অনলাইন ডেস্ক : অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মায়ের ভাষার জন্য নির্ভয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়ার প্রথম ইতিহাস রচনার দিন। বাঙালির ভাষা আন্দোলনে একইসঙ্গে গৌরবময় আর শোকের এই দিনটির পথ বেয়েই অভ্যুদ্যয় ঘটে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের।

সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছিল পূর্ব বাংলার মানুষ। তবে ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার গুঞ্জন উঠতে থাকে। শোনা যায়, ১৯১৮ সালে প্রথিতযশা ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষাকে অবিভক্ত রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়েছিলেন। ১৯২১ সালেও সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী ব্রিটিশ সরকারের কাছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছিলেন। এমন তথ্য মেলে তৎকালীন পত্র-পত্রিকার সূত্রে। কিন্তু তখনো এ অঞ্চলের নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের দাবি হয়ে ওঠেনি এটি।

৪৭-এ দেশভাগের পর পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকারহীনতা নতুন করে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রয়াস চালাতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন-উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ সিদ্ধান্তে ফেটে পড়ে পূর্ব বাংলার সাধারণ জনগণ। তখন সীমিত পর্যায়ের আন্দোলন শুরু হলেও চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রসহ সাধারণ মানুষ সমবেত হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো ঢাকা।

ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত দিনটির দুই বছর পর ১৯৫৪ আসলের ৭ মে পাকিস্তান সংসদে বাংলাকে একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। কিন্তু যে স্বপ্ন ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হয়েছিলো, সেই লক্ষ্য কতোটা পূরণ হয়েছে ? বাংলা ভাষার বিকৃতি রোধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগইবা কতখানি কার্যকর?

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার স্বীকৃতির পর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন এটি। তবে সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের পাশাপাশি, দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণেও জোরালো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের তাগিদ এই ইতিহাসবিদের।