ডেস্ক রিপোর্ট : কানাডা সরকার বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের নামে বিপুলসংখ্যক ওপেন ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু করছে। যাদের ভিসাসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক পাওয়া যাচ্ছে তাদের সর্বোচ্চ দুই কর্মদিবসের মধ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর থেকে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে।
বিএমইটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে কেউ কানাডা থেকে ভিসা সংগ্রহ করতে পারলে প্রতি মাসে লাখ টাকার ওপরে বেতনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। শুধু কানাডা নয়, সা¤প্রতিক সময়ে ইউরোপের দেশগুলো থেকে স্টুডেন্ট ভিসার পাশাপাশি ওয়ার্ক ভিসায় বিদেশী শ্রমিকদের যাওয়ার হার দিন দিন বাড়ছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, লেবানন, জর্দান, কুয়েত ছাড়াও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের শ্রমিক যাওয়ার পাশাপাশি সা¤প্রতিক সময়ে কানাডা, ইউকে, নিউজিল্যান্ড, উজবেকিস্তান, ফিজি, নেটারল্যান্ডস, পাপুয়ানিউগিনি, মাল্টা, ফ্রান্স, ইতালি, দক্ষিণ সুদান, বসনিয়া হারজেগোবিনিয়া, সামওয়া, পোল্যান্ডসহ ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশী শ্রমিক যাচ্ছে।
এসব দেশ থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের নামে স্টুডেন্ট ভিসার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক ওয়ার্ক ভিসাও আসছে। এসব ভিসা কেউ বিএমইটির ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে আবার কেউ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্য পাড়ি জমাচ্ছেন। জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এসব দেশে প্রতি মাসে শতাধিক বাংলাদেশী শ্রমিক বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে দেশ ছাড়ছেন। বিশেষ করে কানাডায় যাওয়ার সাথে সাথে তাদের মিলছে চাকরি।
গত ১১ মে, বৃহস্পতিবার বিকেলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে পরিচালকের (বহির্গমন) দফতরের বাইরে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধিদের জটলা দেখা যায়। আলাপ করে জানা গেছে তারা প্রত্যেকে তাদের বিদেশগামী কর্মীদের ফাইলে বহির্গমন স্বাক্ষর করানোর জন্য অপেক্ষা করছেন। কোনো কারণে ছাড়পত্র নিতে না পারলে ওই যাত্রীদের নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এমনটি জানিয়েছেন এজেন্সির প্রতিনিধিরা।
ভেতরে দেখা গেছে বিদেশগামী শ্রমিকদের ফাইলের স্তূপ। পরিচালক বহির্গমন আগতদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন আর একের পর এক ফাইলে স্বাক্ষর করে চলেছেন। একটি ফাইলে দেখা যায়, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, দেশের নাম কানাডা/ইউকে (মহিলা)। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সংক্রান্ত নথি। শাখা বহির্গমন। পরিচালক যাচাই-বাছাই করে মুহূর্তে কানাডাগামী ফাইলে স্বাক্ষর করে দেন। সই হওয়ায় কর্মীরাও খুশি। আবার কোনো ফাইলে সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে পরিচালক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে নিচ্ছেন। এ সময় শৃঙ্খলা রক্ষায় পরিচালকের নির্দেশে এজেন্সির একজন আবার কখনো দুইজন করে প্রতিনিধি ফাইল সই করানোর জন্য তার রুমে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন। কানাডাগামী ফাইল সই করা প্রসঙ্গে পরিচালক (বহির্গমন) মোহাম্মদ আব্দুল হাই (পিএএ) বলেন, বিদেশ যাওয়ার গতি অনেক বেড়েছে।
প্রতিদিন কয়েক হাজার কর্মীকে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ইউরোপ হচ্ছে আমাদের নতুন শ্রমবাজার। ইদানীং কানাডা, ইউকে ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে অনেক ভিসা আসছে। তিনি বলেন, ২০২৩ সাল থেকে কানাডা সরকার ওপেন ওয়ার্ক ভিসা দেয়া শুরু করেছে। এই ভিসায় বাংলদেশীরা যাচ্ছে। এসব ভিসায় যাওয়ার সাথে সাথেই কর্মীরা কাজ পাচ্ছেন। বেতন এক-দুই লাখ টাকা। আর আইটি সেক্টরের হলে বেতন ১০ লাখ টাকাও পাচ্ছেন।
এসব ভিসা ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করে অনলাইনে আমাদের এখানে আসছেন। যারা বহির্গমন ছাড়পত্রের (মহিলা/পুরুষ) জন্য আমাদের কাছে আবেদন করছেন তাদের ভিসাসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই দিনের মধ্যে বহির্গমন ছাড়পত্র দিয়ে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রতি মাসে এ প্রক্রিয়ায় গড়ে ব্যুরো থেকে ১০০ এর বেশি কর্মী কানাডাসহ ইউরোপের দেশগুলোতে বৈধভাবে যাচ্ছে। একজন কর্মীর যেতে কী ধরনের টাকা খরচ হচ্ছে সে বিষয়ে আব্দুল হাই বলেন, এটা কারা কিভাবে সংগ্রহ করছে, কত টাকায় যাচ্ছে তা তো আর আমাদের কাছে এসে কেউ বলবে না। আমরা শুধু দেখি ভিসা ঠিক আছে কিনা।
কী ধরনের ভিসাধারীদের আবেদন পাচ্ছেন জানতে চাইলে পরিচালক এম এ হাই বলেন, স্কিল, সেমি স্কিল ও প্রফেশনাল ভিসা। তিনি আরও বলেন, এখন প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার বিদেশগামীকে বহির্গমন ছাড়পত্র দিচ্ছি। চার মাসে (জানু-এপ্রিল) গড়ে প্রতি মাসে এক লাখ করে কর্মী বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে ঈদ ও ঈদের ছুটির কারণে এপ্রিল মাসে কর্মী যাওয়ার হার কিছুটা কমে যায়। মে মাসে বিদেশগামীর সংখ্যা আবারো বাড়ছে।