কামাল কাদের : আজকের দিনটি সুধীর মজুমদারের জন্য মোটেই ভালো মনে হলো না। কারণটি হলো তাদের একমাত্র ছেলে সুভাষ বাইরে বের হবার আগে বলে গেলো যে, তার পছন্দ মতো একটি মেয়ে আছে এবং তাকেই সে বিয়ে করবে। সুতরাং তার জন্য পাত্রী খোঁজা বা দেখার কোনো প্রয়োজন সে মনে করছে না। এদিকে তার জন্য পাত্রী খোঁজা ইতিমধোই শুরু হয়ে গেছে। স্বভাবতই এরকম এক অপ্রত্যাশিত সংবাদে ওনার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লো। কথাটা শুনে সুবাসের মা নির্মলা মজুমদার রাগে স্বামীকে বলে উঠলো-
“কতবার তো তোমাকে বলেছি ছেলেকে বেশি আসকারা দিও না, তখন তো আমার কথা শুনলে না। এখন এর পরিণতি সামলাও”। সুধীর বাবু বিরক্ত হয়ে বললেন, “তোমাদের মায়েদের এই একটা স্বভাব, সন্তান ভালো কিছু করলে সব প্রশংসা মায়েদের আর খারাপ কিছু করলে সব দোষ বাবার। খানিক বিরাম নিয়ে সুধীর বাবু বলে চললেন, “তুমি কি মনে করো সুবাসের ভালো-মন্দে আমার কি কিছু যায় আসে না, ও যদি এই বয়সে নিজের ভালো মন্দ না বুঝে তাহলে আমার বা তোমার কি করার আছে! এত বড়ো ছেলেকে তো সব সময় আগলে রাখা যায় না। সুতরাং মিছে মিছি আমাকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই”।
কথাগুলির মাঝে মনে হলো সুধীর বাবুর অভিমানও ছিল।

সুধীর বাবুর ঢাকার বায়তুল মোকাররমে “রূপসী জুয়েলার্স” নামে এক স্বর্ণালংকারের দোকান আছে। তরুণ বয়সে তিনি নানা পরিবারের এবং দোকানদারদের চাহিদা মাফিক স্বর্ণ অলংকার বানিয়ে দিতেন। চলতি ভাষায় যাকে বলে “সেকরা” ছিলেন।

কঠোর পরিশ্রমের ফলে এবং টাকা-পয়সা জমিয়ে আর ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিয়ে ব্যবসাটা শুরু করেন। ইতিমধ্যে পুরানো ঢাকায় পাটুয়াটুলিতে একটা ব্রাঞ্চ খোলারও প্রস্তুতি চলছে। তিনি ভাবছেন ছেলে সুভাষকে দিয়ে ওই ব্রাঞ্চটার পরিচালনার ভার দেয়া যায় কি না। সুধীর বাবু ছেলের ব্যবসার প্রতি উদাসীনতা দেখে কিছুটা উদ্বিগ্ন, যদিও সে গত বছর ইইঅ তে ডিগ্রী নিয়েছে। আসলে সে কোনো দায়-দায়িত্ব নিতে চাইছে না। বেশির ভাগ সময়ই সে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে গান বাজনা নিয়ে সময় কাটিয়ে দেয়। এক জলসায় ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে মমতার সাথে সুবাসের পরিচয় হয়। সময়ের সাথে সাথে তাদের ভালোবাসার টান একে অন্যের প্রতি নিবীড় থেকে নিবীড়তর হতে থাকে। বর্তমানে এই ঘনিষ্টতা বিয়ের পর্যায়ে এসে পড়েছে।

মমতা মেয়েটি দেখতে সুশ্রী, বিদুষী এবং বুদ্ধিমতী। মাতৃত্বহীন, সতমার ঘরে থেকে বড় হয়েছে। যে কোনো উচ্চমনা ছেলে ওকে পছন্দ করবে। সুবাসেরও তাই হয়েছে। একান্ত অনিচ্ছা সত্তে¡ মিস্টার এবং মিসেস মজুমদার ওদের বিয়েতে মত দিতে রাজি হয়েছেন। ভাবলো যদি এই বিয়েতে তারা মত না দেন তাহলে হয়তোবা একমাত্র ছেলেকে চিরজীবনের জন্য হারাতে পারেন।

