অনলাইন ডেস্ক : কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেছেন, আউশ আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদেরকে বীজ, সার, সেচসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। সারের দাম কমানো হয়েছে। অন্যদিকে, কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো উচ্চ ফলনশীল জাতের উদ্ভাবন করেছে, যেগুলো চাষের ফলে গড় ফলনও বেড়েছে। আজকের ক্রপ কাটিংয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বিঘা জমিতে এখন ১৮-১৯ মণ ধান হচ্ছে যেটি অত্যন্ত গর্বের ও অহংকারের। অথচ, এক সময় আউশ উৎপাদন সবচেয়ে কম হতো। বিঘাতে মাত্র ২-৩ মণের মতো। ফলে, এবছর অনেক উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে কৃষকেরা আউশ চাষ করেছেন। সারা দেশে আউশের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মন্ত্রী শনিবার মেহেরপুর জেলা প্রশাসন এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আয়োজিত মেহেরপুর জেলার সদর উপজেলার কালাচাঁদপুর গ্রামে আউশ ধান কর্তন উদ্বোধনকালে অনলাইনে এসব কথা বলেন। এতে প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান। সভায় সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আবদুল মুঈদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মো: শাহজাহান কবীর, মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিপণ্যের বাজারজাতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। ইউরোপ-আমেরিকায় শাকসবজির অনেক দাম। এদেশের কৃষিপণ্যকে ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশের বাজারে রপ্তানি করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সেজন্য, পূর্বাচলে একটি এগ্রো প্রসেসিং সেন্টার করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যাতে করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি করা যায়।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, এমপি বলেন, মেহেরপুর কৃষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ অঞ্চল। দেশের কৃষিতে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের ব্যাপক অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। তাই এ অঞ্চলের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে দেশের কৃষিখাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে সেচের সুবিধার জন্য কিছু নদী খনন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো নদী ও খাল খনন করা হবে। প্রতিমন্ত্রী এ সময় এ অঞ্চলের বিভিন্ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকে আরো এগিয়ে নিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর‌ও ‌‌গুরুত্বারোপ করেন।

কৃষি সচিব মো: নাসিরুজ্জামান বলেন, নতুন জাতের প্রসার ও জনপ্রিয়করণে এ ধরণের ফসল কর্তন উৎসব খুবই প্রয়োজন। বর্তমানে ব্রি ধান-৪৮ আউশের একটি ভাল জাত, তবে এর চেয়েও ভালজাত বা মেগাভ্যারাইটি ব্রি ধান-৮৩ নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া, কৃষকের কাছে নতুন জাতের চাষাবাদ জনপ্রিয় করতে জেলা-উপজেলার ফান্ডের মাধ্যমে কিছু বীজ ক্রয় করা ও সংরক্ষণ করা গেলে সহজেই জাতগুলো জনপ্রিয় হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলাতে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া, এ জেলায় কৃষির সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলায় ক্রমাগত আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১০ বছরে আউশ আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১০-১১ সালে আউশ আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে, চলতি বছরে আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। আর গতবছরের তুলনায় এবছর ৩০ ভাগ বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। ফলন ভাল হওয়ায় এ বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন অর্জিত হবে আশা করছে মেহেরপুর কৃষি বিভাগ।

আউশ আবাদ বৃদ্ধিসহ সকল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বীজ, সার, সেচসহ কৃষি উপকরণে বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। মেহেরপুরে এবছর আউশের, মাসকলাই ও পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি জন্য ৮ হাজার ৫৫০ জন কৃষকের মাঝে ৩৮ লাখ টাকার প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, সেচের পানির কম ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়া এবং কৃষি বিভাগের নিরলস উৎসাহ-সহযোগিতার ফলে কৃষকেরা আউশ আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমনে এ বছরের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৭ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমনে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান চাষ ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম চলছে।

এছাড়া, বাজার দর ভাল হওয়ায় মেহেরপুর জেলায় ক্রমাগত ভুট্টা চাষ বাড়ছে। গত ১০ বছরে আবাদ বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। ২০১৯-২০ বছরে ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে, উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।