ডঃ বাহারুল হক : গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ। ২০ জানুয়ারী হবে পরবর্তি অনুষ্ঠান। এট হলো মেহেদী সন্ধ্যা। গায়ে হলুদের মত বর আর কনের মেহেদী সন্ধ্যা দুই পক্ষের যৌথ আয়োজনে এক স্থানে হচ্ছে না। কনের মেহেদী সন্ধ্যা হবে কনের পিত্রালয়ে অপরদিকে বরের মেহেদী সন্ধ্যা হবে বরের পিত্রালয়ে। বরের পিত্রালয় ক্যানবেরা। আমরা ক্যানবেরার অতিথি, যাবো ক্যানবেরা। ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩ তারিখে আমরা পৌঁছে গেলাম ক্যানবেরা। ক্যানবেরায় দেশ বিদেশ (অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা, বাংলাদেশ) থেকে আগত সকল অতিথির থাকার ব্যবস্থা হোস্ট হিসেবে স্বপন (বরের পিতা) করে রেখেছে। আমি স্বপনকে বললাম- আমি কোথায় থাকবো? তার ঝটপট উত্তর- আপনি আর ভাবী থাকবেন সেনা ভবনে। আমি চমকে উঠে বললাম- সেনা ভবন? এখানে সেনা ভবন কোথায়? স্বপন বললো রাজনের বাসা। রাজন তার খালাতো ভাই, সবার খুব প্রিয় একজন মানুষ। রাজন দেশে ছিল সেনা বাহিনিতে। ভাল লাগছে না বলে রাজন মেজর থাকা অবস্থায় চাকুরি থেকে স্বেচ্ছা অবসরে চলে যায়। চলে আসে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়াতে নতুন উদ্যমে পড়ালেখা শুরু করে। এ এন ইউ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী পিএইচডিও অর্জন করে। তারপর শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ক্যানবেরার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এভাবে রাজন হয়ে গেল ক্যানবেরার এক সুধী জন। রাজনের চমৎকার একটা বাড়ী আছে ক্যানবেরায়। সেটাই স্বপনদের মত কাজিনদের কাছে সেনা ভবন। ক্যানবেরায় স্বপনের অনেক আত্মিয়। তাদের একে অন্যের সাথে সম্পর্কও ভারি চমৎকার। মজা করা এদের সকলের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট। সেজন্য রাজনের বাসা হয়েছে তাদের কাছে সেনা ভবন। আমরা ১৫ থেকে ২০ জানুয়ারী পর্যন্ত ক্যানবেরা ছিলাম। এই ক’দিন ক্যানবেরা যেন ছিল এক আনন্দ পুরি। সবাই ক্যানবেরা। আমাদের কাজ ছিল সবাই মিলে দিন ভর ঘুরে বেড়ানো আর রাতে দাওয়াত খাওয়া। প্রতি রাতে দাওয়াত। আমি ছিলাম রাজনের বাসায়। রাজন শুধু সবার ছোট ভাই নয় সে অতি ভদ্র এবং খুব অতিথি পরায়ন একজন মানুষ। আমরা দুই জন ক্যানবেরায় তার অতিথি হয়ে তার নয় শুধু তার স্ত্রী কন্যাদের যে ভালোবাসা আন্তরিকতা যত্ন পেয়েছি তা বর্ণনা করার ভাষা নেই আমার।
তাদের কাউকে আমি কোন দিন ভুলবো না। এক এক করে দিন যেতে যেতে এসে গেল ২০ তারিখ। জানুয়ারীর ২০তম দিন হলো জারিফের মেহেদী সন্ধার দিন। অতিথিরা জমায়েত হতে লাগলো স্বপনের বাসায়। জামাতা নাবিলের প্রবল আগ্রহে উদ্যোগে স্বপনের বাসায় বিবাহের আল্পনা আঁকা হলো। রঙে, রঙে ঘর ভরে গেল। অতিথিরা এ রুম সে রুমে গ্রুপ করে আড্ডায় মেতে থাকলো। এতদিন পর মনে হলো স্বপনের বাড়িটা একটা বিয়ে বাড়ি। সবার মনে আনন্দ, সবাই সবাইকে পেয়ে আনন্দিত। তামান্না তার মন প্রাণ দিয়ে চেস্টা করছে মেহমানদের ইচ্ছা আকাঙ্খা পুরন করতে। সবাই এসেছে বলে সে যে খুব আনন্দিত তা বার বার হাসি মুখে প্রকাশ করছে। শেষ বিকালে পরিবেশ একেবারে অন্যরকম হয়ে গেল। একটা বড় রুমে সবাই একত্রিত হলো। বরের