অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে ৭৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চায় নেপাল । অন্যদিকে ৪২টি পণ্যের একই রকম সুবিধা চায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের জয়েন্ট সেক্রেটারি পর্যায়ের বাণিজ্যিক আলোচনা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। সেখানে এসব দাবি জানানো হয়েছে।
ভার্চুয়াল এই বৈঠকের প্রথম দিনে অগ্রাধিকার বাণিজ্যিক চুক্তির (প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট) খসড়া ও প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেপালের শিল্প, বাণিজ্য ও সরবরাহ বিষয়ক জয়েন্ট সেক্রেটারি প্রকাশ দাহাল। বৃহস্পতিবার সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর একটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক বাণিজ্যিক চুক্তিতে উপনীত হওয়া ও তা স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।
এ নিয়ে প্রকাশ দাহাল বলেন, নেপাল থেকে যেসব পণ্যের তালিকা দেয়া হয়েছে, সেগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়াই হলো আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তিনি আরো বলেছেন, কাস্টমস চার্জ ছাড়াও নেপালি পণ্যের ওপর বাংলাদেশ আরো বিশদ চার্জ ধার্য করে। এর ফলে বাংলাদেশের বাজারে সেসব পণ্যের দাম বেশি হয়।
নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেপালি ১০৮টি পণ্যকে শুল্ক মুক্ত সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ। ওগুলোর পাশাপাশি এবার চা, কফি, বড় এলাচ, ফলমুল, একাশিয়া গাছের কাঠ, পশমিনা সহ বেশ কিছু রফতানিযোগ্য পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে রফতানির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাতে চায় তারা। নেপালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, যেসব পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে রয়েছে, তা বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে।
প্রকাশ দাহাল বলেন, যে অতিরিক্ত চার্জ ধার্য করা হয় আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো তা পুরোপুরি বাতিল করা। এ নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। এ বিষয়ে বাংলাদেশ যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে একটি বাণিজ্যিক সুবিধা বিষয়ক চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা গেলে নেপালি রফতানি বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাণিজ্যিক অসমতা কিছুটা কমে আসবে। আমাদের দিক থেকে আমরা ভারতীয় পণ্যের চেয়ে বাংলাদেশি পণ্যকে বেশি সুবিধা দিতে সক্ষম হবো না।
প্রকাশ দাহাল বলেন, অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তির চুক্তির অধীনে শতকরা ১০০ ভাগ কাস্টমস ওয়েভার চাইছে বাংলাদেশ। তবে তাদের পক্ষ থেকে আমরা পণ্যের চূড়ান্ত তালিকা পাইনি। নেপাল থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করা হয়, তা অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তিতে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মসুর ডাল, কাঁচা শাকসবজি, ফলমুল, ডেইরি পণ্য, চা, কফি, আদা, এলাচ, সুতা ও অন্যান্য পণ্য। নেপালের কৃষি প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণ এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট, সল্ট ট্রেডিং করপোরেশন ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটিও এই বৈঠকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এসব চুক্তি গত বছর পঞ্চম বৈঠকে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
প্রকাশ দাহাল বলেছেন, পণ্যের মান ও তথ্য সম্পর্কে দুই দেশের মধ্যে বিনিময়ের জন্য এই চুক্তি হয়েছিল। কৃষি ক্ষেত্রেও একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে। প্রকাশ দাহাল বলেন, নেপালে অনেক পণ্য উৎপাদিত হয় যা বাংলাদেশে যাওয়া দরকার। যদিও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সমস্যাগুলোর কথা স্বীকার করেছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এজেন্ডায় এসব বিষয়ও থাকবে।
প্রকাশ দাহাল বলেন, গত বছর সৈয়দপুর থেকে নেপালের ভদ্রপুর অথবা বিরাটনগরের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু নিয়ে আলোচনা করেছিল নেপাল ও বাংলাদেশ। কর্মকর্তারা বলেছিলেন, পর্যটনকে সামনে এগিয়ে দেয়া এবং হালকা পণ্যবাহী কার্গো ফ্লাইট চালানোর প্রস্তাবে বাংলাদেশ ইতিবাচক। এ বিষয়টি আবার আলোচনা করা হবে। নেপালে ওষুধ প্রস্তুতকারকদের পণ্য রপ্তানির একটি তালিকা প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়টিও আলোচনা হবে।
প্রকাশ দাহাল বলেছেন, রোহনপুর-সিংহবাদ রেলওয়ে ট্রানজিটের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে। এ নিয়ে কিভাবে আগানো যায়, তা নিয়ে দুই পক্ষই আলোচনা করবে। এই রেল সংযোগ স্থাপিত হলে আমদানি খরচ কমে যাবে। এছাড়া অনেক নেপালি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারি পড়েন । তাদের ভিসা বার বার নবায়ন করার প্রয়োজন হয়। আলোচনায় এ ইস্যুটিও আসবে। বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের ভিসার বিষয়টি উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ। স্থলপথে যাওয়া ভ্রমণকারীদের পৌঁছামাত্র ভিসার বিধান নেই। এই বিষয়টিও আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন দাহাল।