অনলাইন ডেস্ক : কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় শেষ হচ্ছে শুক্রবার মধ্যরাতে। ভিসা পাওয়া কর্মীদের আজকের মধ্যে দেশটিতে পৌঁছতে হবে। এ কারণে শেষ দিনে বিমানবন্দরে কর্মীদের উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু এখনও ফ্লাইটের টিকিট পাননি প্রায় ৩১ হাজার কর্মী। ফলে তাদের যাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত।
কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন তিনি। এজেন্সি তাদের দফায় দফায় সময় দিয়েও ফ্লাইটের টিকেট দিতে পারেনি। বলছে, টিকেটের দাম বেশি হওয়ায় তারা কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সর্বশেষ সন্ধ্যার একটি ফ্লাইটের টিকেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই টিকেট তিনি এখনও হাতে পাননি।
মনিরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, দেশে কৃষিকাজ করে কষ্ট করে সংসার চালাতাম। সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে ঋণ করে ও জমি বন্ধক রেখে বিদেশে যাওয়ার উদ্যোগ নিই। বিদেশে যেতে না পারলে কীভাবে সংসার চালাব, ঋণ পরিশোধ করব?
শুধু মনিরুল নয়, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আজ হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছেন। তারা বলছেন, আজকের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া আর কোনো শ্রমিক নেবে না। আজকের মধ্যে যেতে না পারলে তারা আর মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন না। অনেক টাকা খরচ করেছেন, এখন বিদেশে যেতে না পারলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।
চক্র তৈরি করে কর্মী পাঠানোয় অনিয়মের ঘটনায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে। তখন আবারও চক্র গঠন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, দেশটি আপাতত আর শ্রমিক নেবে না। যাঁরা অনুমোদন পেয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, তাঁদের ৩১ মের (আজ শুক্রবার) মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে।
কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) টাকা দেওয়া বহু মানুষ এখন বিপদে পড়েছেন। সময় আর হাতে না থাকায় উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই তারা এখন বিমানবন্দরে এসে ভিড় করেছেন।
মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে শুক্রবারে পর বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে কোনো কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। গত জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মন্ত্রিপরিষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়। একই সাথে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি পুনরায় করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী যায় মালয়েশিয়ায়।
আপাতত মালয়েশিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। গত ২৯ মে মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার হাসনা মোহাম্মদ হাসিম সাংবাদিকদের জানান, বিদেশি কর্মীদের প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন ছুটিতে বাংলাদেশে আসা প্রবাসী কর্মীরা। অন্যদিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটগুলোর টিকিটের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। লাখ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না একটি টিকিট।
বিমানবন্দরে অপেক্ষমান কর্মীদের অভিযোগ, এজেন্সিগুলো টিকিট ম্যানেজের আশা দিয়ে এখন প্রতারণা করছে। অনেকের ফোন ধরছে না, যোগাযোগ করছে না। অনেককে আবার পরবর্তী ফ্লাইটের আশা দেয়া হচ্ছে। ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট থাকা স্বত্তেও তারা আদৌ যেতে পারবে কিনা জানেন না। অনেকরই অভিযোগ টিকিট পাইয়ে দিতে তাদের কাছ থেকে তিনগুন পর্যন্ত টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবি প্রবাসী কর্মীদের। তাদের দাবি, হয় সময় বাড়ানো হোক নতুবা তাদের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
শুক্রবার সকাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে মালয়েশিয়ায়গামী তিনটি ফ্লাইট। রাত পর্যন্ত ছেড়ে যাবে আরও চারটি। এসব ফ্লাইটে যেতে পারবেন দেড় হাজার কর্মী।