আকতার হোসেন
লতায় পাতায় অনেকদিন থেকে বেড়ে উঠছে একটি বৃক্ষ। স্বনামে যে খ্যাত। একটা অসাধারণ ঘটনা হলো এই বৃক্ষের প্রতিটি পত্র কাণ্ড শিকড়ের রয়েছে পৃথক পৃথক নাম। যেমন একটি পাতার নাম ক্যাসিনো। আরো কিছু পাতার নাম; জমি দখল, নদী দখল, ডাক্তার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল, ইঞ্জিনিয়ার, বাঁশের রড, পিচ ছাড়া পথ, প্রাইভেট টিউশনি, হয়রানি, টেন্ডার, ব্যালট বাক্স, থাপ্পড়, গণপিটুনি, ডাল, বিদেশী, চা-পানি, কবুতর, চাঁদাবাজি ইত্যাদি।
এই বৃক্ষের কিছু কিছু ডালপালা এতো আঁটো যে হাত দিলে মনে হবে পর্বতের চেয়েও শক্ত। তেমনি একটি ডালের নাম হলো রাজনীতি। প্রকাণ্ড শাখা প্রশাখা বিস্তার করা আর একটি শাখার নাম প্রশাসন। অন্ধভক্ত ও গোঁড়ামি এগুলোও বিশেষ শাখা। বৃক্ষটির কিছু কিছু অংশ ধরুন পত্র কিংবা কাণ্ড এমন ভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে যেন তাদের গাঁয়ে কেউ আঁচড় কাটতে না পারে। আবার কিছু অংশ থাকে আড়ালে আবডালে। বৃক্ষটির কিছু অংশ সবুজ, মানে নতুন জন্ম নিয়ে প্রকাশিত হওয়া শুরু করেছে তেমন কিছু অংশ রয়েছে। আবার এদের মধ্যেই বেঁচে আছে প্রাগৈতিহাসিক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ডালপালা। গণ্ডারের চামড়া ও সাপের চামড়া সাদৃশ্য অংশও আছে। গণ্ডার এই জন্য যে কোন কিছুতেই এদের কিছু আসে যায় না। আর সাপের চামড়া মানে হলো এরা খোলস বদলাতে ওস্তাদ।
নামে যখন বৃক্ষ তখন তো কিছু ছায়া দেবে সে। এই বৃক্ষ দান খায়রাত করে অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সেবা করেছে। মা-বাবার নামে স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। প্রয়োজনে আবার সেই স্কুল কলেজের বাছা বাছা শক্তিমান ছেলেদের দিয়ে জ্যৈষ্ঠের লাঠি বানিয়ে অস্তিত্ব পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে। সুন্দরী হলে প্রাইভেট পড়াবে অতঃপর সুযোগ বুঝে ভিডিও করবে।
আলোচিত বৃক্ষের মূল কাণ্ডটা বর্ণহীন। দেখে বোঝার উপায় নেই কতটা নতুন বা কতটা পুরাতন। কেউ কেউ বলে ধূসর শ্যাওলাটে। অনেকে আবার হাত দিয়ে দেখতে চায় কী করে এতটা বৃদ্ধি পেল, কী করে সহ্য করে এতোটা চাপ, কেনই বা এতো পিচ্ছিল সে। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে আসে বৃক্ষের টানে। ভাল লেগে গেলে তারা আস্তানা গড়ে বৃক্ষের নিচে। সুদিনের অপেক্ষায় ওরা লাল নীল হয়। আবার এমন হয় যে, সে বৃক্ষের ছায়া তলে আসে না কেউ কেউ। ভুল করে কাছে চলে গেলে ফিরে এসে বলে, বাদ দাও কাজ নেই এতে। আবারো কারো বেড়ে যায় দীর্ঘশ্বাস। হায়! যদি একটা বীজ পেতাম তাহলে বনস্পতি হতাম।
