অনলাইন ডেস্ক : লকডাউন চলাকালীন শহর ও গ্রামের ছবি সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ শহরে হাত বাড়ালেই সব মিলছে৷ গ্রামে ঠিক তার উল্টো৷ তবে ভারতের নিঃসঙ্গ প্রবীণদের অবস্থা শোচনীয়৷ জরুরি সামগ্রী থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধটুকু জোগানোর কেউ নেই৷
বিশ্বজুড়ে করোনা-আতঙ্কের আবহে সবচেয়ে শঙ্কিত বয়স্ক নাগরিকরা৷ ভারতে ষাটোর্ধ নাগরিকের সংখ্যা মোটামুটি ১১ কোটি৷ অন্যদের মতো গৃহবন্দি রয়েছেন তারাও, যাদের বেশিরভাগই অসহায়৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বয়স্ক নাগরিকদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি৷ তাদেরকে সার্বক্ষণিক ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
এক্ষেত্রে শহরে প্রবীণদের সমস্যা ততটা না হলেও শহরতলি ও গ্রামীণ এলাকায় নিঃসঙ্গ প্রবীণদের সমস্যার খবর আসছে৷ কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়েও দিচ্ছেন৷ তা সত্ত্বেও সরকারি উদ্যোগের দাবি উঠেছে৷
এদিকে, সরকারের ঘোষিত ২১ দিন লকডাউনের জেরে শুনসান সড়ক৷ বন্ধ দোকানপাট, যানবাহন৷ স্বভাবতই বাড়ি থেকে বোরনোর জো নেই৷ বন্ধ হয়েছে মর্নিং ওয়াক৷ পরিচিত বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশার পাঠ চুকেছে৷ এমনকী, আসছেন না পরিচারিকাও৷ এর ফলে বয়স্ক নাগরিকদের অনেককেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে৷ যেমন: কেউ নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ কারও জরুরি ওষুধের প্রয়োজন মিটছে না৷ কারো আবার পুষ্টিকর পথ্য না পেয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে৷ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের৷
অন্যদের পরিবারের যুব সদস্যরা বাজারে গিয়ে সামগ্রী কিনে আনতে পারছেন৷ কিন্তু, নিঃসঙ্গ অসহায় বয়স্ক মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে বাজারে বেরোতেই হচ্ছে৷ আর যাদের সেইটুকু সামর্থ্য নেই, তারা হয় না খেয়ে অথবা আধপেটা খেয়ে দিন গুজরান করছেন৷
এক সাক্ষাৎকারে বিশ্লেষক সুজিত রায় বলেন, এমন অনেকে রয়েছেন, যাদের একা বসবাস করতে হয়৷ তারা আসলে নিঃসঙ্গ৷ তাদের ছেলেমেয়েরা হয়ত লেখাপড়া অথবা চাকরিসূত্রে বিদেশে বা ভিন্ন রাজ্যে থাকেন৷ এই সকল প্রবীণ মানুষের মধ্যে অনেকেরই শরীরে আগে থেকে অনেক রোগ বাসা বেঁধে রয়েছে৷ যেমন: ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টরল, হার্ট ব্লকেজ, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি৷
এদের নিয়মিত ওষুধ খেতেই হয়৷ চিকিৎসকের পরামর্শে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হয়৷ আবার এদেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ তাই তারা বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন৷ মূলত সমস্যায় পড়ছেন তারাই৷ বাড়ির কাছে দোকান নেই৷ দূরের হাটবাজারে যাওয়ার উপায় নেই৷ বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এই ধরনের মানুষের জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত করা উচিত৷
উল্লেখ্য, ভারতে ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী, ১৩৬ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ মানুষের বয়স ষাটের বেশি৷ অর্থাৎ ১১ কোটি মানুষ বয়স্ক নাগরিক৷ পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা ৫৫ হাজার৷ তারা সকলেই এখন গৃহবন্দি৷ তারা বাজারে বের হতে পারছেন না৷ সরকার অনলাইন কেনাকাটায় ছাড় দিয়েছে৷ কিন্তু, বাস্তবে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না৷
পুলিশি ধরপাকড় ও পণ্য সরবরাহকারীর অভাবে কার্যত অনলাইন কেনাকাটা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছে বিগ বাস্কেট ও গ্রোফার্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো৷ এদিকে, বিগ বাজার, রিলায়েন্স ফ্রেশ-এর মতো সংস্থাগুলো ফোন নম্বর প্রচার করে বাড়ি বসে সামগ্রী পাওয়ার এক বন্দোবস্ত করেছিল৷ কিন্তু, তাও বাস্তবায়িত হয়নি৷
যদিও উল্টো ছবিও ধরা পড়েছে৷ পশ্চিম বিহার এলাকায় একটি আবাসনে থাকেন প্রাক্তন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা দেবাশিস গুপ্ত৷ আগে প্রতিদিনই মর্নিং ওয়াক থেকে দোকান-বাজারে যেতেন৷ গত কয়েকদিন ধরে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন৷ প্রয়োজনে শাক-সবজি পাচ্ছেন৷ দোকানে ফোন করলেই পৌঁছে যাচ্ছে ওষুধ৷ তবে, বাইরে বের হওয়ার জন্য মাঝে মধ্যেই তার মন কেমন করে উঠছে৷
তিনি বলেন, এমনিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না৷ হাতের কাছেই জরুরি জিনিসের দোকানপাট খোলা রয়েছে৷ তবে ভাবনা হয়, আমার মতো সুযোগ-সুবিধা যাদের নেই, এই লকডাউন চলাকালীন তাঁরা কতটা কষ্টে আছেন৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের গরিব, অসহায় বয়স্ক মানুষগুলো৷ সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো৷
দক্ষিণ দিল্লির পালম এক্সটেনশন এলাকায় স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বসবাস করেন ঈশ্বরদীন বর্মা৷ বয়স আশি ছুঁইছুঁই৷ শরীরে অনেক রোগ৷
তিনি বলেন, ওষুধের প্রয়োজন হলেই ছেলেরা কেউ প্রেসক্রিপশন নিয়ে দোকানে যাচ্ছেন৷ কোনও সমস্যা হচ্ছে না৷ তবে, লকডাউন ঘোষণার পর প্রথম দু-দিন সংসারে চাল-ডাল-তেল-মশলার সমস্যা ছিল৷ তারপর বাড়ি বয়ে দিয়ে যাচ্ছেন বিক্রেতারা৷ আগে যারা অন্য পেশায় ছিলেন, এখন তারাও সবজির গাড়ি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।