অনলাইন ডেস্ক : কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের শামলাপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এই তদন্ত প্রতিবেদনের দিকেই এখন সবার নজর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মেজর (অব.) সিনহা গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

গত মঙ্গলবার সকালে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান কক্সবাজারে এসে পৌঁছান। বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার হিল ঢাউন সার্কিট হাউজ সম্মেলনকক্ষে তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছেন বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন।

বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলা তদন্ত কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘আজ থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এজন্য কমিটির অন্যান্য সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দিনব্যাপী বৈঠক করেছি। তদন্তের স্বার্থে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছি আমরা। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে যেখানে যেতে হবে সেখানে যাওয়া হবে। যার যার সঙ্গে কথা বলা দরকার তাদের সঙ্গে কথা বলব। পুরো তদন্তকাজটি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। দুঃখজনক ঘটনাটির নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে।’

উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটিতে রয়েছেন ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী।

গত শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৭)। ঐ ঘটনার পর প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও পরবর্তী সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্গঠন করা কমিটিতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করা হয়েছে। কমিটিতে রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উত্স অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তার করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত দিতে বলা হয়েছে। এরপর থেকে তদন্ত টিমের প্রতিবেদনে দৃষ্টি নিবন্ধন হয়ে আছে সবার।

এদিকে ঘটনার পর ২ আগস্ট কক্সবাজারে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. জাকির হোসেন। সোমবার বিকেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ পরিদর্শন করেন ডিআইজি ও অন্যরা। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে কিছুই বলেননি।

অন্যদিকে, সেনাবাহিনী ও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর চৌকস অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের মূল কারণ কী এবং আসলেই তিনি কীভাবে মারা গেলেন এসব বিষয়ে সব পেশার মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। গাড়ি তল্লাশি নিয়ে তর্ক হওয়ার পর নিজের ব্যবহূত বন্দুক তাক করলে পুলিশ আত্মনিরাপত্তার খাতিরে গুলি করেছে বলে শুরু থেকে বলে এলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা টিমকে ভিন্ন কথা বলেছেন।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, সেনাবাহিনী থেকে ২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া মেজর সিনহা রাশেদ খান ‘জাস্ট গো’ নামের একটি ফ্লিমের শ্যুটিং করার জন্য এক মাস আগে কক্সবাজারের হিমছড়িতে এসে নীলিমা রিসোর্ট নামে একটি হোটেলে দুই কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছিলেন। এ সময় মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন স্পটে শুটিং করে তার টিম। ৩১ জুলাই বিকেলে বাহারছড়া ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা থেকে শহিদুল নামের এক কিশোরকে নিয়ে মাথাভাঙ্গা ও মারিশবনিয়ার একটি পাহাড়ে উঠে পছন্দসই শট নেন। কিশোরটি তাদের পথ দেখিয়ে ফিরে এলে তারা লাইটের আলো জালিয়ে কাজ করেন। এতে স্থানীয় অনেকেই অপরিচিত লোকজন দেখে কৌতূহল ও নানা রকম ধা করতে থাকেন। সন্ধ্যা শেষে রাতের শুরুতে গন্থব্যস্থলে ফেরার জন্য রওনা দেন তারা। পথে প্রথমে টেকনাফ সড়কের ২ বিজিবির চেকপোস্ট পার হন। পরে বাহারছড়া পুলিশের তদন্তকেন্দ্রের তল্লাশি চৌকিতে পৌঁছালেই গাড়ি থেকে নামতে বলা হয় তাকে। তিনি হাত উঁচু করে নামার অল্পক্ষণে পুলিশের গুলিতে ঢলে পড়েন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা সঙ্গী সিফাতকেও পায়ে গুলি করে আটকে রেখে তদন্তকেন্দ্রে নেওয়া হয়।

ঘটনাটি তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপরই শনিবার বিকেলে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনসহ পুলিশের ২০ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়।