়ায় সাধারণ মানের পোশাকের চাহিদা খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। এ কারণে সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি ইউরোপের চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ইত্তেফাককে বলেন, এর বাইরেও চীনের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সেখান থেকে পোশাক কম নেওয়ার সুযোগ কিছুটা বাংলাদেশ পেয়েছে। তবে এই সুবিধার বেশির ভাগই গেছে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার পকেটে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান এবং মায়ানমারও পেয়েছে। এসব দেশের নিজস্ব গভীর সমুদ্রবন্দর থাকায় তারা লিড টাইমে (ক্রয়াদেশ নেওয়ার পর পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়) আমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় (পরিমাণে) এখনো শীর্ষে চীন। এর পর রয়েছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া। আলোচ্য ১০ দেশের মধ্যে ৯টিরই রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে গেছে। কেবল বেড়েছে কম্বোডিয়ার। দেশটির পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এছাড়া ভিয়েতনামের কমেছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এছাড়া চীনের কমেছে ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার সাড়ে ২০ শতাংশ, ভারতের ২৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, মেক্সিকোর ৩২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৩৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও কোরিয়ার ২৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
ওটেক্সার হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের আলোচ্য সময়ে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের, যা চলতি বছরের একই সময়ে নেমেছে ৪৪৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলারে।
এদিকে করোনার প্রথম ধাক্কার পর গত জুলাই থেকে দেশটিতে পোশাক আমদানি বাড়তে থাকলেও দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে পোশাক রপ্তানিতে।