অনলাইন ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পদ্মা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জামালপুরে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জামালপুরে গত পাঁচ দিনে পানিতে ডুবে সাতজন ও সাপের কামড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নওগাঁর মান্দায় আত্রাই ও শিব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাবিত হয়েছে প্রায় ১ লাখ হেক্টর ফসলি জমি। গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রের পানিও বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদী অববাহিকায় প্লাবিত মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পানিতে ডুবে শিশু-বৃদ্ধসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে নিখোঁজ জামায়াত নেতার লাশ উদ্ধার হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- রাজবাড়ী : গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৮ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকালে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। রাজবাড়ীর তিনটি গেজ স্টেশন পয়েন্টের মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৮ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে রাজবাড়ী দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে তীব্র স্রোতের কারণে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে দৌলতদিয়া প্রান্তে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বাতাম, তিলসহ বিভিন্ন খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। জামালপুর : সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৫ সেন্টিমিটার কমে গতকাল বিকালে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেড়েছে ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদীর পানি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। যমুনার পানি ৫ সেন্টিমিটার কমলেও ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাইসহ শাখা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নতুন করে মাদারগঞ্জ উপজেলার শিধুলী ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়েছে। সবমিলিয়ে ৭ উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় সরকারি হিসাবে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৮৫ হাজার ১৯৭টি পরিবারের ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪২ জন মানুষ। পানি ওঠায় বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন স্থানীয় ও আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেইসঙ্গে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জমির ফসল। পানিবন্দী অবস্থায় দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ৬০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। গত ৫ দিনে জামালপুরে বন্যার পানিতে ডুবে ৭ জন এবং সাপের কামড়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাইবান্ধা : গত তিন দিন থেকে গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি ধীর গতিতে কমছে। তবে এখনো ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘটের পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। যে কারণে বানভাসী মানুষের বাড়ি-ঘর থেকে পানি এখনো নামতে শুরু করেনি। তাই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ২ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ১২ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র এখনো বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে বলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। অন্যদিকে করতোয়ার পানি ৬ সেন্টিমিটার কমেছে আর তিস্তার পানি স্থিতাবস্থায় থেকে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নওগাঁ : গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজানে পানি বৃদ্ধির কারণে নওগাঁর মান্দার আত্রাই ও শিব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মান্দার শিব নদীর টেংরা নামক স্থানে দুই বছর আগে ভেঙে যাওয়া স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে কয়েক লাখ হেক্টর জমির ফসল। আর ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ। এতে কয়েক হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দ্রুত যদি এই ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত না করা হয় তাহলে বন্যার পানিতে আরও অধিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায় বন্যার পানিতে নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর নজির আহমদ নামের এক জামায়াত নেতার লাশ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল সকালে সুনামগঞ্জ-ছাতক সড়কের নোয়াগাঁওয়ের ভাঙা এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন স্বজনরা। নজির আহমদ দোয়ারাবাজার উপজেলার মঙ্গলপুর-গাজিনগর গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আলীর ছেলে। তিনি পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বজনরা জানান, সোমবার (২৯ জুন) রাত ৯টার দিকে নজির আহমদ বাড়ি থেকে পার্শ¦বর্তী ইউনিয়নের ঢুলপশি গ্রামে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। এ সময় সুনামগঞ্জ-ছাতক সড়কের নোয়াগাঁওয়ের ভাঙা এলাকা উপচে প্রবল বেগে পানি নিচের দিকে পড়ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই এলাকা অতিক্রম করার সময় বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যান নজির। রাতে শ্বশুরবাড়িতে না পৌঁছালে সকালে স্বজনরা তার সন্ধানে নেমে পড়েন। দুই দিন খোঁজাখুঁজির পর নিখোঁজ হওয়ার তৃতীয় দিন নোয়াগাঁওয়ের ভাঙা এলাকার অদূরে তার লাশ ভেসে উঠতে দেখলে, সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রসঙ্গত, নিখোঁজ হওয়ার ১৫ দিন আগে ঢুলপশি গ্রামে বিয়ে করেছিলেন নজির আহমদ। দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, বন্যার পানিতে নিখোঁজ নাজির আহমদ নামের একজনের লাশ উদ্ধারের পর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। লাশ দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম : জেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও নদ-নদীর পানি অনেক কমে এসেছে দুর্ভোগ কমেনি নদ-নদীর অববাহিকায় প্লাাবিত এসব মানুষের। বন্যায় দেড় লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের কষ্ট চরমে পৌঁছেছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকট এসব এলাকায় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সেইসঙ্গে রয়েছে গোখাদ্য সংকট। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানিতে ডুবে আরও ২ শিশুসহ এ পর্যন্ত ৫ শিশু ও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, বন্যার্তদের জন্য ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবার বিতরণের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে।