মনিস রফিক : চলচ্চিত্রের যাত্রাপথ ইতোমধ্যে ১২৫-এ পা দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নবীন আর শক্তিশালী এই শিল্পমাধ্যমকে ‘অষ্টম আশ্চর্য’ বলা হয়। আমাদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-নিরাশা আর ভালোবাসার কথা যেভাবে এই শিল্পমাধ্যমে উঠে আসে, তা অন্য শিল্প মাধ্যমে সম্ভব হয় না। মূলত পূর্বের ছয়টি শিল্পের মিথস্ক্রিয়া আর প্রতিফলনে ঋদ্ধ চলচ্চিত্র নামের এই ‘সপ্তম শিল্পকলা’। শুরু থেকে বর্তমানের চলচ্চিত্রের যাত্রাপথটা কেমন ছিল, আর কোন কোন অনুসন্ধিৎসু ক্ষণজন্মা স্বপ্ন দেখা মানুষের স্বপ্নের ফসল এই চলচ্চিত্র, সে সব বৃত্তান্ত উঠে আসবে চলচ্চিত্রকর্মী মনিস রফিক এর লেখায়। চলচ্চিত্র যাত্রাপথের এই বাঁকগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে ‘বাংলা কাগজ’ এ।
একুশ.
১৯৭২ সালের জুলাই-এ ‘অশনি সংকেত’ ছবির শ্যুটিং শুরু হল শান্তিনিকেতনের কাছেই ভাঙাপাড়া গ্রামে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে অবিভক্ত বাংলায় মনন্তর যে দুর্ভিরে রূপ নিয়ে দেখা গিয়েছিল, সেই চিত্র। এ ছবিতে বাংলাদেশের চিত্রনায়িকা ববিতা অভিনয় করেন। দেশ ও কালের এক সুতীব্র সংকটের মুহূর্তে অশনি সংকেত তৈরি হল। ছিয়াত্তরের দেশ জোড়া আকাল, অগ্নিমূল্য ও কালোবাজারীদের সীমাহীন খেয়াল খুশীর আধিপত্য যখন সাধারণ মানুষ এক অসাধারণ ধৈর্যের পরীক্ষায় রত, তখন সত্যজিৎ রায় তাঁর চলচ্চিত্রে তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির কথা শোনালেন। যে দুর্ভিক্ষের পেছনে কোন অনাবৃষ্টি, বন্যা কিংবা কোন অজন্মার ভূমিকা ছিল না। তবুও সেই দুর্ভিক্ষের বলি হয়েছিল এই দেশেরই পঞ্চাশ লক্ষ নর-নারী। ‘অশনি সংকেত’ ছবিটি ১৯৭৩ সালের ৩ জুলাই বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়।
১৯৭৪ সালের শুরুতে সত্যজিৎ রায় ‘সোনার কেল্লার’ শ্যুটিং শুরু করলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছবিটি প্রযোজনার জন্য এগিয়ে আসে। শিশুদের বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি ছবিটি করেন। জাতিস্মরী বালক মুকুলকে ঘিরে গল্পটি আবর্তিত হয়েছে। এই আবর্তনের অন্যান্যদের মত সত্যজিতের ডিটেকটিভ হিরো প্রদোষচন্দ্র মিত্রও ঘুরে। কোলকাতা, রাজস্থান, দিল্লীর লালকেল্লা, যোধপুর ও জয়সলমিরে ছবিটির শ্যুটিং হয়।
প্রেমচাঁদের অমর কাহিনী ‘শতরঞ্জ কে খেলাড়ী’ অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় তাঁর প্রথম হিন্দী ছবি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। এই কাহিনীর যে সর্ব ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক আবেদন তাতে বাংলার চেয়ে হিন্দীতে করলে ছবিটি আরো বেশি ফলপ্রসূ হওয়ার চিন্তা থেকেই তিনি ছবিটি হিন্দীতে করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর পূর্বে শান্তিনিকেতনে থাকার সময় সত্যজিৎ প্রথম উপন্যাসটি পড়েন এবং কাহিনীটি তাঁকে এত বেশি আলোড়িত করে যে, তিনি সব সময়ই ভাবতেন সময় সুযোগ আসলেই এই ছবিতে তিনি হাত দিবেন। ১৮৫৬ সালের লখনৌর ইতিহাস ও নবাবকে নিয়ে এই কাহিনী গড়ে উঠেছে। লখনৌর নবাব শাহ ওয়াজেদ আলীর কাহিনী, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ আর ব্রিটিশদের ভারত দখল উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। ব্রিটিশদের