অনেকের ধারণা এটা হয়তো ঔষধি বৃক্ষ। আবার ভিন্ন মতও দেয় অনেকে। তারা যুক্তিতর্ক দিয়ে বলে, এ বৃক্ষ কাঁচের মত স্বচ্ছ। ভেঙ্গে যেতে পারে যখন তখন। বল প্রয়োগ কিংবা অনাগ্রহ ও অসমর্থন এসব দিয়েই ভেঙ্গে দেওয়া যায়। যদি বলা যায়, তুমি যতই উঁচুতে থাকনা কেন আমি নিচু ছাড়বো না। উঁচুতে উঠলে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। নিচুতেই ভাল, আঘাত পাবার কিছু নেই।
কেউ বলে এটা বিদেশী বৃক্ষ। ইংরেজ পর্তুগিজ মোঘল পাঠান সেন গুপ্ত কতজনের রক্তচক্ষু সহ্য করেছে আমাদের দেশে। তাদের কেউ হয়তো রোপণ করে গেছে এই বৃক্ষের চারা। আমরা তাতে পানি ঢেলে ঢেলে দেশজ রূপ দিয়েছি। পত্রিকা খুললে দেখা যায়, এমন বৃক্ষ নাকি পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। তবে কিছু কিছু দেশ নাকি অমন অমঙ্গল বৃক্ষ অনেক আগেই কেটে কুটে পরিষ্কার করে ফেলেছে। কথা হলো, দেশী কিংবা বিদেশী যেখান থেকেই এর জন্ম হোক, বৃক্ষটি এখন দৃশ্যমান। বটবৃক্ষ না হলেও বেড়েছে বেশ ভাল। তাল গাছের চেয়ও উঁচু হয়ে গেছে।
ভালো কথা, বৃক্ষ যখন শিকড় তো থাকবেই। মাটির নিচে থাকে বলেই হয়তো সেগুলোর নাম জানে না অনেকে। অদৃশ্য হলে হবে কী, শিকড় ছাড়া কী বৃক্ষ জীবিত থাকতে পারে। নাম জানুক কিংবা নাই বা জানুক, যখন ঝামেলা করতে শুরু করেছে এবং দৃশ্যপটও বদলে দিচ্ছে এবং যার কারণে বদলে যাচ্ছে সমাজের চেহারা, দুষিত হচ্ছে আলো বাতাস সহ পাকস্থলী। অনেকের সাথে সরকার বাহাদুরও বলছেন এসো একে কেটে ফেলি। তবে, শুধু পত্র ছাটা হবে নাকী কাণ্ডে দেবে কোপ? তর্কটা এখানেই। কেউ বলে শিকড় থেকে না উপড়ানো গেলে সব চেষ্টা বৃথা হবে। কিছু কিছু বৃক্ষ রাক্ষসের মত, যত কাটে ততোই বেড়ে যায়।
আর কথা নয়, সেই কখন থেকে বৃক্ষ বৃক্ষ বলে যাচ্ছি। নামটা বলে দেয়া দরকার। আজকাল ছাদ কৃষি উঠান কৃষি আরো কত রকম কৃষি যে চালু হয়েছে বলে শেষ করা যাবে না। কাজেই দেখা গেল হয়তো আমাদের অনেকের ঘরে বা তাদের আশপাশেই রয়েছে এই বৃক্ষ। হয়তো মনের অজান্তে কারোর টবে বড় হচ্ছে এর ডালপালা। জী, আমি এবার বলছি সেই বৃক্ষের নাম। তার আগে অনুরোধ করবো কেউ যেন দুধ কলা দিয়ে কিংবা ঘি ঢেলে তাকে আর বাড়িয়ে না তোলেন। তাহলে কিন্তু আপনাকেও বলা হতে পারে বৃক্ষের লতাপাতা কিংবা কলম বৃক্ষ। ইতিমধ্যেই হয়তো অনেকে আন্দাজ করে ফেলেছেন তবু বলছি বৃক্ষটির নাম, অসৎ।