অনলাইন ডেস্ক : মন্ট্রিল বন্দরে বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘটরত শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজে ফেরাতে শুক্রবার সন্ধ্যায় সিনেটে বিশেষ আইন সংক্রান্ত একটি বিল আনা হয়েছে। এতে সোমবারের মধ্যে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে কমন্সে পাস হওয়া বিল সি-২৯ শিরোনামের ওই বিশেষ আইনটি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ সিনেট কমিটিতে আলোচনা হয়েছে এবং তারা তা অনুমোদন করেছেন।

আইনটি পাসের পর শ্রমমন্ত্রী ফিলোমেনা টেসি বলেন, কানাডাবাসী এবং কানাডার অর্থনীতি মন্ট্রিল বন্দরের উপর নির্ভরশীল। তাই এই বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্টদের সবে থাকলে চলবে না। তাদের অবশ্যই কর্মব্যস্ত থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে মত পার্থক্য থাকতেই পারে। তবে এই মত-পার্থক্য দূর করার সবচেয়ে ভাল জায়গা হল আলোচনার টেবিল। ধর্মঘটের মতো আত্মঘাতি পদ্ধতি সমস্যা সমাধানে কখনো সহায়ক হতে পারে না। অর্থনীতিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় এই বিশেষ আইন পাসের বিল আনা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

নতুন আইন অনুযায়ী শনিবারের মধ্যে বন্দর শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে হবে এবং রোববারের মধ্যে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে হবে। এ বিষয়ে সকল শ্রমিক ইউনিয়নকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্যকারী বা পালনে ব্যর্থদের প্রতিদিন ১ ডলার করে জরিমানা দিতে হবে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকার আলোচনায় প্রস্তুত। শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের নেতৃবৃন্দের নাম জমা দিলে তাদের সাথে আলোচনায় বসবে সরকার। আলোচনায় মধ্যস্থতা কারীদের নাম ২/১ দিনের মধ্যেই জানানো হবে। যদি মধ্যস্থতা কারীদের মধ্যে কারো এ বিষয়ে আপত্তি থাকে তবে তাকে পরিবর্তন করতেও সরকার সম্মত আছে।

চেম্বার অব কমার্স অব মেট্রপলিটন মন্ট্রিলের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী মিশেল লেবলেন্স বলেন, নতুন বিশেষ আইনটি হাজার ব্যবসায়ীদেরকে আস্বস্ত করবে এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের ন্যার্য দাবি পূরণে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনায় একটি সুফল বয়ে আসবে বলে তিনি খুবই আশাবাদি।

এদিকে নতুন বিশেষ আইনটিকে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক আখ্যায়িত করে এর সংশোধন চেয়েছে শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন। দ্য সিভিল সার্ভিস ইউনিয়নের উপদেষ্টা মিশেল মুরারি বলেন, এই আইনের ফলে শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি সিনেটরদের কাছে আইনটিতে কিছু সংশোধন আনার দাবি জানান। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সি-২৯ বিলটির বিষয়ে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। কারণ এই বিলে শ্রমিকের কাজে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা সংবিধান পরিপন্থি। মিশেল মুরারির বক্তব্যের জবাবে শ্রমমন্ত্রী ফিলোমেনা টেসি বলেন, তার কথার যুক্তি আছে। কিন্তু আমাদেরকে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথাও মাথায় রাখতে হবে। দেশের অর্থনীতি অবস্থা মৃতপ্রায়। বিলটি নিয়ে আদালতে যাওয়ার হুমকির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা আমা করছি আদালতকে সঠিক পরিস্থিতি বোঝাতে পারব। এবং আদালত আমাদের পক্ষেই রায় দেবে।
প্রসঙ্গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে মন্ট্রিল বন্দরে ১১৫০ জন শ্রমিক অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছে। তাদের স্থায়ী করাসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক সংগঠনগুলো গত ৯ এপ্রিল থেকে বন্দরে অনিদ্রিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করে। সূত্র : দ্য কানাডিয়ান প্লেস