সুভাষকে এ বিয়েতে মত ফেরাতে সুধীর বাবু একবার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু কোনো ফল হয় নাই। সুবাসের জন্য মনের মতো বৌ আনবে সেটা গুড়ে বালি হয়ে রইলো। অবশেষে পুরোহিত ডেকে পুঁথি, পুঞ্জিকা দেখে একদিন বিয়ের দিনক্ষণ ধার্য করা হলো। যথাসময়ে মহা ধুম ধাম করে বিয়েটা হয়ে গেলো।

বুদ্ধিমতী মমতা আদর্শ বধূর মতো নিজেকে মজুমদার পরিবারে খাপ খাইয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো। শশুর মশাই পিছনের দিনগুলি ভুলে গিয়ে ছেলের বৌকে আপন করে নিলেন। কিন্তু শাশুড়ি নির্মলা মজুমদার কিছুতেই পুত্র বধূকে আপন করে নিতে পারছিলেন না। মাঝে মাঝে মমতা নিজেকে প্রশ্ন করে- শাশুড়িরা মেয়েদের জাত হয়েও কেন এমন হয়?

মমতা ভাবে, হয়তোবা সুভাষ ওনার অমতে বিয়ে করেছে বলে সেই জন্য ওর সাথে শাশুড়ি ভালো ব্যবহার করছেন না। মমতা এই ভেবে নিজেকে সান্তনা দেয় যে, আর কেউই না ভালো বাসুক, সুভাষ তো তাকে ভালোবাসে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট।

সময় বেয়ে যায় তার নিজের গতিতে। বছরের পর বছর গড়িয়ে চলছে, তবুও তাদের সন্তান হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শিরা মমতার শারীরিক অক্ষমতা কথা বলে সুবাসের মাকে ভড়কিয়ে দিচ্ছে। অনেকে আড়ালে সুবাসের মাকে বলে বেড়াচ্ছে, “হাঁগো, সুবাসের মা, অনেক দিন তো হয়ে গেলো, নাতী-নাতনীর মুখ আর কবে দেখবে? তোমাদের একমাত্র ছেলে, তাহলে এখানেই তো মজুমদার বংশের চিহ্ন শেষ”।

এ সমস্ত উড়ো খবর যখন সুভাষ এবং মমতার কানে আসে তখন তাদের মনটাও ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। অবশ্য কথাটা তো কিছুটা হলেও সত্যি। আবার এও ভাবে নিন্দুকের তো খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ থাকে না, তাই তারা কাউকে জব্দ করতে পারলে আনন্দ পায়। সেই সাথে সুবাসের মাও মমতাকে অপদস্ত করার একটা ভালো সুযোগ পেয়ে যায়। কখনো কখনো এ ব্যাপারটা সুভাষও ভাবে আর সে তার মাকে সান্তনার সুরে বলে, “তুমি কি মনে করো আমার কি বাবা হওয়ার ইচ্ছা জাগে না, এখন যদি ভাগ্যে না থাকে তাহলে আর কি করা যেতে পারে?”

সুবাসের মা মিসেস মজুমদার বলেন, “কে বলেছে কিছু করার নেই! শুধু ভ্যাগের উপর দোষ চাপিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না, ডাক্তার দেখা, দেখ উনারা কি বলেন”।
“ঠিক আছে, অমন করে বলছো যখন দেখি, ডাক্তাররা কি বলেন,” সুভাষ মার কথায় সায় দিলো। “আর একটা কথা বলে রাখছি মা, ওই বংশ বংশ করে আমাকে রাগিয়ে দিও না। আমরা কি রাজ পরিবারের লোক যে, সাম্রাজ্য চালাবার জন্য আমাদের সন্তান চাই-ই চাই। পৃথিবীতে তো অনেক লোকেরই সন্তান হয় না, তাই বলে কি তাদের জীবন চলে যাচ্ছে না? আমরা হলাম প্রকৃতির দাস, তাই প্রকৃতিকে আমাদের মানিয়ে চলতে হবে”।