দ্বারা অযোধ্যা দখল নিয়ে সাধারণ জনগণের অস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। সত্যজিৎ সেই বিষয়টির দিকেই দৃষ্টি দিতে চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতে, এটি তথ্য চিত্রের চরিত্রও হতে পারে। ১৯৭৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইলাস্ট্রেটেড উইকলি-র এক সমালোচনার জবাবে এই চিত্রনাট্য লেখার পূর্বে তিনি যে যে উৎস গবেষণা হিসেবে নিয়েছিলেন তার এক বিশাল তালিকা পেশ করেছিলেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ব্লু বুক অন অওধ, মিল এবং বেভারিজ এর ভারত ইতিহাস, ডালহৌসির পত্রাবলী, উটরামের দুটি জীবনীগ্রন্থ, হাওয়ার্ড রাসেলের দ্য ইন্ডিয়ান মিউটনি, তরুণ ওয়াজিদের ডায়েরি, উমরাও জান আদা, সমসাময়িক ইংরেজি ও বাংলা পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি।
এ ছবিতে অভিনয় করলেন বোম্বের সঞ্জীব কুমার, সৈয়দ জাফরি, আমজাদ হোসেন, বিরজু মহারাজ, শাবানা আজমি প্রমুখ। সেই সাথে একটি দৃশ্যের জন্য অভিনয় করেছিলেন প্রায় ত্রিশ জন ব্রিটিশ, ক্যানাডিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান সরকারের দিল্লীস্থ দূতাবাসকর্মী। ৬১তম ক্যাভালরির সেনাবাহিনী এবং আশিটি শিতি ঘোড়া, উট আর হাতি নিয়ে ঐতিহাসিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সৈন্যদল তৈরি হয়েছিল। এ ছবিতে জেনারেল উটরামের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বিখ্যাত গান্ধী চলচ্চিত্রের পরিচালক রিচার্ড এ্যাটেনবরো। এই ছবিতে সেই সময়েই খরচ হয়েছিল চল্লিশ লক্ষ টাকা।
১৯৭৮ সালের প্রথম দিকে নিজের রচিত ফেলুদা কাহিনী নিয়ে সত্যজিৎ রায় তৈরি করলেন ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। সম্ভবত মগনলাল মেঘরাজের চরিত্র তাঁকে খুব আকর্ষণ করতো। মগনলাল মেঘরাজের ভূমিকায় উৎপল দত্তের অভিনয় ছিল অসাধারণ। ছবির শ্যুটিং হয়েছিল বেনারসে।
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ এর দ্বিতীয় পর্বে তিনি হাত দিলেন ‘হীরক রাজার দেশে’ নামে। এ ছবিতে দু রকম সংলাপ রাখা হয়েছে। সত্যজিৎ প্রথমবারের মত তাঁর চলচ্চিত্রে রাজা এবং তাঁর সভাসদদের কথোপকথন অন্তমিলযুক্ত পদ্যবন্ধে রেখেছেন। ‘হীরক রাজার দেশে’ রূপকের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা এবং একনায়কতন্ত্রের প্রতিবাদ করা হয়েছে। সত্তরের মধ্যভাগে দিল্লীর তুর্কমান গেটে যেমন বসতি ভাঙার ঘটনা ছিল এখানেও সেই ধরনের দৃশ্য আছে। আরো আছে শ্রমিক-কৃষক-শিক-ছাত্র সকলের মগজ ধোলাইয়ের জারিজুরির পরিকল্পনা।
জীবনের প্রথম সত্যজিৎ রায় যে ছবির চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন সেটি হচ্ছে ‘ঘরে বাইরে’। ১৯৪৭ সালে। কিন্তু ছবিটি করা হয়নি। সেই ছবিটি তৈরির জন্য ১৯৮১ সালে তিনি আবার চিত্রনাট্য তৈরি করলেন। এ ছবিতে সত্যজিৎ রায় উত্তম কুমারকে দিয়ে স›দ্বীপ এর চরিত্রে অভিনয় করাতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি জানিয়েছিলেন ভিলেন বা খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতে তিনি ইচ্ছুক নন। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এই ছবি চলাকালীন সময়ে সত্যজিতের হার্ট এ্যাটাক হল। বেশ কিছুদিন তিনি কোন কাজ করতে পারলেন না ফলে ছবিটি শেষ করতে করতে ১৯৮৪ এর মাঝামাঝি লেগে গেল।
