অনলাইন ডেস্ক : ইসরা অর্থ রাতে ভ্রমণ করা। মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাসুল (সা.)-এর বিশেষ ভ্রমণ ইসরা হিসেবে পরিচিত। আর মিরাজ অর্থ, আরোহণের মাধ্যম বা ঊর্ধ্ব ভ্রমণ। ভূপৃষ্ঠ থেকে নভমণ্ডলে ভ্রমণ করা। বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সাত আসমানের ওপর সিদরাতুল মুনতাহায় গমন ও সেখান থেকে আবার বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসা মিরাজ হিসেবে পরিচিত।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছি, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১)
এ সফরে নবীজিকে জান্নাত-জাহান্নামের ভ্রমণও করানো হয়। নবীজি বলেন, জান্নাতের প্রাসাদগুলো মুক্তার তৈরি আর তার মাটি হলো মেশকের। (বুখারি, হাদিস : ৭৫১৭)
নবীজি এ সফরে একদল লোককে দেখলেন, তাদের নখগুলো তামার। নিজেদের নখ দিয়ে তারা নিজের গাল ও বুকে আঁচড় কাটছে। জিজ্ঞাসা করলেন, জিবরাঈল! এরা কারা?
বললেন, এরা ওই সমস্ত লোক, যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের সম্ভ্রমে আঘাত হানত। অর্থাৎ গীবত করত এবং মানুষকে লাঞ্ছিত করত। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৩৩৪০; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৮)
নবীজি এ সফরে মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর শারীরিক গড়নেরও বিবরণ দেন। নবীজি বলেন, আমি ইবরাহীমের আকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৪)
হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে মুলাকাত হলে তিনি নবীজিকে বলেন, আপনি আপনার উম্মতের কাছে আমার সালাম পৌঁছাবেন। আর তাদেরকে বলবেন, জান্নাতের মাটি পবিত্র ও সুঘ্রাণযুক্ত, এর পানি সুমিষ্ট এবং এর ভূমি উর্বর ও সমতল। আর এর বৃক্ষ হচ্ছে-
سُبْحَانَ اللهِ وَالحَمْدُ لِلهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَر.
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র, সব প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬২)
এ সফরে নবীজি দেখলেন, একদল লোকের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? জিবরাঈল বললেন, এরা বক্তৃতা করত বটে, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২২১১, ১২৮৫৬)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, নবীজি বলেন, ‘এ ছাড়া জাহান্নামের মধ্যে ওই নারীকেও দেখতে পেলাম, যে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। এরপর এটাকে আহারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারত। শেষ পর্যন্ত বিড়ালটি ক্ষুধায় ছটফট করে মারা গেল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯০৪)
উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, ‘আমি এমন এক দল নারীর কাছে এলাম, সাপ যাদের স্তনে দংশন করছে। আমি বললাম, এদের কী হয়েছে? সে বলল, এসব নারী তাদের সন্তানদের দুধ পান করতে বাধা দিত।’ (মুসতাদরিকে হাকিম, হাদিস : ২৮৩৭)
উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, তারপর চিত হয়ে শোয়া এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম। এখানে দেখলাম এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এর দ্বারা তার কশ থেকে মাথার পেছনের দিক পর্যন্ত এবং একইভাবে নাকের ছিদ্র থেকে মাথার পেছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে চোখ থেকে মাথার পেছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। তারপর লোকটি শোয়া ব্যক্তির অপর দিকে যাচ্ছে এবং প্রথম দিকের সঙ্গে যেরূপ আচরণ করেছে অনুরূপ আচরণ অন্য দিকের সঙ্গেও করছে। ওই দিক থেকে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি আগের মতো ভালো হয়ে যাচ্ছে। তারপর আবার প্রথমবারের মতো আচরণ করছে। …সে হলো ওই ব্যক্তি যে সকালে আপন ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে, যা চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)
নবীজি আরো বলেন, ‘আমরা চলতে চলতে (তন্দুর) চুলার মতো একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। সেখানে শোরগোল ও নানা শব্দ ছিল। আমরা তাতে উঁকি মেরে দেখলাম, তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী-পুরুষ আছে। আর নিচ থেকে নির্গত আগুনের লেলিহান শিখা তাদের স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদের স্পর্শ করছে, তখনই তারা উচ্চরবে চিৎকার করে উঠছে। …তারা হলো ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর দল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)
উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, আমরা চলতে লাগলাম এবং একটি নদীর কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। নদীটি ছিল রক্তের মতো লাল। আর দেখলাম, সেই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অন্য এক ব্যক্তি আছে এবং সে তার কাছে অনেক পাথর একত্র করে রেখেছে। আর ওই সাঁতাররত ব্যক্তি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সেই ব্যক্তির কাছে ফিরে আসছে, যে তার কাছে পাথর একত্র করে রেখেছে। সেখানে এসে সে তার সামনে মুখ খুলে দিচ্ছে এবং ওই ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তারপর সে চলে গিয়ে আবার সাঁতার কাটছে এবং আবার তার কাছে ফিরে আসছে। আর যখনই ফিরে আসছে তখনই ওই ব্যক্তি তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। … সে হলো সুদখোর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)