অনলাইন ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে ঠাকুর মেজবাহ উদ্দিন মিজানের নাম প্রস্তাব করেছেন সংরক্ষিত নারী আসনের (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩১২) সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদ। মেজবাহ উদ্দিন হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি তাহের উদ্দিন ঠাকুরের চাচাতো ভাই।
এ ঘটনায় উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদের সব ধরনের অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সরাইল উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নানা কলাকৌশলে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তারাই আজ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই-বাছাই কমিটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক বিষয়। আমাদের শেষ বেলায় যাচাই-বাছাইয়ের নামে চিন্তায় ফেলেছে। রাজাকারের উত্তরসূরিরা আজ সরকারের ভেতরে কৌশলে প্রবেশ করছে। এরাই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। ’৭১ সালে বুকে বুলেট নিয়েছি, পরাজিত হইনি। এখনো রাজাকারের কাছে পরাজিত হবো না।
’৭১ সালের রীব মুক্তিযোদ্ধারা আরও বলেন, নারী সংসদ সদস্য সরাইলে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে যার নাম প্রস্তাব করেছেন, তিনি একজন অমুক্তিযোদ্ধা এবং তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি তাহের উদ্দিন ঠাকুরের আত্মীয়। তিনি কয়েক দিন আগে কৌশলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। আমরা তাকে মেনে নিতে পারি না।
এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩১২ আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরও বলেন, সরাইলে মহান বিজয় দিবসের ওই অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরীয় পরিয়ে দেননি। অথচ কয়েক দিন আগে তিনি আশুগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের এক নেতাকে মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা দিয়েছেন। এখন থেকে তার কোনো অনুষ্ঠান হলে সরাইলের মুক্তিযোদ্ধারা তা বর্জন করবে। ওই নারী সংসদ সদস্যের এমন প্রস্তাবের পর উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা হাত তুলে সরাইলে তার সব অনুষ্ঠান বর্জনের অঙ্গীকার করেন।
ঠাকুর মেজবাহ উদ্দিন মিজান সরাইল উপজেলা সদরের বড় দেওয়ান পাড়ার বাসিন্দা। গত শনিবার দুপুরে সরাইল উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের আয়োজনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক মৃদুলের সঙ্গে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদ তার নাম প্রস্তাব করেন। সভায় উপস্থিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইসমত আলী ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমত আলী বলেন, ‘সরাইলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ৩০২ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধকালীন সরাইল থানা কমান্ডার সাবেক উপসচিব আবদুস সালামসহ ৭৭ জনের নাম যাচাই-বাছাই তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া এই ৭৭ জনের মধ্যে ১২ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। এ তালিকা নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছি।’
আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাশেদ বলেন, ‘বিভিন্ন কলা-কৌশলে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তারাই আজ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই-বাছাই কমিটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অপমানজনক।’
ইউএনও আরিফুল হক মৃদুল বলেন, ‘যাচাই-বাছাই নিয়ে কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে হয়রানি করা হবে না। প্রয়োজনে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে আসব। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তালিকা থেকে বাদ পড়বেন না।’
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে আমার পাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকজনের নাম বলতে বলেছেন। আমি তাদের কথা অনুযায়ী চারটি নাম প্রস্তাব করে ইউএনওকে বলেছি যে, এর মধ্যে কাকে দেওয়া যায় দেখেন।’
ঠাকুর মেজবাহ উদ্দিন মিজান যে বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয়-এ তথ্য জানতেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এরকম কিছু আমার জানা নেই।’
শনিবারের ওই অনুষ্ঠানে ইসমত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাবেক উপপরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোতালেব, সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এম এম নাজমুল আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাশেদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহ উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা কামাল খাঁ, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজ আলী প্রমুখ। তারা যুদ্ধে শহীদ ও পরে বিভিন্ন সময় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণ এবং উপজেলা সদরে একটি মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানের জায়গা নির্ধারণের দাবি জানান।