হাতে মেহেদী লাগানো শুরু হলো। মেহেদীর অভাব নাই। ফলে যার ইচ্ছা সে নিয়ে নিজের হাতে লাগাচ্ছে। আবার কেউ কেউ অন্যের হাতে লাগিয়ে দিচ্ছে। বড় সুন্দর লাগছে। সবার মুখে হাসি। নানা রকমের রঙ-ঢং-মজার কথা বলছে, শুনছে, হাসছে। টিএনটি-র সাবেক চেয়ারম্যান এবং আগত অতিথিদের মধ্যে বয়সে সবার বড় স্বপনের খালাত ভাই মুনীর ভাই এসেছেন ঢাকা থেকে। তিনি খুব আমুদে স্বভাবের মানুষ। তিনি নানা হাসির কথা বলে পরিবেশ মচ মচে রাখেন সব সময়। আমেরিকার ডালাস থেকে আমার ছোট ভাই মানিক এসেছে অস্ট্রেলিয়া। সিডনি থেকে সেও যোগ দিয়েছে এই মেহেদি অনুষ্ঠানে। মুনির ভাই হঠাৎ বললেন- বাহার, তুমি সিডনিতে কোথায় উঠেছ? আমি আমার স্ত্রীকে দেখিয়ে বললাম- ওর বোনের বাসায়। মুনীর ভাই এবার মানিকের দিকে তাকালেন এবং মানিককে জিজ্ঞাসা করলেন- মানিক, তুমি কোথায় উঠেছ? মানিক তার স্ত্রীকে দেখিয়ে বললো- ওর বোনের বাসায়। মুনীর হাসি মুখে চোখ কপালে তুলে বললেন- বাহ, তোমরা দুই ভাইতো দেখি খুব চালাক। বেশ প্ল্যান করে বিয়ে করেছ। আমি-ই না দেখছি একটা বোকা। মুনীর ভাইর কথায় সব আড্ডাবাজরা একসাথে হেসে উঠলো। তারপর আরো গল্প; একথা সেকথা নানান কথা। এবার হঠাৎ দেখি মুনীর ভাই আমাকে দাদাভাই ডাকা শুরু করলেন; বাহার নাম ধরে আর ডাকেন না। আসলে আমার কাজিনদের মধ্যে বয়সে সবার বড় আমি। আমাকে সবাই দাদাভাই ডাকে। ওদের স্ত্রীদের কাছেও আমি দাদাভাই। ফলে মুনীর ভাই ছাড়া আর কেউ আমাকে নাম ধরে ডাকছে না। সেই মুনীর ভাই ও দাদাভাই বলা শুরু করে দিলেন। একজন বললো- আপনি দাদাভাইকে দাদাভাই ডাকেন কেন? দাদাভাইতো আপনার ছোট। মুনীর ভাইর উত্তর হলো- ডাকি। খেয়াল করলাম আমি ছাড়া অর কেউ তাকে নাম ধরে ডাকছে না। ভাবলাম আমি-ই বা আর বাদ যাই কেন! ওকে নাম ধরে ডেকে খামাখা বুঝাতে কেন যাব যে আমি আরও বেশি বয়স্ক। ওকে দাদাভাই ডাকলে লাভ হলো এই যে সবাই ভাববে- না, মুনীরের বয়স বেশি হবে না; দেখ না সে দাদাভাই থেকেও ছোট বয়সে। আবারও হাসির রোল। হাসি আনন্দ। সবশেষে শুরু হলো দীর্ঘ প্রতিক্ষিত সেই গান বাজনা। মেলবোর্ণ থেকে এসেছে জারিফের ফুফু আলো। এক সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আলো ঢাকায়ও ছিল টেলিভিষণ বেতারের নন্দিত সঙ্গীত শিল্পী। তারপর পাড়ি জমালো সে অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্ণ-এর খ্যাতনামা ইউনিভার্সিটি আর এম আইটি ইউনিভার্সিটির সুযোগ্যা প্রফেসর এখন আলো।
এখনও সে গান করে; তার গানের এলবাম বের হয়। গানের জন্য এখন তার নিজের শহর মেলবোর্ণেও সে সুপরিচিতা। তার স্বামী ওমরও গান গায় যদিও সে পেশায় একজন প্রকৌশলী। আলোর মত একজন স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী আজ গান গাইবে আর আমরা সামনে বসে শুনবো এর চেয়ে আনন্দের খবর আজ আর কি আছে! সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। মেহেদী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি নাই, সবাই উন্মুখ হয়ে বসে আছে আলোর কন্ঠে গানের যাদু দেখার জন্য। একটার পর একটা গান হচ্ছে; বেশির ভাগ গান আলো ও ওমর যুগল কন্ঠে পরিবেশন করেছে। গানের মেলা শেষ হবে তখন আমার অনুরোধে আলো গাইলো আমার প্রিয় গান-
“আমার স্বপন কিনতে পারে এমন আমীর কই?
