অনলাইন ডেস্ক : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের পক্ষ থেকে যে সাত দফা সুপারিশ করেছেন, সরকার করোনায় সৃষ্ট সংকট উত্তরণে তার চেয়ে অনেক বেশি সুসমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বরং বিএনপিই এই সংকটময় মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। তিনি বলেন, ‘নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সমালোচনার নামে সরকারের সমালোচনাই বিএনপির একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিএনপি ঘোষিত করোনা মোকাবিলায় সাত দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (১৪ জুন) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুপারিশের নামে সরকারের বিরুদ্ধাচার করার যে অপচেষ্টা করেছেন, তার যৌক্তিক কোনও ভিত্তি নেই বরং তা উসকানিমূলক। তার মন্তব্য সর্বৈব মিথ্যা, বাস্তবতা বিবর্জিত।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় প্রত্যেকটি পর্যায় বিচার-বিশ্লেষণ করে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দক্ষতায় করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করে চলেছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার নির্দিষ্ট কোনও দফায় সীমাবদ্ধ না থেকে সবরকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলেছে। বরং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার দল বিএনপি এই সংকটময় মুহূর্তে জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে রাজনীতিতে যে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, তা জাতীয় মেমোরিতে দীর্ঘদিন ক্ষতের চিহ্ন বহন করবে।’
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সাধারণ ছুটির শুরু থেকেই পেশাদার বেসামরিক প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সম্মুখ যোদ্ধাদের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। এই সম্মুখ যোদ্ধাদের পাশাপাশি বিএনপির নেতাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সুরক্ষা সামগ্রীর প্রয়োজন পড়লে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে তা প্রদান করা হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলামের উত্থাপিত দাবির অনেক আগে থেকেই সরকার সারাদেশে করোনা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণের কাজ করে চলেছে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটে এর জন্য আলাদা বরাদ্দও রাখা হয়েছে। করোনার বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক খাতগুলোর জন্য ১৯টি প্যাকেজের মাধ্যমে এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে রেশন কার্ডের আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা আরও ৫০ লাখ বৃদ্ধি করে এক কোটিতে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর বাইরে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে প্রান্তিক-গরিব-অসহায়-দুস্থ মানুষের কল্যাণে এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতেও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারি ত্রাণ ও অর্থ বিতরণে অনিয়মে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ দলীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু ত্রাণ ও অর্থ বিতরণের অনিয়মে জড়িত বিএনপির জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিএনপির পক্ষ থেকে সাংগঠনিক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ পরিলক্ষিত হয়নি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের ইঙ্গিতপূর্ণ অভিযোগ উত্থাপনের চেষ্টা করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার কখনও তথ্য গোপনের রাজনীতি করে না।’
তথ্য গোপন নয় বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে জনসচেতনতা তৈরিতে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে সব তথ্য ও স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা জনগণের সামনে তুলে ধরা হয় বলে দাবি করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রয়াস ও জনগণের সচেতনতার দুর্গই ছিল এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের মূল অস্ত্র। পরম করুণাময় আমাদের সহায় হোন।’