– তোর কথা মানছি বাবা, কিন্তু আমার যে সাধ জাগে নাতি /নাতনির মুখ দেখার, আবেগের সুরে মিসেস মজুমদার বলে গেলেন।

অনেক চিন্তা-ভাবনা করে সুভাষ একদিন মমতাকে নিয়ে তার এক বন্ধুর জানা-শুনা ডাক্তারে ক্লিনিকে হাজির হলো। ডাক্তার বাসন্তী রায়, মমতাকে অনেক যত্ন সহকারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলেন এবং তার সাথে প্রাসাঙ্গিক কিছু টেস্ট করারও ব্যবস্থা করালেন। টেস্ট রিপোর্টে ডাক্তার রায় কোনো অনিয়ম বা শারীরিক দোষ-ত্রুটি মমতার শরীরে খুঁজে পেলেন না। মমতা কেন মা হতে পারবে না সেটা ডাক্তার রায়ের কাছে রীতিমতো রহস্য হয়ে রইলো।

এদিকে সুবাসেরও কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পাওয়া গেলো না। অর্থাত দুজনেরই শারীরিক অবস্থা চমত্কার। ডাক্তার রায় অত্যন্ত দুঃখের সাথে তাদের জানালো, “এ রকম অবস্থায় আমাদের মেডিকেল বিদ্যায় আর কিছু করার নেই। প্রকৃতির কাছে আমাদের হার মানতে হচ্ছে। তবে অনেকেই আজ কাল “ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন” করে থাকে, সহজ ভাষায় যাকে বলে “ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট। প্রক্রিয়াটি ব্যায় বহুল এবং ১০০% নিশ্চয়তা নেই। আবার অনেকে এটাকে অনৈতিক মনে করেন। সে যাই হউক, সিদ্ধান্ত আপনাদের”।

বাসায় এসে দুজনেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলো। ডাক্তারের কথা শুনে তাদের মন মানসিকতা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। কি করা যায় ভেবে একেবারে দিশেহারা। লোকের কথায় কবিরাজি, হেকেমী, ঝাড়-ফুক, সবই করানো হলো। কিন্তু কোনোটাতেই কোনো ফল হলো না। শেষ-মেষ তারা সিদ্ধান্ত নিলো, তারা একটি মেয়ে সন্তানকে দত্তক নেবে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবে। সুভাষ তাদের সিদ্ধান্তের কথা তার মা-বাবাকে জানালো। মা বাবার এক কথা, “তোমরা যা ভালো বুঝ তাই করো, আমাদের কোনো অমত নেই”।

দত্তক নেয়ার জন্য নানা জায়গায় খোঁজ খবর নিয়া শুরু হলো। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাপার খানি যতদূর সহজ মনে হয়েছিল, আদতে ব্যাপার খানি ততটা সহজ মনে হলো না। কোথায় পাওয়া যাবে, কে দিবে তাদের প্রিয় সন্তানকে একজন অপরিচত লোকের কাছে সারা জীবনের জন্য! এও এক সমস্যা হয়ে পড়লো। সবশেষে পুরোনো ঢাকার বুড়িগঙ্গার নদীর কাছে ফরাশগঞ্জ রোডে “হিন্দু অনাথ আশ্রম” নামে এক অনাথ ছেলে-মেয়েদের আশ্রম খুঁজে পেলো।