আমার জল ছবিতে রঙ মিলাবে এমন আবীর কই”।
আলোর কন্ঠে এ গান শুনলে আমার মনে হয় জটিলেশ্বর মুখপাধ্যায় বুঝি এই গান লিখেছিলেন আলো গাইবে বলে। ওমরের কন্ঠে গান আমি আগে কখনো শুনিনি। আজ তার গান শুনে মনে হলো সঙ্গীতকেও পেশা হিসেবে গ্রহন করলেও ওমর ভালো করতো। তার গলায় ধার আছে। বুকের মধ্যে আলোর মত সেও সঙ্গীতের শুদ্ধ গ্রামার ধারন করে। জটিলেশ্বর পর্যন্ত ছিল সত্যিকার অর্থে গান বলতে যা বুঝায় সে ধরনের গান। তারপর শুরু হলো যা তা এক কথায় বলতে গেলে যেমন খুশি তেমন গাও ধরনের গান। সে সব গানের কয়েকটি ছিল আবার ইংরেজী ভাষায়। আরেকটা কথা যেমন খুশি তেমন গাও পর্বের সবাই ছিল আমাদের পরের জেনারেশনের বাচ্চারা। ওরা সব কাজিন মিলে গেয়েছে, হেসেছে, এনজয় করেছে। ইতোমধ্যে তামান্না আর তার সাথিরা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন রাতের খাবার পরিবেশনের। টেবিলের উপর রাখা আছে পোলাউ, জালি কাবাব, মুরগী রোস্ট, বিফ রেজালা। সাথে ডেসার্ট বা ‘সুইট স্টাফ’ ছিল অনেক যেমন,পায়েস, সন্দেশ। সাধারণ সন্দেশের সাথে ছিল মাছ আকৃতির চোখকাড়া একটি বড় সন্দেশ। হালুয়া ছিল দুই রকম- গাজর হালুয়া আর বুটের হালুয়া। টেবিলে আরো রাখা ছিল মেহেদী সন্ধ্যা উপলক্ষ্যে তৈরি একটা মেহেদী সন্ধা কেক। ছোটদের জন্য টেবিলের উপর রাখা ছিল পিজ্জা। আর যারা ডাল- ভাতে অভ্যস্ত্য তাদের জন্য টেবিলের উপর ছিল মাছ-মাংস-ভাজি।
স্বপনের বাড়িতে মেহেদী সন্ধায় যোগদান করে সবাই তাদের মনকে অন্য রকম এক মাত্রায় চন মনে করে তুলতে পেরেছে। আর এর কারণ হলো যারা অংশগ্রহন করেছে এই মধু সন্ধায় সবাই আমরা আমরা, আপন জন, আত্মিয়-স্বজন; বাহিরের কেউ বা কনে পক্ষের কেউ নাই বলে সবাই কথা বলেছে নিঃসংকোচে, ইচ্ছে মত। কথা গোলা হিসেবে বের হচ্ছে নাকি ফুলের কুঁড়ি হিসেবে বের হচ্ছে সে কথা কারো ভাবার দরকার নাই। কথা বলো; যা ইচ্ছা তাই বলো, এই ছিল ক্যানবেরায় বরের পিত্রালয়ের পরিবেশ। হঠাৎ রোদ উঠলে বৃস্টিতে ভেজা পরিবেশ যেমন বদলে যায় তেমনি হঠাৎ অনুষ্ঠানের পরিবেশ বদলে গেল। সবার দৃস্টি খাবার টেবিলের উপর। নানা রকমের আইটেমের উপর সবার চোখ নড়া চড়া করছে। কে কিভাবে কোনটা নিয়ে শুরু করবে ভাবছে। বেশি দেরি হলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল সবার হাতে খানা ভর্তি প্লেট। গল্প করছে, খাচ্ছে। আমি আর কি খাবো! আমি থাকলাম ডাল ভাতের মধ্যে; আমি খেলাম প্লেইন রাইচ, মাংস, মাছ, আর ভাজি। সবই তামান্না বাসায় তৈরী করেছে। ব্লাড সুগার বেড়ে যাবে এই ভয়ে চোখে আমার নেশা লাগলেও জিহ্বার লাগাম অনেক কষ্ট করে টেনে ধরে রেখেছিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ। বাচ্চারা, জওয়ানরা, বয়স্করা সবাই খানা খেয়ে বেশ পরিতৃপ্ত। মেহেদী সন্ধা সাঙ্গ হলো। এবার রাত্রি যাপনের জন্য যে যার গৃহে ফিরে যাবে।
