অনলাইন ডেস্ক : চাকরির খোঁজে ভারত গিয়ে কিডনি হারলেন তিন বাংলাদেশি নাগরিক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পৃথকভাবে নিয়ে যাওয়া হয় ওই তিন বাংলাদেশিকে। কিডনি পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে তিনজনই নিজেদের কিডনি হারিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কিডনি পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা কাজের লোভ দেখিয়ে মেডিকেল ভিসায় বাংলাদেশিদের ভারতে নিয়ে গিয়ে তাদের কিডনি কেড়ে নেয়। বিনিময়ে তাদের কিছু অর্থও দিয়ে থাকে।তবে ভুক্তভোগীদের পরিচয় গোপন রেখেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ভুক্তভোগীর একজনের বয়স ৩০ বছর। বাংলাদেশে তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। কিন্তু দোকানে আগুন লেগে তার পুরো ব্যবসা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এক এনজিও থেকে তিনি ৮ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু, ৩ লাখ টাকার বেশি ঋণ শোধ করতে পারেননি। একপর্যায়ে আর্থিক চাপের মুখে এক বন্ধুর পরামর্শে দেশ ছেড়ে ভারতে যান। সেই বন্ধুই তাকে পাসপোর্ট, মেডিকেল ভিসা এমনকি ভারতে চাকরিরও আশ্বাস দেয়
গত ১ জুন ভারতে যাওয়ার পর ওই ব্যক্তি জানতে পারেন, সেখানে তার জন্য চাকরি নেই। তার বদলে তাকে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। প্রথমে তিনি রাজি না হলে তার পাসপোর্ট এবং ভিসা কেড়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। তাকে হুমকি দেওয়া হয় কিডনি না বিক্রি করলে তিনি আর কোনোদিন ভারত থেকে দেশে ফিরতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে কিডনি বিক্রি করেন সেই যুবক।
দ্বিতীয় ভুক্তভোগী বাংলাদেশির বয়স ৩৫ বছর। তাকেও ভারতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাসকিন নামে এক ব্যক্তি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে দিল্লিতে পাঠায়। গত ২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে পৌঁছানোর পর দুজন লোক তাকে যশোলার হোটেল রামপালে নিয়ে যায়। ওই দুই ব্যক্তির নাম রাসেল ও মোহাম্মদ রোকন। তারা তাকে বলেন, সেখানকার এক হাসপাতালে চাকরি পাবেন তিনি। আর সেটির জন্য তার বেশ কিছু মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার। রক্তপরীক্ষা ও ইসিজি-সহ প্রায় ১৫-২০টি পরীক্ষা করা হয় তার। তারপর এপ্রিলের ২ তারিখে তাকে আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং এক নার্স তাকে একটি ইনজেকশন দিতেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
জ্ঞান ফেরার পর দেখেন তার পেটে অপারশেনের চিহ্ন। তার একটি কিডনি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর ৬ এপ্রিল রাসেল ও তার সহযোগী সুমন তাকে যশোলার ওই হোটেলে নিয়ে যান। পরে রাসেল তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য জেনে সেখানে ৪ লাখ টাকা জমা করে। তাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলা হয়।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশি তৃতীয় ব্যক্তিও একই ফাঁদে পড়েছিলেন। ফেসবুকে অরণ্য নামে এক ভারতীয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তিনিই চাকরির প্রস্তাব দেন সেই বাংলাদেশিকে। প্রশিক্ষণের সময় বৃত্তিও দেওয়া হবে বলে প্রলোভন দেখানো হয়। সেই প্রলোভনে পড়ে ভারতে পৌঁছানোর পর তার বেশ কিছু মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়। মাত্র ৬ দিনে তার শরীর থেকে ৪৯ টিউব রক্ত নেয়া হয়েছিল। ভুক্তভোগী বলেন, আমাকে এমন কিছু দেওয়া হয়েছিল যার ফলে প্রথমে আমি দুর্বল বোধ করি এবং একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার কিডনি নেই। আমাকে বলা হয়েছিল আমি কোনো সমস্যা ছাড়াই একটি কিডনি নিয়ে বাঁচতে পারব। পরে আমাকে সাড়ে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, এই ঘটনায় মামলা নিয়ে চার্জশিট প্রকাশ করেছে দেশটির পুলিশ।