অনলাইন ডেস্ক : স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলতে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এ উদ্যোগ স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের জনপ্রিয়তাও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে স্কুল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ও সঞ্চয় স্থিতির পরিমাণ। স্কুল ব্যাংকিং শুরু হওয়ার নয় বছরের ব্যবধানে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ২৩ লাখ ছাড়িয়েছে। একই সময়ে সঞ্চয় স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা।
জানা গেছে, স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং সুবিধা ও তথ্যপ্রযুক্তিগত সেবার সঙ্গে পরিচিতি করানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের ২ নভেম্বর স্কুল ব্যাংকিং বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করে। এরপর থেকেই স্কুলপড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে। ২০১০ সালে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয় ২৯ হাজার ৮০টি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় দেশের ব্যাংকগুলোয় মোট ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়। ঐ সময় হিসাবগুলোয় মোট স্থিতি ছিল ৯৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর ২০২০ সালের মার্চ শেষে ২৩ লাখ ২৯ হাজার ১৩১টি হিসাবের বিপরীতে জমাকৃত সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০টি। অর্থাত্ এক বছরে হিসাব সংখ্যার প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। এই সময়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের জমানো আমানত বেড়েছে ৯৯ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী স্কুল শিক্ষার্থীদের হিসাব সংখ্যা ও টাকা জমার স্থিতির দিক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের অবদান সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো মোট ১৬ লাখ ১২ হাজার ১১৩টি ব্যাংক হিসাব খুলেছে, যা মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের ৬৯ দশমিক ২২ শতাংশ।
স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ। ফলে ব্যাংকগুলোতে এই কার্যক্রমের আওতায় খোলা হিসাবের পাশাপাশি আমানতের পরিমাণও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে, যা স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের মোট স্থিতির ৮৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুললেও মোট স্থিতির মাত্র ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাবের ৩৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ খোলা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে। ৬১ দশমিক ৪৩ শতাংশ খোলা হয়েছে শহরাঞ্চলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ স্কুলের ছাত্রছাত্রী। স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সঞ্চয়ের অভ্যাস ছেলেমেয়েদের মনে এনে দেবে আর্থিক শৃঙ্খলা, যা তাদের সুশৃঙ্খল জীবন গঠনেও সহায়ক হবে। তিনি বলেন, করোনাকালে স্কুল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও করোনা পরবর্তীতে এ কার্যক্রম জোরদার করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
১১ থেকে ১৮ বছর বয়সি অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা তাদের বাবা-মা অথবা বৈধ অভিভাবকের সঙ্গে যৌথ নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। মাত্র ১০০ টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাংক শাখায় এ হিসাব খোলা যায়। এ হিসাবে কোনো ফি বা চার্জ আরোপ করা হয় না। এমনকি ন্যূনতম স্থিতি রাখার বাধ্যবাধকতাও নেই।