অনলাইন ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর বিচারকদের প্রতি তার অনুরোধের ভিত্তিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও গাজায় যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে ‘জরুরি’ রায় প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রসিকিউটর করিম খান বলেছেন, ‘এই প্রক্রিয়াগুলোতে যেকোনো অযৌক্তিক বিলম্ব ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।’
এই প্রসিকিউটর মে মাসে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও দেশটির অন্যান্য কর্মকর্তা এবং হামাসের তিন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন করেছিলেন। হামাসের নেতৃত্বে ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা এবং তারপর গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ এনে তিনি এ আবেদন করেছিলেন।
করিম খান শুক্রবার প্রকাশিত আদালতের নথিতে জোর দিয়ে বলেছেন, দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে নৃশংসতা চালানো ইসরায়েলি নাগরিকদের বিচার করার এখতিয়ার আইসিসির রয়েছে। পাশাপাশি তিনি বিচারকদের প্রতি একাধিক সরকার ও অন্যান্য পক্ষের করা আইনি চ্যালেঞ্জগুলো খারিজ করার আহ্বান জানান।
এ ছাড়া অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নিজস্ব তদন্ত পরিচালনার দাবিগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছেন আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর। সেই সঙ্গে প্রসিকিউটররা বলেন, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট এবং হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, সামরিক প্রধান মোহাম্মদ আল-মাসরি ও হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অপরাধমূলক দায়বদ্ধতার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।
ইসমাইল হানিয়া জুলাই মাসে ইরানে হত্যার শিকার হন। তার মৃত্যুর খবর নিয়ে আদালত মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। ৭ অক্টোবরের হামলার নেপথ্যে থাকা গাজার হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা সিনওয়ারকে পরে গোষ্ঠীটির নতুন নেতা মনোনীত করা হয়।
ইসরায়েল বলেছে, তারা জুলাই মাসে দক্ষিণ গাজায় একটি বিমান হামলায় মোহাম্মদ আল-মাসরিকে হত্যা করেছে, যিনি মোহাম্মদ দেইফ নামেও পরিচিত।
তবে হামাসের পক্ষ থেকে এর কোনো নিশ্চিতকরণ তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নেতারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলোকে খারিজ করেছেন। পাশাপাশি উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা করিম খানের পরোয়ানা চাওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। নেতানিয়াহু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে ‘অসম্মানজনক’ এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও পুরো ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। হামাসও তার এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তাদের নেতাদের গ্রেপ্তারের অনুরোধের অর্থ হলো ভুক্তভোগীদের নির্যাতকের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
ইসরায়েল অবশ্য এ আদালতের সদস্য নয়। তাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে মামলার তাৎক্ষণিক ঝুঁকি নেই। তবে গ্রেপ্তারের হুমকি ইসরায়েলি নেতাদের বিদেশ ভ্রমণকে কঠিন করে তুলতে পারে। পরোয়ানার জন্য করিম খানের অনুরোধে বিচারকরা কখন রায় দেবেন, তা-ও এখনো স্পষ্ট নয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শনিবার দেওয়া হিসাব অনুসারে, ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০ হাজার ৩৩৪ জন নিহত এবং ৯৩ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছে। ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার সময় ইসরায়েলে আনুমানিক এক হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি জিম্মি হয়েছিল।
সূত্র : আলজাজিরা