অনলাইন ডেস্ক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস এবং কমিশনকে দুর্বল ও অকার্যকর করাই হচ্ছে বর্তমান কমিশনের প্রধান টার্গেট। বিদ্যমান নির্বাচনী আইনগুলোর সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ না করে কমিশন অকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইসি কারো সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই আরপিও সংশোধন করছে। ভবিষ্যতে একটি ভালো নির্বাচন কমিশন পাওয়ার পথ রুদ্ধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
আজ বৃহস্পতিবার ( ১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন এ মহামারির মধ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আইন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরপিওর অনেকগুলো মৌলিক সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ হঠকারী, অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত, অগ্রহণযোগ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি মহলবিশেষের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অপকৌশল। আমরা নির্বাচন কমিশনের এ উদ্যোগ প্রচণ্ড ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি।’
নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের হাতে কোনো কাজ নেই। তাই কমিশন অকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালে হয়েছে রাজনৈতিক দলবিহীন নির্বাচন। ২০১৮ সালে হয়েছে ভোটারবিহীন ‘নৈশ’ নির্বাচন। আর প্রস্তাবিত আরপিওর মাধ্যমে আগামীতে করতে চায় নির্বাচন কমিশনবিহীন প্রহসনের নির্বাচন।
২০১৪ সালের নির্বাচনের বিবরণ দিয়ে বিএনপির মহাসচিব জানান, রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন তখনকার নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীন কাণ্ড করার জন্য শতাধিক আসনে নিজেই একজন বাদে অন্য প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করে দেয়। সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে একাধিক প্রার্থী নেই ঘোষণা করে ভোট গ্রহণ ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়, নির্বাচনের দিনের আগেই সরকারি দল নির্বাচনে জিতেছে, তা নিশ্চিত করা হয়। এই নির্বাচনে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়।
২০১৮ সালে নূরুল হুদার নির্বাচন কমিশন আরেক ধাপ এগিয়ে তিনশ আসনেই রাতে ভোটের আয়োজন করে। বিরোধী দলগুলোর প্রার্থিতা বাতিল, প্রার্থী-কর্মী-এজেন্ট গ্রেপ্তার বা এলাকাছাড়া হওয়ার পর এ নির্বাচনে ভোটারদেরও কষ্ট করতে দেয়নি কমিশন। নির্বাচনের আগের রাতে ভোটবাক্স ভরে ফেলার ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রকৃত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় বহু কেন্দ্রে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে সৃষ্টি হয় ভোটের নতুন নতুন রেকর্ড। সারা বিশ্ব এ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে।
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, এবার নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নেয় পরবর্তী নির্বাচনটিকে নির্বাচন কমিশনবিহীন নির্বাচন করতে। এ জন্য তারা নিজেরাই কমিশনের বহু ক্ষমতাকে বাতিল করার প্রস্তাব করে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধনীর মাধ্যমে।
নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখন আর স্বাধীন নেই। তারা সরকারের হুকুম তামিলের জন্য আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কমিশন সরকার নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় সব কাজ করছে। এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলো জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রকল্প কমিশন সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব। এটা হলে ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষমতা সরকারের কাছে চলে যাবে। ফলে সরকার নিজের ইচ্ছামতো ভোটার তালিকা প্রণয়নের সুযোগ পাবে। সেই ভোটার তালিকায় প্রকৃত ভোটার নয়, সরকারি দলের পছন্দের লোকজনকে স্থান করে দেওয়া হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’