অনলাইন ডেস্ক : ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ১৫ মাস উদ্বাস্তু থেকে অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন খালেদ ইব্রাহিম (৫২)। কিন্তু ফিরে দেখেন, তাঁর বাড়ির কোনো অস্তিত্বই নেই। খালেদের কথায়, ‘আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। জীবন কঠিন হয়ে উঠেছে। আমাদের যা কিছু ছিল, সবই হারিয়েছি। এখন বাড়ি ফিরে নিজের ঘরই চিনতে পারছি না।’
খালেদ ইব্রাহিমের মতো অবস্থা গাজার অন্য বাসিন্দাদেরও। যুদ্ধবিরতির পর উদ্বাস্তু লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ফিরে দেখছেন, সবই ধ্বংসযজ্ঞ। খালেদের মতো দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তর গাজায় ফিরেছেন সাইফ আলদিন। তিনি বলেন, ‘বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি, কিন্তু বাড়ি বলতে তো আর কিছুই নেই। কোনোমতে একটা কম্বল জোগাড় করে বাচ্চাদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকছি।’
ইসরায়েলের ১৫ মাসের নির্বিচার হামলায় গাজার ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এরপর নিজেদের ঠিকানায় ফিরতে শুরু করেন উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা। গাজার মিডিয়া অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পর গত তিন দিনে দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তরে ফিরেছেন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ায় বাড়ি ফিরেও তাঁদের দুর্দশা এখনো কাটেনি।
এরপরও উদ্বাস্তু এসব মানুষ বলছেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরে তাঁরা খুশি। দক্ষিণ গাজা থেকে বাড়িফেরা উত্তর গাজার এমনই এক বাসিন্দা ওলা সালেহ বলেন, ‘এটা আমাদের জন্মস্থান। আমাদের সবাইকে তো এখানে ফিরতেই হবে।’
যুদ্ধবিরতির পর হেঁটে হেঁটে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে গাজা শহরে ফিরেছেন আবু আথারা। কিন্তু বাড়ি ফিরলেও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। আবু আথারা বলেন, ‘আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরেছি। এসে দেখি, বাড়ি বলতে কিছুই নেই। খাওয়ার জন্য পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। বেশির ভাগ বাড়ি ধসে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সব।’
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, ডিসেম্বরে গাজায় তারা যে পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করেছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম চার দিনেই তার চেয়ে বেশি ত্রাণ দিয়েছে, কিন্তু চাহিদা আরও অনেক বেশি।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সংস্থা (ওসিএইচএ) বলছে, উত্তর গাজায় যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের জন্য জরুরি ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন। বিশেষ করে সুপেয় পানি ও অস্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করা এখন বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে।