অনলাইন ডেস্ক : ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত গোটা দেশে ভোট পড়েছে গড়ে ৫৭.৭ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের প্রদত্ত ভোটের হার গড়ে ৭৭.৯৯ শতাংশ। দেশটির নির্বাচন কমিশন এই তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া আজও পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার ভোট নেয়া হয় দেশটির আটটি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের ৫৮টি কেন্দ্রে। এগুলো হলো উত্তর প্রদেশ (১৪), হরিয়ানা (১০), বিহার (৮), পশ্চিমবঙ্গ (৮), দিল্লি (৭), ওড়িশা (৬), ঝাড়খন্ড (৪), জম্মু-কাশ্মীর (১)। এদিন গোটা দেশজুড়ে একাধিক সেলিব্রেটি ভোটাররা তাদের নিজেদের ভোট প্রদান করেন।

সকাল সকাল দিল্লিতে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে দেখা যায় দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর ও তার স্ত্রী সুদেশ ধনকর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, কংগ্রেস এমপি সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সিপিআইএম নেত্রী বৃন্দা কারাত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হারদীপ পুরি, দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার, দেশটির তিন বাহিনীর প্রধান ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার কপিল দেব বাইট প্রদান করে। এ ছাড়া ভোট দিতে দেখা যায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার প্রমুখ।

এ দফায় পশ্চিমবঙ্গের ৮ আসনে ভোট নেওয়া হয়। এগুলি হলো তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর। এদিন সকাল ৭টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া, চলে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। পশ্চিমবঙ্গে আসনভিত্তিক হিসাবে ভোট পড়েছে – তমলুকে-৭৯.৭৯ শতাংশ , কাঁথি-৭৫.৬৬ শতাংশ , ঘাটাল- ৭৮.৯২ শতাংশ,ঝাড়গ্রাম- ৭৯.৬৮ শতাংশ মেদিনীপুর-৭৭.৫৭ শতাংশ, পুরুলিয়া-৭৪.০৯ শতাংশ, বাঁকুড়া-৭৬.৭৯ শতাংশ, বিষ্ণুপুর-৮১.৪৭ শতাংশ।

এদিন ভোট শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে শুক্রবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলে এক তৃণমূল নেতাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বেতকুন্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের সাবেক সদস্য শেখ মইবুল যখন রাতে মোটরবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন সেই সময় আক্রমণের মুখে পড়েন। প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় মইবুলকে। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এলাকায় দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত মইবুলের মৃত্যুর ঘটনায় চরম উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। বিরোধী দল বিজেপির বিরুদ্ধে এই খুনের অভিযোগ উঠলেও তারা তা অস্বীকার করেছে।

এ নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির হুঁশিয়ারি ‘গতকাল রাতে মহিষাদলে আমার এক কর্মীকে খুন করেছে। আমি এদের ছাড়বো না। এর বিরুদ্ধে আমি রাজনৈতিক বদলা নেবই।’

আবার রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সোচ্চার হলেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী। এদিন ভোট শুরুর পরেই এলাকায় বেরিয়ে যান অভিজিৎ সকালে বুঝেও পৌঁছান তিনি। তার অভিযোগ রাজ্যের পুলিশ নন্দীগ্রাম এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজেপি কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত হলদিয়ায় স্থানীয় মানুষদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন অভিজিৎ গাঙ্গুলী। ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ পেয়ে তিনি যখন স্থানীয় একটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে যান তখন বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ঘিরে ধরে গো ব্যাক শ্লোগানও দেওয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর নামানো হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।

ভোটের সকালে উত্তপ্ত হয় কেশপুর। ঘাটাল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা হিরণ চ্যাটার্জির গাড়ির সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। রাস্তার উপরে অগ্নিসংযোগ করে চন্দ্রকোনা মেদিনীপুর রাজ্য সড়কে হিরণকে আটকানোর চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। এই হামলার নেতৃত্ব দেন কেশপুর ব্লকের ৫ নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি শেখ হাসানুর জামান। এর আগে কেশপুরে তার গাড়ি বহরকে আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে। এরপর পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ তোলেন হিরণ।

আবার কোথাও কেশপুরেই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় হিরণকে। লাঠি, বাঁশ নিয়ে তার উপর চড়াও হওয়ার পাশাপাশি তার গাড়ি বহর আটকে বিক্ষোভ দেখানো হয় বলে অভিযোগ।

তবে ওই কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী (দেব) কে দেখা গেল রিফ্রেস মুডে। বাইক নিয়ে বিভিন্ন বুথে পরিদর্শন করতে দেখা যায় দেব’কে।

অ্যাকশন মুডে দেখা যায় মেদিনীপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়াকে। একটি বুথের ভিতর গিয়ে বিজেপির বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে অভাব্য আচরণ করার অভিযোগ তুলেছেন জুন। ওই বুথের ভেতরে বিজেপির পোলিং এজেন্ট এর সাথে তুমুল বচসায় জড়িয়ে পড়েন জুন মালিয়া।

তৃণমূলের লোগো বুকে লাগিয়ে বুথে বুথে ঘুরে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মন্ডলের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বিজেপি। যদিও সুজাতার দাবি কোন বিধিভঙ্গ হয়নি।

ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডুর ওপর গড়বেতার ফুলকুশমায় হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রার্থীকে মারধর করার পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয় তার গাড়িবহর।প্রার্থীকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় পাথর। প্রার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রার্থী বলেন ‘প্রায় ১০০ থেকে ২০০ জন ঘিরে ধরে হামলা চালায়, হামলাকারীদের মধ্যে রোহিঙ্গারা রয়েছে। আজ নিরাপত্তারক্ষী না থাকলে বেঁচে ফিরতাম না।’

মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে বুথের মধ্যে কলকাতা পুলিশের সদস্যকে দেখে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্র পাল। এদিন কান্দামারি আংশিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়-এর একটি বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে ভয় দেখিয়ে উঠিয়ে দেয়ার অভিযোগের খবর পেয়ে সেখানে আসেন অগ্নিমিত্রা।