কৌশলী ইমা,নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ ৪০ দিন জীবনের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা গেলেন ডাকাতের গুলিতে গুরুতর আহত যুবক তানজিম সিয়াম (২৩) (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি মারা যান। এরপর অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে তার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র খুলে দেওয়া হয়ে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের সন্নিকটে রক্সবুরিতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি মুদি দোকানে ঢুকে তানজিম সিয়ামকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র ও অর্থ হাতিয়ে নেয় স্টেফুন সামুয়্যেল (২৫) নামের এক দুর্বৃত্ত। দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্ত স্টেফুন সিয়ামের মাথায় দুটি গুলি করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর আহত সিয়ামকে দ্রুত ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
বোস্টনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে তিন সপ্তাহ পর বোস্টন পুলিশ স্টেফুন সামুয়্যেলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারকৃত স্টেফুনের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমে সশস্ত্র ডাকাতি ও খুনের অভিপ্রায় নিয়ে সশস্ত্র হামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ভিসায় এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তানজিম সিয়াম। পড়াশোনা শুরুর আগে পরিবারকে সহায়তার উদ্দেশ্যে ৪ মাস আগে বোস্টনের সন্নিকটে রক্সবুরিতে এম অ্যান্ড আর কনভেনিয়েন্স স্টোর নামে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি মুদি দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি। গত ১৪ জুলাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই হাসপাতালে কোমায় ছিলেন সিয়াম।
এদিকে, ডাকাতের গুলিতে গুরুতর আহত তানজিম সিয়ামকে একনজর দেখতে গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে ছুটে আসেন তানজিমের মা-বাবাসহ দুই সহোদর। বোস্টনের মুলধারার রাজনীতিবিদদের নির্দেশে বাংলাদেশি এ দোকানকর্মীকে বাঁচানোর হাসপাতালের চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালান।
নিহত তানজিম সিয়ামের বাড়ি বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলায়। তার অকাল মৃত্যুতে বোস্টনসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথকভাবে শোক প্রকাশ করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বোস্টনে বাংলাদেশি মালিকানাধীন মুদি দোকানে সশস্ত্র ডাকাতির এ ঘটনায় বোস্টনের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা এখনো চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী।