নাদিরা তাবাস্সুম : মায়ের অসুস্থতা নিয়ে চিন্তা এবং নিজের কাজ কর্মের ব্যস্ততা সব কিছু মিলিয়ে সাফিদের খুব চিন্তা হয় শারীরিক ও মানসিক অসুস্থ মানুষদের নিয়ে। কিন্তু আরও বেশি ভাবনার বিষয় হয় যখন সুস্থ, স্বাভাবিক, শিক্ষিত ও সচেতন যারা তারা কোন অস্বাভাবিক, অসামাজিক ও অনৈতিক কাজ করে ফেলে।

কেউ কেউ দেখা যায় অনৈতিক ও অন্যায় কাজ করার পর অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়। নিজেকে সংশোধন করে এবং ভালো হয়ে যায়। এটা ঠিক যে, মানুষের মধ্যে পশুত্ব ও মনুষত্য থাকার কারণে দুটোরই প্রভাবে মানুষ প্রভাবিত হয়; কিন্তু মাঝে মাঝে একটি অন্যটির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে ফেলে। বন্ধু দীপক-এর সাথে এ বিষয়ে আলোচনার সময় সে বলেছিল ‘মানুষের মনের রহস্য বড় জটিল’। বিশ্ব সৃষ্টি জগত যেমন রহস্যময় ঠিক তেমনি মনোজগত রহস্যে ভরা – আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান খুঁজে চলেছে। ‘মন’ বলতে বুদ্ধি এবং সচেতনতা যা চিন্তা ধারণা, স্মৃতি, আবেগ, ইচ্ছা এবং কল্পনা, মস্তিষ্কের সচেতন ও অবচেতন প্রক্রিয়াসহ প্রকাশিত হয়।
‘মন’কে বিশেষ করে যৌক্তিক চিন্তা প্রক্রিয়া বোঝানো হয়। সচেতনতা শুধুমাত্র উন্নত ক্রম বিকশিত জীবের মস্তিষ্কে বিদ্যমান। মনের সচেতন ও অবচেতন প্রক্রিয়া মানসিক ও শারীরিক আচরণ পরিচালিত ও প্রভাবিত করে। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগ্মুন্ড ফ্রয়েড মনের গঠনকে তিনটি অংশে দেখিয়েছেনথ ‘ইদ’, ‘ইগো’ ও ‘সুপার ইগো’ যা জীবনের বিভিন্ন স্তরে বিকশিত হয়। এগুলো মস্তিষ্কের অংশ বা শারীরিক নয়। তিনি মানুষের সচেতনতাকে তিনটি স্তরের চেতনা বলেছেন যেমন- সচেতন, অবচেতন ও অচেতন। এর প্রত্যেক স্তর উল্লিখিত তিনটি স্তরের সাথে যোগাযোগ এবং একটি আর একটির উপর প্রভাব বিস্তার করে।

শরীর ও মনের সম্পর্ক ও সমস্যা নিয়ে বিজ্ঞান, দর্শন ও মনোবিজ্ঞান-এর তত্ত¡ ও মতবাদ পার্থক্য চলে আসছে বহুকাল যাবত। দ্বিত্ববাদীদের মতে, যদিও সচেতনতা মস্তিষ্কে সৃষ্টি হয় কিন্তু তা শরীরের অংশ নয়। মন এবং শরীর দুটি পৃথক বিষয় এবং সচেতনতাকে শুধুমাত্র শারীরিক মস্তিষ্ক দিয়ে বোঝা যেতে পারে না। অনেকে আবার ‘ঘোষ্ট ইন দা মেশিন’ বলেন। অনেকের মতে “Reality is not real”, “Consciousness creates reality” – এসব নিয়ে প্রচুর মতপার্থক্য রয়েছে। একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন কিভাবে তিনি মানুষের মন ও সচেতনতাকে পরিচালিত করেন।

সাফিদ- অধিকাংশ মানুষেরই যাদের সচেতনতা আছে তাদের শুধু সঠিক ও ভুল সম্পর্কে ধারনা আছে তাই নয়; তারা বুঝতে পারে যে কিভাবে তাদের কাজকর্ম অন্যদের প্রভাবিত করে। কখনও কখনও সচেতনতাকে মস্তিষ্কের ভিতরের ‘কণ্ঠস্বর’ বলা হয়।
দীপক- এটা ঠিক যে, সৃষ্টিকর্তা বিশেষ বিশেষ মানুষদের বিশেষ বিশেষ সচেতনতা ও জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষদের সচেতন করার জন্য।
সাফিদ- ইসলাম ধর্মে এজন্য শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য নির্দেশনা আছে এবং জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নরনারীর জন্য ‘ফরজ’ করা হয়েছে। সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জ্ঞান অর্জনের জন্য সূদুর চীন দেশে গমনের কথা বলেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “আর তা (কোরআন) সত্যসহ নাযিল করেছি, সত্যসহই নাযিল হয়েছে, আপনাকে (মোহাম্মদ) (সাঃ) সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি” (সূরা বনি ইসরাইলঃ আয়াত ১০৫)

মহান আল্লাহতায়ালা প্রথম সূরার প্রথম আয়াতে পড়তে বলেছেন। “পড়ুন, আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন” (সূরা আলাকঃ আয়াত ১)
“আপনাকে প্রদান করেছি , কল্যাণময় গ্রন্থ যেন মানুষ বুঝে, আর যারা জ্ঞানী তারাই উপদেশ গ্রহণ করে” (সূরা সোয়াদঃ আয়াত ২৯)
“তা (কোরআন) উপদেশ বিশ্ব বাসীর জন্য , তার জন্য যে সরল পথে চলতে ইচ্ছা করে” (সূরা তাকভীরঃ আয়াত ২৭-২৮)
“তবে কি তারা কোরআন সম্পর্কে গবেষণা করে দেখে না? নাকি অন্তরে তালা রয়েছে” ( সূরা মুহাম্মদঃ আয়াত ২৪)