স্বপনের বাড়ির সামনে মেহমানদের গাড়ির সংখ্যা ক্রমশঃ কমতে লাগলো। সব শেষে আমাকে নিয়ে বিয়ে বাড়ি ছাড়লো রাজন। কারণ আমার রাত্রি যাপন সেনা ভবনে। রাত পোহালেই ২১ তারিখ আর ২১ জানুয়ারী হলো জারিফ ফারাহর বিবাহ এবং বিবাহোত্তর সংবর্ধনা/অভিনন্দন/ আপ্যায়ন অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান হবে সিডনিতে। ২১ জানুয়ারী অনুষ্ঠানের জন্য ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছে মিরামেয়ার গার্ডেনস। এটি সিডনি শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে একটু দুরে টেরী হিলস এলাকায় অবস্থিত। গাড়ি চালিয়া গেলে শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে মিরামেয়ার গার্ডেনস পৌঁছতে সময় লাগবে অর্ধ ঘন্টার মত। যেহেতু অনুষ্ঠান সিডনিতে এবং বরযাত্রীদের অনেকেই যাবেন ক্যানবেরা থেকে তাই তারা যেন মিরামেয়ার গার্ডেনসএ পৌঁছার আগে রেস্ট নেয়ার, ড্রেস-আপ, মেক-আপ করার সুযোগ পায় সে লক্ষে বরের পিতা মিরামেয়ার গার্ডেনস এর কাছে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে রেখেছেন। সে বাড়িতে মেহমানদের দুপুরের খাওয়ার বন্দোবস্ত ও করে রেখেছে বরের পিতা। মিরামেয়ার গার্ডেনসএ অনুষ্ঠানের দুইটি পর্ব। প্রথম পর্ব শুরু হবে বিকাল চারটায়। এ পর্বে হবে ইসলামিক নিয়ম রীতি অনুসরণ করে জারিফ আর ফারাহ- র শুভ বিবাহ। এ পর্ব সমাপ্ত হলে সন্ধা ৬ টায় শুরু হবে ২য় পর্ব। এ পর্বে থাকছে প্রথমে বর কনে সম্বর্ধনা ও অভিনন্দন। সে অংশ শেষ হলে অতিথি আপ্যায়ন। রাত পোহালে ২১ জানুয়ারী। আমার কোন গাড়ি নাই। কারো সাথে আমাদেরকে যেতে হবে সিডনি। মিতু সিদ্ধান্ত নিল আমাদেরকে সে তার গাড়িতে করে সিডনি নিয়ে যাবে। আমি আর আমার স্ত্রী একান্তে কথা বললাম। সিডনি থেকে মিরামেয়ার গার্ডেনসে নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আমার স্ত্রীর ছোট বোন (নীপা), ভগ্নিপতি এবং বোনের ছেলেও যাবে। আমার স্ত্রী বললো তারা পরে যাবে এবং তারা অনুষ্ঠানের ২য় অংশে যোগদান করবে। অর্থাত সন্ধা ৬টা থেকে যে অভিনন্দন, সংবর্ধনা, আপ্যায়ন পর্ব তাতে যোগদান করবে। