অনলাইন ডেস্ক : বেলারুশের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে পোল্যান্ড। দেশটি বলেছে, বেলারুশের একটি সামরিক হেলিকপ্টার পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে এবং এই ঘটনায় দ্রুতগতিতে সীমান্তে সেনা পাঠিয়েছে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য এই দেশটি।

তবে পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশ। বুধবার (২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের সামরিক হেলিকপ্টার পোলিশ আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে বলে মঙ্গলবার অভিযোগ এনেছে পোল্যান্ড। আর এরপরই পোল্যান্ড বলেছে, তারা তাদের পূর্ব সীমান্তে সৈন্য পাঠাচ্ছে।

বেলারুশিয়ান সামরিক বাহিনী অবশ্য এই ধরনের কোনও লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং সীমান্তে সেনা পাঠানোর ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য পোল্যান্ড এই ধরনের অভিযোগ সামনে আনছে বলেও পাল্টা অভিযোগ করেছে তারা। টানা প্রায় দেড় বছর ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে এবং এই যুদ্ধে ইউক্রেনের অন্যতম বড় সমর্থক পোল্যান্ড।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো এর আগে বেলারুশ-পোলিশ যৌথ সীমান্তের কাছে রাশিয়ান ওয়াগনার ভাড়াটে যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিয়ে পোল্যান্ডকে কটূক্তি করেছিলেন।

পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় তারা সীমান্তে ‘কমব্যাট হেলিকপ্টারসহ অতিরিক্ত বাহিনী এবং সরঞ্জাম’ পাঠাচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে ন্যাটোকে জানানো হয়েছে এই ঘটনায় ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বেলারুশের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্সকে তলব করা হয়েছে।

পোলিশ সামরিক বাহিনী অবশ্য প্রথমে কোনও ধরনের সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনা অস্বীকার করেছিল। কিন্তু পরে আলোচনার পর জানায়, ‘অত্যন্ত কম উচ্চতায় অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আর এই কারণে সেটি রাডার দিয়ে আটকানো কঠিন’।

বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে লিখেছে, পোল্যান্ড ‘স্পষ্টতই তার বিদেশি প্রভুদের সাথে পরামর্শ করার পরে’ ঘটনাটি সম্পর্কে তার মন পরিবর্তন করেছে। একইসঙ্গে এমআই-৮ এবং এমআই-২৪ হেলিকপ্টার দিয়ে কোনও ধরনের সীমান্ত লঙ্ঘন হয়নি বলেও দাবি করেছে তারা।

বেলারুশ সীমান্তের কাছাকাছি পূর্ব পোলিশ শহর বিয়ালোয়াইজার কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দারাও সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমান্ত লঙ্ঘন সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

শত্রুতার ইতিহাস
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। সেসময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে রুশ সামরিক বাহিনীকে বেলারুশের মাটি ব্যবহারের সুযোগ দেন বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্ট। তবে লুকাশেঙ্কো তার নিজের সৈন্যদের ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্ত করেননি।

সাবেক এই সোভিয়েত রাষ্ট্রের পোল্যান্ডের সাথে শত্রুতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যেমন রয়েছে রাশিয়ারও। গত সপ্তাহে পুতিন পোল্যান্ডকে বেলারুশের বিষয়ে আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, প্রতিবেশী এই দেশের ওপর যে কোনও আক্রমণকে নিজের ওপর আক্রমণ হিসাবে বিবেচনা করবে রাশিয়া।

এছাড়া গত জুন মাসে রাশিয়ায় ওয়াগনার বাহিনীর নাটকীয় বিদ্রোহের ঘটনার পর ভাড়াটে যোদ্ধারা দলে দলে বেলারুশে প্রবেশ করেন। পরে তারা লুকাশেঙ্কোর সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। এই ঘটনায় পোল্যান্ড ইতোমধ্যেই তার এক হাজারেরও বেশি সৈন্যকে সীমান্তের কাছাকাছি নিয়ে যেতে শুরু করেছে।

এর আগে পোলিশ সীমান্তের দিকে বেলারুশে রাশিয়ান ওয়াগনার বাহিনীর গতিবিধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি। গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘১০০ জনেরও বেশি ওয়াগনার ভাড়াটে সৈন্য সুওয়ালকি গ্যাপের দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। এই এলাকাটি বেলারুশের গ্রোডনো থেকে খুব দূরে নয়।’

আর এটিই সীমান্তের পরিস্থিতিকে ‘আরও ভয়ঙ্কর’ করে তুলেছে। দক্ষিণ পোল্যান্ডের গ্লিউইসে একটি অস্ত্র কারখানা পরিদর্শনের সময় শনিবার মোরাউইকি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন এবং এ বিষয়ে সতর্ক করেন।

পূর্ব ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সামরিক জোট ন্যাটো উভয়ের সদস্য। রাশিয়ার মিত্র বেলারুশ এবং ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পোল্যান্ড। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ায় স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহের পরে ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সৈন্যরা বেলারুশে আসার পর থেকে দেশটির এই ভয় আরও বেড়েছে।

এছাড়া পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্ত ইতোমধ্যেই কয়েক বছর ধরে উত্তেজনাপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠেছে। এর আগে বেলারুশে ওয়াগনার যোদ্ধাদের উপস্থিতি পোলিশ সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে গত মাসের শুরুতে পোল্যান্ড তার পূর্ব দিকের সীমান্তে ১ হাজারেরও বেশি সৈন্য পাঠানোর কাজ শুরু করেছিল।