১. ভালোবাসা আর বিচ্ছেদের রঙ কি?
ভালোবাসা আর বিচ্ছেদের রঙ কি?
কবি মহলে এই নিয়ে নানা চরণের চালাচালি।
কারো মতে ভালোবাসার রঙ গোধূলীর মত,
আর বিচ্ছেদের রঙ নীল।
আমায় সঠিক করে কেউ বলতে পারো?
আসলে এই দুইয়ের রঙ কি?
শুধুই কি কবির কল্পনায় ধরা দেওয়া রঙ?
নাকি প্রকৃতই ভালোবাসা আর বিচ্ছেদের কোন রঙ আছে?
যদি বলি ভালোবাসার রঙ খয়েরি আর বিচ্ছেদের রঙ তামাটে,
মানবে কোন জন?
এই নিয়ে চলবে তর্ক,
সমাধান দেবে না কেউ?
পাখির ডাকে ঘুম থেকে জেগে
প্রেমিক যখন দেখে পূর্বে উদিত সূর্য লাল রঙ মেলে দিচ্ছে
বলবে, এই তো ভালোবাসার আদি রঙ।
নক্ষত্রের অতি জ্বলজ্বলে আলোর পানে চেয়ে
কেউ বলবে এটাই ভালোবাসার রঙ।
অমাবস্যার রাত দেখে বলবে বিচ্ছেদের রঙ কালো
আসলেই কি তাই?
২. বল্গাহীন খঞ্জর বা ত্রিশূল হাতে নয়
শীতে সাপ নেতিয়ে থাকে কোন গর্তে
বা পুরনো প্রায় ক্ষয়িষ্ণু কোন দালানের কোটরে
কিংবা গাছের নীচে শিকড়ে জড়িয়ে থাকে
ঘুম থেকে জেগে উঠে প্রিয়তমাকে ছোবল দিতে যায় না।
মানুষ শ্রেষ্ঠজীব, কোন কোন মানুষ সাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর
হয়ে উঠতে পারে।
সাপের ধর্ম আছে, আঘাত না পেলে কোন মানুষকে ছোবল দেয় না।
কোন কোন মানুষ সেই ধর্ম মানে না।
বনের বাঘ খুব সহজে লোকালয়ে আসে না
মানুষকে ভয় পায়।
বনে খাদ্যাভাব হলে লোকালয়ে আসে
অথবা দন্ত পরে গেলে।
বৃদ্ধ ঘোড়াকে লাথি না দিলে কাউকে লাথি মারে না।
কোন কোন মানুষ এসব মানে না।
তাদের কেউ কেউ টুপি মাথায়
প্রার্থণা করতে যায়।
লাল গেরুয়া পড়ে উপসানালয়ে যায়
ফিরে এসেই এক ইঞ্চি জমি নিয়ে বিরোধে জড়ায়
চাচা’র হাতে ভাতিজা খুন হয়
অথবা ভাতিজার হাতে চাচা।
মামার হাতে ভাগ্নে অথবা ভাগ্নের হাতে মামা খুন হয়।
মানুষ হবে মানবিক।
আমার প্রার্থণা একটাই হে সৃষ্টিকর্তা
মৃত্যুর পর যদি আবার ফেরত দেন কোন গ্রহে
আমাদেরকে মানুষের মত মানুষ করে পাঠাবেন
বল্গাহীন খঞ্জর বা ত্রিশূল হাতে নয়।
৩. জলকন্যা!
(উৎসর্গ কবি ফারহানা নীলাকে)
জলে ভাসিয়ে দিলাম কবিতার কয়েকটি চরণ।
জল থেকে হাত বাড়িয়ে কুড়িয়ে নিলো।
জলকন্যা!!
জলকন্যা আছে শুনেছি।
কখনও চোখে দেখিনি।
জলকন্যা কাব্য প্রেমী কি না তাও জানি না।
হাত দুটি মিলিয়ে গেল।
আমার কবিতার চরণ ও হাত দেখতে পাচ্ছি না।
আমি কি ভুল দেখছি? হতে পারে।
কানে ভেসে এলো, সবাই যখন ঘুমায়
আমি তখন জেগে উঠি।
কবিতার চরণ কেউ জলে ছুঁড়ে দিলে কুড়িয়ে নেই।
রাত-বিরাতে জলাধারে কেউ বেশি আসে না।
প্রতীক্ষায় থাকি।
অনেককাল পর তুমি এলে।
কবি কোন জায়গায় তোমার নিবাস?
