অনলাইন ডেস্ক : পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে স্থায়ী শান্তি চায় বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সাথে ‘স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠা করতে চায় কারণ কাশ্মির সমস্যা সমাধানের জন্য যুদ্ধ কোনো দেশেরই বিকল্প হতে পারে না।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলার সময় শেহবাজ শরীফ একথা বলেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে রোববার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের রেজুলেশন অনুযায়ী এই অঞ্চলে টেকসই শান্তি কাশ্মির সমস্যার সমাধানের সঙ্গে যুক্ত। তার ভাষায়, ‘পাকিস্তান এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এই অঞ্চলে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজটি জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মির সমস্যার সমাধানের সাথে যুক্ত।’

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে উদ্ধৃত করে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সাথে স্থায়ী শান্তি চাই কারণ যুদ্ধ কোনো দেশের জন্যই বিকল্প নয়।’

সংবাদমাধ্যম বলছে, কাশ্মির ইস্যু এবং আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে থাকে। ভারত বারবারই দাবি করে আসছে যে, জম্মু ও কাশ্মির চিরকালই দেশের (ভারতের) অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবে।

এর পাশাপাশি নয়াদিল্লি এটিও বলেছে যে, সন্ত্রাস, শত্রুতা ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে প্রতিবেশী হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক চায় ভারত।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় শেহবাজ শরীফ আরও বলেন, ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং নিজ নিজ দেশের জনগণের অবস্থার উন্নতিতে প্রতিযোগিতা থাকা উচিত।

তিনি বলেন, পাকিস্তান কখনোই আগ্রাসী ছিল না তবে তার (পাকিস্তানের) পারমাণবিক সম্পদ এবং প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী যেকোনো আগ্রাসন প্রতিরোধ করবে। তিনি বলেন, ইসলামাবাদ আগ্রাসনের জন্য নয় বরং নিজেদের সীমান্ত রক্ষার জন্যই সামরিক বাহিনীর পেছনে ব্যয় করে থাকে।

পাকিস্তানের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্মসূচি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শেহবাজ বলেন, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পাশাপাশি কাঠামোগত সমস্যা থেকে দেশটির অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের সূচনার পর থেকে প্রথম কয়েক দশক অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন দেখেছে তার দেশ। সেসময় সাফল্যজনক ফলাফলের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, সেটি বাস্তবায়নের জাতীয় ইচ্ছা এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জোরালো ছিল।

শেহবাজ শরীফ আরও বলেন, ‘আমরা যেসব সেক্টরে এগিয়ে ছিলাম নির্দিষ্ট সময়কালের পরে সেগুলোর ধারাবাহিকতায় ধীরগতি এসেছে। লক্ষ্য, শক্তি এবং নীতিগত পদক্ষেপের অভাব মূলত জাতীয় উৎপাদনশীলতা হ্রাসের দিকেই পরিচালিত করে।’

বিবিসি বলছে, কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে দু’বার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাবার আগে থেকেই কাশ্মির নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।

১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মিরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।

উভয় দেশের এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে। এরপর কাশ্মিরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মির কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।

অন্যদিকে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মিরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান – কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়।

সেই থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন – এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।