‘ঘরে বাইরে’ ছবির পর সত্যজিৎ ১৯৮৯ সালে তৈরি করলেন হেনরিক ইবসেন এর কাহিনী অবলম্বনে ‘গণশত্রু’ এবং ১৯৯০ সালে নিজের কাহিনী অবলম্বনে ‘শাখা-প্রশাখা’। পূর্ণদৈর্ঘ্যরে কাহিনীচিত্র ছাড়াও সত্যজিৎ পাঁচটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে উপরে ‘রবীন্দ্রনাথ’ নামক তথ্যচিত্র। এটির চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও ধারাভাষ্যে সত্যজিৎ রায় নিজেই ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে ‘সিকিম’। ১৯৭২ সালে ‘ইনার আই’, ১৯৭৬ সালে ‘বালা’ এবং ১৯৮৭ সালে ‘সুকুমার রায়’। ‘ইনার আই’ তথ্যচিত্রটি তাঁর শান্তিনিকেতনের চিত্রকলার শিক্ষক বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের শিল্পী জীবন নিয়ে। শান্তিনিকেতনের যে দুজন শিক্ষকের কথা সত্যজিৎ আমৃত্যু পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন তাদের একজন হচ্ছেন শিল্পী নন্দলাল বসু আরেকজন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়। এছাড়া তিনি দূরদর্শনের জন্য ১৯৬৪ সালে ‘টু’ কাহিনী চিত্র, ১৯৮২ সালে ‘পিকু’ এবং ‘সদগতি’ তৈরি করেন।
ইতোমধ্যে সত্যজিতের শরীরটা খারাপ হতে শুরু করেছে। তাঁর অতিথি গল্পটাকে একটু বড় করে ‘আগন্তুক’ নামে একটি ছবি করার সাধ তাঁর বহুদিনের। ১৯৯০ সালে তিনি এই ছবির শ্যুটিং শুরু করলেন। দীর্ঘদিন পর কোলকাতায় ফিরে আসে এক ব্যক্তি। তাঁর ভাগ্নির বাসায় কয়েকটি দিন কাটাতে চান। ভবঘুরে এই মামার জীবন কেটেছে পৃথিবীর সব বৈচিত্রময় পরিবেশে। এক সময় কোলকাতায় ছাত্র থাকা অবস্থায় বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রথম হওয়া মামা কিসের এক টানে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। তিনিই ফিরে এসেছেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে গড়ে উঠে সন্দেহের ঘেরাটোপ। তাঁর কথা বিশ্বাস করতে সবাই সন্দেহ পোষণ করে। তর্ক হয় ভাগ্নি জামাইয়ের বন্ধুর সাথে। নগর জীবনের অবিশ্বাসে মামা কষ্ট পান। আবার ভালভাবেই উপলব্ধি করেন দীর্ঘদিন আদিবাসীদের সরলতায় জীবন কাটিয়ে দেওয়ায় আছে পরম সুখ। তাইতো কোলকাতা ছেড়ে তিনি ক্ষণিকের জন্য আশ্রয় নেন এক আদিবাসী পল্লীতে। পরে সন্দেহ প্রবণ ভাগ্নি জামাই এবং ভাগ্নির মামার আসলত্ব নিয়ে সন্দেহ দূর হয়, যখন মামা কোলকাতা ছেড়ে চলে যান এবং যাবার আগে ভাগ্নির নামে দিয়ে যান উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত তাঁর বিশাল অংকের অর্থ। ‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রে মামার চরিত্রে উৎপল দত্তের অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনবদ্য সৃষ্টি। ছবির শ্যুটিং চলার সময় সত্যজিৎ শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল। মনে হচ্ছিল তাঁর অনেক তাড়া আছে, অনেক কাজ বাকী। অবশেষে ‘আগন্তুক’ ছবির শেষ শটটির সময় এলো। অনেকক্ষণ সত্যজিৎ ক্যামেরায় লুক থ্রæ করলেন, সব কিছু ঠিকঠাক দেখে নিলেন। তারপর ‘পথের পাঁচালী’র প্রথম শট নেয়ার সময় যেমন একটা খোশ মেজাজ ছিল তেমনই এক মেজাজে তিনি জলদ কণ্ঠে বলে উঠলেন; ‘লাইটস, ক্যামেরা, এ্যাকশন’। শটটা ওকে হবার পর বেশ হাসির মেজাজে একটা তালি মেরে বলে উঠলেন, ‘যাঃ, আমার যা কিছু ছিল সব ফুরিয়ে গেল। আর কিছু বলার নেই।’