স্থলে তুমি বেঁচে থাক কি করে?
বললাম, তুমি জলে যেভাবে বেঁচে থাক;
আমরাও স্থলে বেঁচে থাকি।
তোমার আর আমার বেঁচে থাকার মধ্যে প্রভেদ আছে।
তবে মিল আছে, তুমি ও আমি বেঁচে আছি জলে ও স্থলে।
কবিতার চরণ ফিরিয়ে দাও
কবিতার চরণ দিয়েছ জলে এগুলো আমার।
৪. প্রেমহীন কবিতা হয় না
শত সহস্র শব্দ কোলাহলের
মাঝে চাঁদভাঙ্গা আলো নামছে-
বসে আছি রাত জেগে;
শব্দ কোলাহল কলমের আঁচড়ে বন্দী করে
একটি কবিতা লিখব বলে।
সেই কবিতা ছড়িয়ে দেবো সবার মাঝে।
খুঁজে পেলাম মাত্র দু’টি শব্দ
প্রেমহীন জীবন হয় না
প্রেমহীন কবিতা হয় না।
৫. ঈশ্বর নিবৃত্ত
নারীর শরীরে বীজ পুঁতে
ঈশ্বরের কাছে কৃষকের প্রার্থনা-
সন্তান যেন ভালো হয়।
দুলছে শরীর, ঘরের মধ্যে ধাত্রী
এই যে, কৃষকের বেটা, ‘ফলন হইছে।’
কৃষক চোখ মেলে আসমানে।
ফলনের কথায় মুখে চিকন হাসির রেখা।
তারপর দেখতে যায় ফলন।
দেখেই মনে বিষাদ নেমে আসে,
ধানে শুধু চিটা আর চিটা,
বীজে ভেজাল ছিল
প্রতারিত হয়েছে কৃষক।
ঈশ্বরের এতে কোন হাত ছিল না।
ঈশ্বর ভেজাল দেননি বীজে।
ভেজাল দিয়েছে তারই সৃষ্টজীব
তাই নিবৃত্ত তিনি।
৬. গায়ে মাখি গোধূলী চূর্ণ
(উৎসর্গ কবি মিতা মজুমদারকে)
সূর্যাস্তের গোধূলী লগ্ন
সুর্যের বিষাদময় বিদায় কান্না।
একটি দিন-সময়ের চলে যাওয়া।
সূর্য তার লাল আভা- রশ্মি ছড়িয়ে বিদায় বার্তা জানায়,
আমরা এই বিষাদময় বিদায়ে রপ্ত করি আনন্দ-উল্লাস।
গায়ে মাখি গোধূলী চূর্ণ, হাতে-হাত ধরে চলি
আর ভালোবাসার কথা বলি,
শুধু বলি না, সূর্য-বিষাদের কান্নার কথা।
মানুষই হবে দেবতা
(সব শিশুর প্রতি উৎসর্গ)
আমি চেতনায় আছি-
সুন্দর পৃথিবী দেখার আগ্রহে।
স্বপ্নরা জেগে আছে আমার সাথে।
বালিশে স্থান বদল করছে মাথা
এ- কাত ও- কাত হচ্ছি।
মস্তিষ্ক সজাগ আছে।
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ হোচট খেয়ে
নিচে পড়ে যাচ্ছিলাম,
স্বপ্নরা হাত ধরে পতন ঠেকাল।
সুন্দর স্বপ্নরা কী দেবতা?
যদি দেবতা হয় তাহলে
সুন্দর পৃথিবী নিশ্চয় হবে।
যে পৃথিবীতে শিশুদের কষ্ট
থাকবে না।
তাদেরকে ডাস্টবিনে, বা জঙ্গলে
ফেলে দেবে না কেউ।
মানুষের মধ্যে কলহ-বিবাদ,
ধর্মে-ধর্মে কলহ-বিবাদ,
রাষ্ট্রে –রাষ্ট্রে কলহ-বিবাদ
আর যুদ্ধ থাকবে না।
নির্মল-সুন্দর পৃথিবীতে
মানুষই হবে দেবতা,
দেবতারা যাবেন বিশ্রামে।
ফ্লোরিডা, ইউএসএ