অনলাইন ডেস্ক : আন্তর্জাতিক আর্থিক স্থিতিশীলতা উন্নয়ন সম্পর্কিত অন্যতম গোষ্ঠী জি-২০ এর দায়িত্ব পালন করছে ভারত। দেশটিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলন এবার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সারা দেশে। আয়োজক শহরের মধ্যে রয়েছে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, কলকাতা, মুম্বাই, হায়দরাবাদের মত বড় শহরের পাশাপাশি হাম্পি, শিলিগুড়ি, হৃষীকেশ, মহাবলীপুরমের মত একাধিক ছোট শহর। রয়েছে ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মিরের শহর শ্রীনগরও। সোম ও মঙ্গলবারের (২২-২৪ মে) সম্মেলন ঘিরে কাশ্মিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলেছে প্রশাসন।

২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নিয়ে দু’টি স্বতন্ত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করেছে ভারত সরকার। তারপর থেকেই জম্মু ও কাশ্মিরের উত্তেজনা প্রশমিত করতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার চেষ্টা চলছে। কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং দেশের আর পাঁচটি রাজ্যের মতই কাশ্মিরের উন্নয়ন সরকারের কর্তব্য— এই বার্তা দিচ্ছে মোদি সরকার। এবার শ্রীনগরে জি-২০ গোষ্ঠীর মত শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ভারত।

তবে কাশ্মিরে এমন আয়োজনের বিরোধীতা করেছে চীন ও পাকিস্তান। শনিবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জানিয়েছে, কোনও ‘বিতর্কিত এলাকায়’ জি২০ সম্মেলন আয়োজনের বিরোধিতা করছে তারা। চীনের প্রতিনিধি তাতে অংশ নেবেন না।

নয়াদিল্লির এর জবাবে জানিয়েছে, ভারত সার্বভৌম রাষ্ট্র, সে তার ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে যেখানে খুশি এই সম্মেলন আয়োজন করতে পারে। সেটা তার সিদ্ধান্ত। বৈঠকের আগে শ্রীনগরকে কার্যত ঢেলে সাজানো হয়েছে।

জি-২০ সম্মেলনকে সফল করতে আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখছে না প্রশাসন। প্রায় এক হাজার কোটি রুপি খরচ করা হয়েছে শ্রীনগরকে সুসজ্জিত করতে। অতিথিদের স্থানীয় ‘সাইট সিয়িং’ করানো, ডাল লেকে শিকারা-ভ্রমণসহ ইত্যাদি রয়েছে পরিকল্পনায়। মূল অনুষ্ঠান হবে শের-ই-কাশ্মির আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে। অতিথিদের জন্য শ্রীনগরের একাধিক পাঁচতারা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বেশিরভাগ থাকবেন তাজ বিভান্তা ও ললিত গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলে।

এই পুরো ব্যবস্থাকে আঁটোসাটো নিরাপত্তায় ঘিরে রাখতে নজিরবিহীন নিরাপত্তায় প্রায় মুড়ে ফেলা হয়েছে শ্রীনগর। সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাশাপাশি সিআরপিএফ, বিএসএফ, এসএসবি এবং ভারতের দুই সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবাহিনী ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) ও মার্কোস কমান্ডোবাহিনীকেও নামানো হয়েছে। ডাল লেক ঘিরে রেখেছেন মার্কোস জওয়ানরা।

এক হাজার নতুন সিসিটিভি বসানো হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মির পুলিশের মহানির্দেশক (ডিজি) দিলবাগ সিংহ জানিয়েছেন, দফায় দফায় আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে মহড়ায় রয়েছে পুলিশ, রাতেও চলছে টহল।

অভিযোগ উঠেছে টহলের সময় পান থেকে চুন খসলেই ধরপাকড় চালাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। মেহবুবা মুফতিসহ একাধিক নেতা-নেত্রী অভিযোগ করেছেন, বিনা কারণে বহু কাশ্মিরি যুবককে অন্যায়ভাবে আটক করেছে পুলিশ। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চলছে তল্লাশি, কথায় কথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে থানায়। জি-২০ বৈঠক উপলক্ষে অন্তত তিন দিন স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।

কাশ্মিরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর, গোয়েন্দা সংস্থাদের কাছে সতর্কবার্তা এসেছে, ভারতের ভাবমূর্তি খারাপ করতে জি-২০ চলাকালীন হামলা হতে পারে কাশ্মিরে। যদিও সরকারিভাবে এই নিয়ে কিছু জানায়নি প্রশাসন। তবে শেষ মুহূর্তে বিদেশি অতিথিদের বেশ কিছু সফরসূচি কাটছাঁট করা হয়েছে। গুলমার্গ দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, বাতিল করা হয়েছে সেটিও।

কাশ্মিরে আয়োজিত জি-২০ এর পর্যটনবিষয়ক বৈঠকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ভারত সরকার। সেটি বাস্তবায়ন করতে কোনো ফাঁক রাখছে না দেশটি। স্থানীয় প্রশাসন বলছে এই বৈঠকের ফলে কাশ্মিরের ভাবমূতির উন্নতি হবে। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে স্থানীয়ভাবে প্রচার চালিয়েছে প্রশাসন।

সূত্র: দ্য ওয়াল