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ১ম পর্ব যে পর্বে জারিফ ফারাহ- এর শুভ পবিত্র বিবাহ কার্য সম্পাদন হবে সেই পর্বে উপস্থিত থাকবো। সে পর্বে মিতুরাও উপস্থিত থাকবে। অতএব সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে আমি মিতুদের সাথে মিরামেয়ার গার্ডেনস চলে যাব; আমার স্ত্রী নীপার বাসায় যাবে। সে ২য় পর্বে অংশগ্রহণ করার জন্য তার বোন, সাজ্জাদ আর তাদের পুত্র নাজিবকে নিয়ে পরে যাবে। আলো ভরা গ্রীষ্মের লম্বা দিন। রাস্তায় কেন যেন যানবাহনও কম ছিল। পরিস্কার জাঁ চকচকে রাস্তা যেন বিমান অবতরন ও উড্ডয়ন উপযোগী রানওয়ে। ফলে স্বল্পতম সময়ে আমরা পৌঁছে গেলাম সিডনি। সিডনি ক্যানবেরা রাস্তায় গাড়িতে বসে আমি ভাবতেছিলাম রাস্তা এত সুন্দর করে রাখে কিভাবে! কি যাদু আছে এতে! আমি কানাডার বিশেষ করে অন্টারিওর রাস্তার কথা ভাবতেছিলাম। আমার মনে হলো অন্টারিওর রাস্তার দুরাবস্থার জন্য অন্টারিওর জল হাওয়া দায়ী। মনে হয় বরফ দায়ী। শীতকালে অন্টারিওতে রাস্তা উপর্যুপরি বরফে ঢাকা পড়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার রাস্তার সাথে সে রকম বরফের কোন পরিচয় নাই। অবশ্য নির্মানের, তত্ত¡াবধানের তরিকাও অস্ট্রেলিয়ায় হয়তো ভিন্ন। আমি জানিনা কি সে সব কৌশল।
আমি সড়ক প্রকৌশলী নই। রাস্তার দুরাবস্থা চালকের মনেও বিরুপ প্রভাব ফেলে। মনের মধ্যে একটা বিরক্তিভাবের উদয় হবে। এখানে গাড়ি নিয়ে যেই চালক রাস্তায় নামেন তখনই মনের মধ্যে একটা ফুরফুরে ভাবের উদয় ঘটে। এই সুন্দর রাস্তা ধরে মিতুর গাড়ি চললো তিন ঘন্টা পঁচিশ মিনিট; পাড়ি দিল প্রায় ২৫০ কিঃমিঃ পথ। গাড়ি শহরে প্রবেশ করলো। এবার গতি কমিয়ে চলতে থাকলো গাড়ি ব্যাংকস টাউন এলাকার দিকে। সেখানে থাকে আমার শালিকা নীপা। ধীরে ধীরে এঁকে বেঁকে নানা পথ অতিক্রম করে গাড়ি পৌঁছে গেল নীপার বাসায়। আমার স্ত্রী নেমে গেল। আমাকে নিয়ে মিতুর গাড়ি ছুটলো টেরী হিলসের দিকে। গাড়ি চালাচ্ছে হান্নান, মিতুর গুণধর স্বামী, যার গুণ কীর্তণ করে শেষ করা যাবে না।
বিশ মিনিটে আমরা পৌঁছে গেলাম সেই ভাড়া বাড়িতে যে বাড়ির কথা আগেই উল্লেখ করেছি। এই বাড়ি মিরামেয়ার গার্ডেনসের কাছেই। মিরামেয়ার গার্ডেনস টেরী হিলস এলাকায়। গাড়িতে চড়ার আনন্দ থাকলেও একটা ক্লান্তি ভর করেছে সবার শরীরে। এখন এই বাড়িতে ক্ষাণিক বিশ্রাম নিয়ে এ ক্লান্তি দুর করতে হবে এবং তাই করেছি আমরা সবাই। আমরা হাত-পা ধুয়ে ফ্রেস হয়েছি; দুপুরের খাবার খেয়েছি; জোহরের নামাজ পড়েছি; বিশ্রাম নিয়েছি। তারপর বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দানের জন্য নতুন পোশাক পরে গাড়ি নিয়ে টেরী হিলসের পথে নেমেছি। (চলবে)