দেবব্রত মুখোপাধ্যায় : ভিডিও কলে হঠাৎ দেখে চমকে উঠতে হলো—এ কী ২০০১ সালের মাশরাফি!

ওজন কমিয়ে একেবারে যেন কৈশোরে ফিরে গেছেন। ফিটনেস নিয়ে গত কয়েক মাস খুব কাজ করছিলেন, সেটা জানা ছিল। তাই বলে এতোটা ওজন কমেছে, এটা কল্পনা করা কঠিন ছিল। নিজে ম্লান হেসে জানালেন, প্রায় ১০ কেজি ওজন কমেছে। সেই সঙ্গে একটু আফসোসও করলেন, আপাতত ফিটনেস কমানোর কাজে একটা বিরতি পড়ল।

বেশ কিছু কাজেই বিরতি পড়ে গেছে।

ক্রিকেট নিয়ে ছোটাছুটি, ফিটনেস নিয়ে তত্পরতা এবং এলাকার মানুষের জন্য প্রাণান্ত করা; আপাতত কাজগুলো থেকে নিজেকে সশরীরে একটু সরিয়ে নিতে হয়েছে। কারণ, সারা বিশ্ব কাঁপিয়ে ফেলা করোনা ভাইরাস আক্রমণ করেছে মাশরাফি বিন মুর্তজাকেও।

অবশ্য শরীরের ওপর কোনো আক্রমণে কাবু হওয়ার মানুষ তো মাশরাফি নন। দুই পায়ে সাতটাসহ শরীরে মোট ১১টা অপারেশন দগদগ করছে। তাই নিয়ে এখনো সমানে মাঠ মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে করোনার আক্রমণে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। শুধু নিয়ম অনুযায়ী নিজেকে ঘরে আটকে রেখেছেন এবং চিকিত্সকদের পরামর্শ শুনছেন। এছাড়া ফোনে, ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে সব কাজ চলছে তার গতিতে।

একটু ঘুম কম হচ্ছে। সেটাতেও মনে হলো বেশ খুশি। কারণ, ইউরোপে করোনাকে পাশে ঠেলে লা লিগা আর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলা শুরু হয়েছে। নানান চাপে গত কিছুকাল আর সব ম্যাচ দেখা হচ্ছিল না। এখন আর কোনো বাছবিচার নেই। টিভিতে খেলা দেখালেই রাত জেগে ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখছেন।

ভোর রাতে ফজরের নামাজ পড়ে দিন শুরু হয়। এরপর ছোট্ট একটু নিদ্রা। তারপর উঠে নাস্তার পর স্ত্রীর কঠোর শাসনে নানারকম ভেষজ খাবার—মালটা, আপেল, কমলা; ভিটামিস ‘সি’ গ্রহণের চেষ্টা। খাবার নিয়ে কখনোই খুব ভাবনা করার মানুষ নন। কিন্তু ইদানিং স্ত্রী আর বন্ধুদের চাপে একটু পুষ্টিকর খাবার জোর করেই গলা থেকে ঢোকাতে হচ্ছে। সঙ্গে গরম পানির গার্গল আর বারবার আদা দেওয়া চা খেতে হচ্ছে। বোঝা গেল, এটা বিরক্তিকর হচ্ছে।

এজমার সমস্যা আছে অনেক আগে থেকেই। তাই ডাক্তাররা জোর করে পাঠিয়েছিলেন কিছু পরীক্ষা করাতে। বিশেষ করে বুকের এক্স-রে নিয়ে ডাক্তাররা ভাবিত ছিলেন। সুখবর দেওয়া যাক—বুকের এক্স-রে খুব ভালো এসেছে। চিন্তার কোনো কারণ পাননি চিকিত্সকরা।

মাশরাফি অবশ্য পরিষ্কার যে, যাই ঘটুক, এই করোনা নিয়ে ভাববেন না। গল্প করতে গিয়েও করোনা প্রসঙ্গ তাই এড়িয়েই থাকেন। বললেন যে, টিভিতেও এই প্রসঙ্গ এলে চ্যানেল বদলে ফেলেন। নিজেকে এই ভাইরাসের চিন্তায় মশগুল হতে দিতে চান না।

তার অবশ্য সময় কাটানো খুব সমস্যা হচ্ছে না। হুমায়রা ও সাহেল; দুই সন্তানকে শুরুতেই নড়াইলের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে তাদের পরীক্ষাও করানো হয়েছে। ফল নেগেটিভ এসেছে। এটা বেশ স্বস্তি দিয়েছে। মাশরাফির সঙ্গী হিসেবে সার্বক্ষনিক পাশে আছেন স্ত্রী সুমনা হক সুমী। খাওয়া, ওষুধ থেকে শুরু করে সবকিছুই তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন। করোনা তাকে পাশ থেকে সরাতে পারেনি।

সরাতে পারেনি বন্ধু প্রীতম বা বাবলুকেও। তারাও আছেন বাসায়। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছেন মাশরাফিকে।

নড়াইলে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ, তা থেমে নেই। আছে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেখানে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ চলছে। যোগাযোগ চলছে নড়াইলের ডিসি, এসপির মতো কর্মকর্তাদের সাথেও। আর কোনো কিছু দরকার হলে ব্যক্তিগত সহকারী সানিকে জানাচ্ছেন। তিনি সমাধান করছেন সবকিছু।

এখন কেবল অপেক্ষার পালা। আবার দ্রুত যেনো সশরীরে ফিরে আসতে পারেন মানুষের পাশে।