১৯৯২ সালের ৪ মার্চ সত্যজিৎকে আবার ইনটেনসিভ কেয়ারে ভর্তি করা হল। এবার ওঁর হার্ট ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডাক্তার ওঁকে তৈরি করছেন। তাঁর অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসে হলিউড থেকে টেলিগ্রামে জানানো হয়েছে তাঁর জীবনব্যাপী কীর্তির স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি এবারে অস্কার পুরস্কারে ভূষিত হবেন। ৩০ মার্চ ১৯৯২ এ আমেরিকায় বিশ্ব চলচ্চিত্রে মহারথিদের উপস্থিতিতে তাঁকে অস্কার পুরস্কার প্রদান করা হবে। প্রাণচাঞ্চল্যে জেগে উঠলেন চলচ্চিত্রের এই নোবেল পুরস্কারটা পাওয়ার জন্য। এর মধ্যে তাঁকে বিভিন্ন মহল থেকে পুরস্কার দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে। কিছুদিন পূর্বে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট স্বয়ং ফ্রাঁসোয়া মিতেরা কোলকাতায় এসে সত্যজিৎ রায়কে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘লিজিয়ন অব দ্য অনার’ এ ভূষিত করে গেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসীমা রাও জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রীসভার মিটিং ডেকেছেন এবং সেই দিনই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ঘোষণা করা হয় সত্যজিৎ রায়কে ‘ভারতরত্ন’ উপাধি দেওয়া হচ্ছে। সবাই এত তাড়াহুড়ো করছে কেন? তাঁর কি যাবার সময় হয়ে গেছে!
সত্যজিৎ রায়ের অস্কার নেওয়ার জন্য আর আমেরিকায় যাওয়া হল না। এমনকি ৩০ মার্চ পর্যন্ত অস্কার কমিটি অপেক্ষাও করল না। তারপূর্বে অস্কার পুরস্কার নিয়ে এক মার্কিন প্রতিনিধি দল কোলকাতায় এসে হাজির হল। পনের দিন আগে নার্সিং হোমেই অসুস্থ সত্যজিতের হাতে অস্কার তুলে দেওয়া হল। ১৯৯২-র ৬৪তম বার্ষিক একাডেমী পুরস্কারের পত্রে আট লাইনে লেখা ছিল :
“অ্যান একাডেমী অনারারি অ্যাওয়ার্ড ইজ প্রেজেন্টেড টু সত্যজিৎ রায় ‘ইন রেকগনিশন অফ হিজ রেয়ার মাষ্টারি অফ দ্য আর্ট অফ মোশান পিকচার্স, এন্ড অব হিজ প্রোফাউন্ড হিউম্যানিট্যারিয়ান আউটলুক, হুইচ হ্যাজ অ্যান ইনডেলিবল ইনফুয়েন্স অন ফিল্মমেকারস এন্ড অভিয়েন্সেজ থ্র আউট দ্য ওয়ার্ল্ড।”
তাঁর উদ্দেশ্যে লেখা এই কথাগুলো পড়ে হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে গেল দশ বছর বয়সের সেই দৃশ্যটি। যেবার মা সুপ্রভা রায়ের সঙ্গে বালক মানিক তাঁর বেগুনী অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে গিয়েছিল শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অটোগ্রাফ নেবার আশায়। একদিন পর অদ্ভুত জড়ানো হাতের আট লাইনে লেখা কবিতাটা বালক মানিকের হাতে দেবার সময় কবিগুরু তার মাকে বলেছিলেন, ‘এটার মানে ও আরেকটু বড় হলে বুঝবে।’ অস্কার ট্রফিটা হাতে নিয়ে সব ভুলে তাঁর মন কেন যেন ছুটে যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের দিকে। তাঁর খুব যেন বলতে ইচ্ছে করছে, ‘গুরুদেব, আমি তোমার সেই আট লাইনের মানে এখন পুরোপুরিই বুঝি, গুরুদেব!’ তারপর মনের অজান্তেই আশেপাশের কারো দিকে ল্য না রেখে ডুকরিয়ে ছোট শিশুর মত কেঁদে উঠলেন।
কোলকাতার বেলভিউ নার্সিং হোমে ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ রায় সত্তর বছর এগার মাস একুশ দিন বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (চলবে)