অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে করোনার ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন
এই ছবিটি নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া হয়েছে। তারা ক্যাপশনে লিখেছে, ঢাকায় একটি করোনা ভাইরাস পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।

যার হেডলাইন দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশে বড় ব্যবসা: করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে করোনামুক্ত ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করেছে বাংলাদেশে একজন হাসপাতালের মালিক। এ ঘটনায় ছদ্মবেশে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় ওই মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বোরাক পরে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদের পালানোর চেষ্টা ও তার গ্রেফতারের কথা তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়, মোহাম্মদ সাহেদ নামের ওই ব্যক্তির দীর্ঘ অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। পালানোর চেষ্টাকালে তিনি একটি কালো বোরকা পরেছিলেন, যা তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকেছিলো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সাহেদের হাসপাতাল থেকে করোনা ভাইরাসের নকল সার্টিফিকেট বিক্রি করা হচ্ছিলো। যা হাজার হাজার ডলারে বিক্রি হয়।

অনেক অপরাধী চক্র এভাবে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের টোপ ফেলে বহু জীবন হুমকির মধ্যে ফেলছে।

ইউরোপে কাজ করতে যেতে চাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছে এই ধরণের সার্টিফিকেটের চাহিদা রয়েছে।

সম্প্রতি ইতালি এসেছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। তারা জানান, কাজে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের এই সার্টিফিকেট দেখানোর প্রয়োজন ছিলো।

বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাল কোভিড-১৯ সনদ আমাদের দেশের ভাবমূর্তির জন্য একটি বিশাল আঘাত।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কয়েক মিলিয়ন বাংলাদেশি বিদেশে কাজ করে। তারা কোটি কোটি ডলার দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখছে।

এই মহামারির সময় অনেক কর্মী বাংলাদেশে এসেছিলেন। তারা এখন বিদেশে চাকরি হারানোর পথে। তাই কাজ ফিরতে আগ্রহী ছিলেন।

তাদের পরীক্ষাগার থেকে আরো দুইজন ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর কয়েক হাজার জাল করোনা ভাইরাস সনদ বিক্রি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এদের মতো অন্যদের খুঁজে বের করতে বিশেষ বাহিনী মাঠে নেমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সংকটজনক। ১৬০ মিলিয়ন মানুষের দেশটিতে দুই লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা আক্রান্তের ঢল থাকায় এবং বাংলাদেশে তুলনামূলক কম টেস্ট হওয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, সরকারি ঘোষণার চেয়ে বাস্তবে আক্রান্তের হার অনেক বেশি।

ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরাঞ্জা জানান, বাংলাদেশ থেকে রোমে যাওয়া কমপক্ষে ৩৭ জন যাত্রীর করোনা পজিটিভ হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালি যাওয়া সব ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করেছে, সম্প্রতি ইতালি যাওয়া প্রায় ১৬০০ বাংলাদেশি ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে যাননি। তবে অনেকে সেখানে কোয়ারেন্টাইন মানেননি।

মিলানের একটি রেস্তোঁরায় কাজ করা এক বাংলাদেশি শ্রমিক তাহির হুসেন বলেন, ‘ইতালিয়ান সংবাদপত্রগুলো নিয়মিতভাবে বাংলাদেশিদের নিয়ে রিপোর্ট করে যাচ্ছে। ইতালির লোকজন আমাদের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন আমরা সবাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।’

মিলান থেকে ফোনে নিউইয়র্ক টাইমসকে এসব কথা বলছেন ওই বাংলাদেশি প্রবাসী।