সেখানে যেয়ে তারা ম্যানেজার অরুন বাবুর সাথে দেখা করলো। অরুন বাবু খুবই বন্ধু-সুলভ লোক। সব সময় তার চেহারায় হাসি খুশি লেগে থাকে। সুভাষ এবং মমতাদের আগমনের ব্যাপারটা জেনে তিনি অনেক খুশি হলেন। বললেন, “আপনাদের সহচর্যে একটা অনাথ জীবন সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে, এর চাইতে আনন্দের কথা আর কি হতে পারে”। অরুন বাবুর কথা শেষ হবার আগেই মমতা একটা শর্ত জুড়ে দিলো। শর্তটি হলো, বাচ্চাটি মেয়ে সন্তান হওয়া চাই। কারণটিও বলে দিলো, মেয়েরা মায়ের জাত, বুড়ো বয়সে ওরাই বুড়ো মা-বাবাদের দেখা-শুনা করবে, সচরাচরতো যা দেখা যা। যেটা ছেলেদের কাছ থেকে এ বিষয়ে আশা করা বিড়ম্বনা মাত্র।”

ও বিষয়ে কোনো চিন্তা করবেন না, আমাদের এখানে ছেলের চাইতে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। দেখুন প্রকৃতির কি রহস্য, মেয়ে হলে আমরা কাঁদি, আর ছেলে হলে হাসি।”
অরুন বাবু মনে হয় একটু বেশি কথা বলেন। তিনি গড়গড়িয়ে বলে চললেন, “গরীব, অসহায় ছেলে মেয়েদের দত্তক নেয়া অনেক পুণ্যের কাজ। সব শিশুরাই পবিত্র এবং তারা ভগবানের দান। ওরা কোথা থেকে এলো এটা মুখ্য বিষয় নয়, তারা মানব সন্তান এটাই তাদের সব চাইতে বড় পরিচয়। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তারা পালক বাপ্ মাকে অনেক সময় আপন মা-বাবাদের চাইতে বেশি ভালোবাসে। কারণটা তো আগেই বললাম, মানুষ ভালোবাসার কাঙাল। বাচ্চারা যেখানে ভালোবাসা পায়, তারা সেখানেই ছুটে যায়। বাচ্চাদের ভালোবাসা দিয়ে যাবেন, পরিবর্তে তাদের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েও যাবেন, সে যে কেই হতে পারে”। এই বলে অরুন বাবু থামলেন।

– “আমরা সে রকম মন মানসিকতা নিয়েই আপনার কাছে এসেছি,” মমতা বললো।
– ধন্যবাদ। এখন চলুন আপনাদেরকে বাচ্চাদের কাছে নিয়ে যাই।

আশ্রমের বিরাট লম্বা বারান্দা হয়ে “কমন রুমের” হল ঘরে ঢোকা যায়। যাবার পথে মমতা এবং সুভাষ দেখলো আশ্রমের এক সেবীকা একটা সুন্দর ফুট ফুটে বাচ্চা মেয়েকে বোতলে করে দুধ খাওয়াচ্ছে। বাচ্চাটিকে দেখে মনে হলো যেন এক সদ্য প্রস্ফুটিত পদ্ম ফুল। মমতার মন ধরে গেলো। এই বাচ্চাটিকেই তার চাই। অরুন বাবুকে তাদের পছন্দের কথা জানালো।
অরুন বাবু বললেন, “আপনাদের পছন্দের মেয়েকেই পাবেন, তবে একটি নয়, দুটি মেয়েকে আপনাদের নিতে হবে। কারণ ওরা যমজ বোন, তাই বুঝতেই পারছেন, আমি এক বোনকে ছেড়ে আরেক বোনকে আলাদা করতে পারবো না।”

“ঠিক আছে, তবে তাই হবে”, ওরা দুজনেই ওদের অভিমত জানালো। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করে দু বোনকে বাসায় নিয়ে এলো। নাম রাখলো “জুঁই এবং জবা” দুই ফুলের সাথে নাম মিলিয়ে। ভগবানের কাছে শত কোটি কৃতজ্ঞতা জানালো, অবশেষে তারা মা-বাবা হতে পেরেছে বলে।

আনন্দে আর সুখ-দুঃখে এভাবে আটটি বছর কেটে গেলো। এক দিন মমতা চুপিসারে সুভাষকে জানালো বোধহয় সে অন্তঃসত্ত¡া। খবরটা শুনে সুভাষ আশ্চর্য হয়ে গেলো। একি সত্যি, এতদিন পরে মমতা কি বলছে, অন্য কিছুওতো হতে পারে। তাদের পাড়ার এক লেডি ডাক্তারে শরণাপন্ন হলো। হ্যাঁ, ব্যাপারটা সত্যিই। মমতার টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। এখন থেকে মমতাকে খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হবে এবং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

