শওগাত আলী সাগর
কলেজ অ্যান্ড ডাফরিন স্ট্রিটের একটা বাড়ির বেসমেন্টে ভাড়া থাকতো আলিশা নামের ২৪ বছরের এই তরুণী। ২০১৩ সালের দিকে হঠাৎ বাড়িতে আগুন লেগে যায়। আর তাতেই সে প্রাণ হারায়। ছয় বছর পর আজ টরন্টোর একটি আদালত বাড়ির মালিককে ১.৬ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে।
আগুন তো দুর্ঘটনা মাত্র, তা হলে এই ক্ষতিপূরণের নির্দেশ কেন? সেই কাহিনীটাই সবার জানা দরকার। বাড়ির মালিক বেসমেন্টে কয়েকটি রুম বানিয়ে সেগুলো ভাড়া দিয়েছিলেন। কোন ধরনের বেসমেন্ট ভাড়া দেয়া যাবে, বেসমেন্ট ভাড়া দিতে হলে ফায়ার কোডের কোন ধরনের নিয়মগুলো অতি অবশ্যই মানতে হবে- সেগুলো সিটির নিয়মাবলীর মধ্যে স্পষ্ট করা আছে।
বেসমেন্ট ছাড়াও কেউ যখন পরষ্পরের সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ব্যাক্তিকে এক বাড়িতে ভাড়ায় থাকতে থাকেন তখন সেটি ভিন্ন একটি নিয়মের আওতায় পড়ে যায়। তখন সেটি হয়ে যায় রোমিং হাউজ। রোমিং হাউজে পরাষ্পরের সম্পর্কহীন বেশ কয়েকজন (তিন বা ততোধিক) একটি বাড়িতে থাকেন, তারা কিচেন এবং ওয়াশরুম শেয়ার করেন, তখন সেটি রোমিং হাউজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
রোমিং হাউজ করতে হলে সিটির অনুমোদন নিতে হয়। সিটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখে রোমিং হাউজগুলোকে। কোনো স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্স কোম্পানিই ‘রোমিং হাউজ’ অনুমোদন করে না। অর্থাৎ যে কোম্পানির সাথে আপনার বাড়ির ইন্সুরেন্স আছে, সেই কোম্পানি আপনার রোমিং হাউজকে অনুমোদন করে না। সিটিও শহরের সব স্থানেই রোমিং হাউজ অনুমোদন করে না। বেশ কয়েকটি জায়গা আছে যেখানে রোমিং হাউজকে বেআইনি হিসেবে উল্লেখ করা আছে সিটির বাই ল’তে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, বেসমেন্টে ভাড়া- এখন অধিকাংশ স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্স কোম্পানিই এক্সেপ্ট করে। একটি বাড়িতে দুটি ফ্যামিলি পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানিগুলো এক্সেপ্ট করে। দুটোর বেশি ফ্যামিলি হলেই আপনাকে কমার্শিয়াল পলিসি নিতে হবে। আর যদি সিঙ্গেল কেউ থাকেন, কোনো কোনো কোম্পানি দুজন পর্যন্ত পরষ্পরের সাথে সম্পর্কহীন ব্যক্তিকে এলাউ করে।
কলেজ অ্যান্ড ডাফরিন রোডের এই বাড়ির মালিক ভদ্রলোকও বাড়তি কিছু আয়ের আশায় কয়েকটি রুম করে সেখানে পরষ্পরের সাথে সম্পর্কহীন লোকদের ভাড়া দিয়েছিলেন। বাড়িটিতে যখন আগুন লাগে- প্রথম ধাক্কাটাই তিনি খান- ইন্সুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে। ‘যেহেতু বাড়িতে রোমিং হাউজ’ আছে- ইন্সুরেন্স কোম্পানি আগুনে পোড়ার ক্লেইমটা ডিক্লাইন করে দেয়। আলিশার মৃত্যুর কারণে সেখানে পুলিশ, সিটি সম্পৃক্ত হয়ে যায়। বিনা অনুমতিতে রোমিং হাউজ পরিচালনার দায়ে টরন্টো সিটি কর্পোরেশন ৭৫ হাজার ডলার জরিমান করে।
একদিকে আগুনে বাড়ি পুড়েছে, ইন্সুরেন্স ডিক্লাইন হয়েছে, মর্টগেজ দিতে পারছেন না- তার উপর সিটির ৭৫ হাজার ডলার জরিমানা। বেচারা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে আপাতত বাঁচার পথ খুঁজে নেন। কিন্তু ছয় বছর পর আদালতের রায়ে আরো ১.৬ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের বোঝা চেপে বসে তার মাথায়।
বাড়তি কিছু আয় রোজগারের আশায় বেসমেন্টে বাড়তি কয়েকটি রুম বানিয়ে ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি। এখন সব হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বেচারা!