অনলাইন ডেস্ক : স্বস্তি ফিরছে দেশের পোশাকশিল্পে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নানা দাবিতে মাঠে নামে শ্রমিকরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বহিরাগতরা। এ সময় কারখানা ভাঙচুর, লুটপাট ও দখলের ঘটনা ঘটে। এতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পোশাক খাতে। আইনশৃঙ্খলারও চরম অবনতি ঘটে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১৮ দফা দাবি তোলা হয়। সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে তারা ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরে আসে পোশাক খাতে। দেশের ৯৯ শতাংশ কারখানা বর্তমানে চালু হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের মধ্যেও আস্থা ফিরছে।

অন্যদিকে কারখানাগুলোতে নতুন নতুন অর্ডার ও আগের অর্ডারের কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। তাই নতুন কর্মী নিতে নানা জায়গায় বিজ্ঞপ্তিও দিচ্ছেন। জানা গেছে, আগামী মৌসুমকে কেন্দ্র করে প্রায় কারখানায় আসছে নতুন নতুন অর্ডার। গত মাসের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ অর্ডার বেড়েছে। কারখানা মালিকরা আশাবাদী আগামী মৌসুমে পুরো অর্ডার পাবেন। ক্রেতাদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। তারা বাংলাদেশ থেকেই পোশাক নিতে চান। তবে পরিবেশ আরও স্থিতিশীল ও স্থায়ীত্ব চান তারা। এদিকে ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিজিএমইএ। বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করছে।

জানা গেছে, নতুন সরকারের প্রতি ক্রেতা দেশগুলোর আস্থা বাড়ছে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন। তাকে বিশ^বাসী চেনেন। তার প্রতি বিশ^াস রাখেন। তাকে তারা অনুসরণ করেন। তার প্রতি আস্থা থাকায় ক্রেতারা অন্যদেশে যাবে না বলে বিশ^াস ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত সময়ে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে নতুন সরকারের কাছে স্থিতিশীলতা ও নীতি সহায়তা চান। একই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুতের নিশ্চয়তা থাকলে কাজে আরও গতি আসবে। এ ছাড়া পেছনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে ব্যাংকগুলোকেও পাশে চান তারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, অস্থিতিশীলতার কারণে অনেক দিন কারখানা বন্ধ ছিল। কিন্তু কর্মীদের বেতন দিতে হয়েছে। এতে অনেক কারখানা রুগ্নের পথে। কারখানা মালিকদের হাতে টাকা নেই। এ ছাড়াও নতুন অর্ডারের কাজ করতে অর্থের প্রয়োজন। এ জন্য সহজ ব্যাংকঋণ চান তারা। এক এলাকায় একটি কারখানায় সমস্যা হলে তা অন্য কারখানাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। সে জন্য যেসব কারখায় সমস্যা চলছে, তা চিহ্নিত করে সমাধান করা প্রয়োজন।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়- সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এখন কোনো অস্থিরতা নেই। তবে সাভার ও আশুলিয়ায় ৪০৭টি কারখানার মধ্যে ৩টি ছাড়া সকল কারখাানা খুলেছে। বন্ধ ৩ কারখানার মধ্যে ২টি ১৩/১ ধারায় বন্ধ রয়েছে। গাজীপুরে ৮৭১ কারখানার মধ্যে ২টি ছাড়া বাকিগুলো চালু রয়েছে।

স্পারো অ্যাপারেলসের এমডি ও বিজিএমইএর পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, এখনও ক্রেতারা নজর রাখছে। তারা সতর্কতা অবলম্বন করছে। তবে আগের তুলনায় ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ মৌসুমে ভালো অর্ডার পাওয়া যাবে।

বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক ভালো। কারখানাগুলোয় পুরোদমে কাজ চলছে। ক্রেতাদের মধ্যে আস্থা ফিরছে। নতুন নতুন অর্ডার আসছে। আশা করা যায়, আগামী মৌসুমের অর্ডার অন্য দেশে যাবে না। বর্তমান সরকারের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা আছে।

এদিকে ক্রেতা ও উৎপাদনকারীর মধ্যে সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) পরিচালক কিয়াও সেন থাই ডলি বলেন, ইতোমধ্যে ক্রেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। তাদের থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের আগে থেকেই আস্থা আছে।

বিজিবিএর আরেক পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কাজের পরিবেশ নেই বলে বিদেশি ক্রেতাদের নিকট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে। এতে ক্রেতারা বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ইতিবাচক প্রচারণা চালানো দরকার। এ ছাড়াও অনেক কারখানা রুগ্ন হয়ে গেছে, সেগুলোকে দ্রুত সচল করতে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। এসব কারখানা ঠিক না হলে পরিবেশ নষ্ট হবে বলেও মনে করেন তিনি।