মমতার এখন বয়সও হয়েছে। সে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছে, প্রসব কালে কিনা কি হয়ে যায়। প্রায় নয়টি মাসই প্রসূতি জনিত নানা অসুস্থতায় তার দিন কাটছে। অজানা আশঙ্কায় সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লো।

সে সুভাষকে বললো, সুভাষ যেন প্রসবকালে তার সাথে থাকে, যদি সে মরে যায়। সুভাষ এমনিতেই ভীরু ছেলে। তাকে বলে কিনা প্রসব সময়ে মমতার কাছে থাকতে। সুভাষ মমতাকে খুবই ভালোবাসে। কোনো উপায় না দেখে মেট্রনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সে মমতার কাছে প্রসব কালে থাকতে রাজি হলো। এখন মমতার কাছে বড়ো সান্তনা হলো তার ভালোবাসার মানুষটি কাছে থাকবে বোলে।

যথাসময়ে মমতার প্রসব বেদনা শুরু হলো। মমতার প্রসব বেদনা দেখে সুভাষ ভয়ে একেবারে চিত্পটাং, মানে সে মমতার প্রসব বেদনার কষ্ট দেখে কোনোমতেই সহ্য করতে পারছিলো না। একবার ভাবছে বাইরে বেরিয়ে যাবে কিনা। কিছুক্ষণ পর পরই মমতা
সংজ্ঞা হারাচ্ছে। কর্তব্য রত নার্সকে চিত্কার করে বোলে উঠলো, “ম্যাডাম, কিছু একটা করুন, আমার স্ত্রী তো মৃত পথ যাত্রী হতে চলছে”। “ও কিছু না, এটাইতো স্বাভাবিক ঘাবড়াবার কিছুই নাই”! তবুও সুভাষ শান্তি পাচ্ছে না। ম্যাডাম বলে কি, এটাই নাকি স্বাভাবিক। এটা স্বাভাবিক কি ভাবে হয়। এতো মমতার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে চলছে, ঝড় নয়, ঝড় নয়, এ যে প্রলয় বয়ে যাচ্ছে। এভাবে ১৪ / ১৫ ঘন্টা পর এক নব জাতক শিশুর জন্ম হলো। বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরে সুভাষ দেখলো কি ভাবে মমতা মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করছে। কোথায় গেলো তার প্রসব বেদনা, আর কোথায় গেলো তার অনিশ্চয়তার ভয়। এদিকে সুবাসের কাছে মমতার সেই অসহ্য বেদনার চিত্কার এখনো তার চারিপাশে ঘুর ঘুর করছে। আতঙ্কের ঘোড় এখনো কাটেনি, ভয়ে তার শরীর থর থর করে কাঁপছে। এ এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। সে মনে মনে ভগবানকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে, “হে, ভগবান, ধন্য তোমার সৃষ্টি”, আর নারীদের প্রতি মাথা নত করে সভ্রমে জানাল দিলো, “হে নারী জাতি, লহ মোর অঞ্জলি”।

জুঁই আর জবা, তাদের ছোট ভাইটিকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। তারা মাকে প্রশ্ন করে, “মা, আমাদের ছোট ভাইটির কি নাম রাখলে”?
– ওর নাম রেখেছি “দুর্লভ” মমতা উত্তর দেয়।
– মা, ওটা অনেক কঠিন নাম। দু বোন একসাথে বলে উঠে।
– তোরা ওকে “দুলু” বলে ডাকবি।
দুজনেই খুশিতে ডগমোগিয়ে দুলুর গালে আলতো করে টোকা মেরে বললো, “দুলু ভাই, তুমি কি সুন্দর”। শেষ
লেখক: কামাল কাদের (নিউবারি পার্ক, ইলফোর্ড, ইংল্যান্ড)
email :- quadersheikh @gmail com