অনলাইন ডেস্ক : সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে জেলার সব উপজেলা আবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় জেলার প্রধান নদী সুরমাসহ সব কটি নদী ও হাওরের পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

নতুন করে প্লাবিত হয়েছে জেলার সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা। এসব উপজেলার রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-ছাতক এবং ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে।

শনিবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাটে পানি প্রবেশ করায় আবারও দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সুরমা নদীর পানি তীর উপচে শহরে ঢুকতে শুরু করে। আজ শহরের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। শহরের উকিলপাড়া, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, কালিপুর, ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, হাসননগর, বড়পাড়া, উত্তর আরপিনগর, হাজীপাড়া, মধ্যবাজার, নবীনগর, ধোপাখালী, নতুনপাড়া এলাকায় রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরে পানি দেখা গেছে। ওয়েজখালী এলাকার বাসিন্দা রফিক নূর বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এবার পানি বেশি হয়েছে। পানি বাড়ছে। মনে হচ্ছে এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম কবির জানান, তাঁর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন কমবেশি বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষজনের বাড়িঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলার আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।

বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও সমীর বিশ্বাস জানান, তাঁর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মধ্যে ফতেপুর ও সলুকাবাদ ইউনিয়ন বেশি আক্রান্ত। উপজেলায় ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত ২৭৪টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

সুনামগঞ্জে গত ২৫ জুন প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। কিন্তু গত তিন দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আবার পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার জহিরুল ইসলাম জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৬৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার ২৭৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০ হাজার ৩২০টি পরিবার। উপজেলাগুলোতে ত্রাণ হিসেবে ৫১০ মেট্রিক টন চাল ও ৪৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী প্রীতম পাল জানান, শনিবার বেলা তিনটায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার। একই সময় সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৫২৩ মিলিমিটার। উজান থেকে আরও ঢল নামবে। তাই সুনামগঞ্জে আরও পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।