অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বে গর্ব করার মতো বাংলাদেশের আছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ স্থাপত্যকলা। শিল্পের এই মাধ্যমে কোনও অংশে কম ছিল না এ অঞ্চল। বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত ভ্রমণচারী ও মননশীল মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ।
আজিমপুর কবরস্থানের পাশেই মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত মসজিদটি স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক একটি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় মসজিদটি। বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মেলবন্ধনে এর নকশা করা হয়েছে।
পুরান ঢাকার মসজিদটি রাশিয়ান শিল্প ও ডিজাইনের আন্তর্জাতিক ফেস্টিভালে ‘ইউরোশিয়ান প্রিমিয়াম ২০২০’ পুরস্কারের স্থাপত্যকলা বিভাগে প্রথম হয়। রাশিয়ার স্থপতিদের নিয়ে তৈরি প্রতিষ্ঠান ইউরোশিয়া প্রাইজ কর্তৃপক্ষ গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর এই পুরস্কার ঘোষণা করে। বিশ্বের প্রায় ৪৭৫টি নকশাকে টপকে প্রথম হয় মেয়র হানিফ মসজিদ।
অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের নামে মসজিদটির নামকরণ করেন তারই ছেলে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সাঈদ খোকন দক্ষিণ সিটির মেয়র থাকাকালে ‘জলসবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় মসজিদটি নির্মাণ ও তার পাশের কবরস্থান সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
মসজিদটি আজিমপুর পুরনো কবরস্থানের ভেতরে অবস্থিত। পুরান ঢাকার অলিগলি পেরিয়ে মসজিদটির কাছে দাঁড়ালেই মিলবে প্রশান্তি। প্রবেশ করলে প্রথমেই নজর কাড়ে নান্দনিক কারুকাজ ও বিশাল সুশীতল মেঝে। মিনারে আজানের বাংলা অর্থ বড় বড় অক্ষরে লেখা। কিছুটা উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দেখা যাবে আজিমপুর কবরস্থানের সারি সারি কবর। এমন দৃশ্য যে কাউকে স্মরণ করিয়ে দেবে পরকালের কথা।
মসজিদের ভেতরের সবদিকেই চাকচিক্যের ছোঁয়া। ধর্মীয় বিশেষ দিনগুলোতে নানান রঙের সুদৃশ্য বাতিতে আলোকিত হয় এটি। কারুকার্যময় নয়নাভিরাম মসজিদটি পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা অজু ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা। একসঙ্গে প্রাড় দেড় হাজার পুরুষ ও ৭০ জন নারী পৃথকভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন। জুমার সময় বা ঈদে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নামাজ পড়েন এ মসজিদে।
দেশের নামকরা এ মসজিদে দূর থেকে আসা মুসুল্লিদের জন্য একসঙ্গে ৩০টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা আছে। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহে আছে জেনারেটর। লিফট ও উন্নতমানের টয়লেট সুবিধা, প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থাও আছে। নারী ও পুরুষের লাশের গোসল করানোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। আছে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের থাকার ব্যবস্থা।
২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট শুরু হয় মসজিদটির নির্মাণকাজ। শেষ হয় ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। মূল স্থপতি রফিক আজম মনে করেন, মসজিদটি ঢাকাবাসীর ঐতিহ্য বহন করে যাবে।
নকশা তৈরি ও নির্মাণকাজে আরও যুক্ত ছিলেন তার প্রতিষ্ঠান সাতত’র একদল স্থপতি ও প্রকৌশলী। স্থপতিরা হলেন ইকরামুন নেসা, ফাহিম আবরার কবির। প্রকৌশলীরা হলেন মোহাম্মদ আখতার হোসেন, লুৎফর রহমান, মোহাইমিনুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। জাতীয় ঐতিহ্য ও মুসলিম স্থাপত্যকলার অংশ হিসেবে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদ উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বলে মনে করেন তারা।
ডিএসসিসির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ জানিয়েছে, দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে দুই তলা মসজিদটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২৩ কাঠা জমির ওপর বাহারি ইটের তৈরি মসজিদটির আয়তন ৩০ হাজার ২২ বর্গফুট। এর মধ্যে সেমি-বেজমেন্ট ১১ হাজার ৩৫০ বর্গফুট, গ্রাউন্ড ফ্লোর ১১ হাজার ৩৫০ বর্গফুট ও দ্বিতীয় তলা ৭ হাজার ৫০০ বর্গফুট।
স্থপতি রফিক আজম বলেন, এ মসজিদের নকশা আমরা এমনভাবে তৈরি করেছি, যাতে মানুষ এখানে প্রবেশ করলেই দুনিয়ার জীবন ভুলে আখেরাতের কথা মনে করতে থাকে। মসজিদ হলো দুনিয়ার জীবন, কবর হলো পরকালের জীবন। এ মসজিদে এ দুটোর মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে।