(এই কবিতাটি উৎসর্গ করা হলো তাঁদেরকে, যাঁরা গত কয়েক দশক সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় হতাহত হলেন নিজের মাতৃভূমিতে, ভূমি দস্যুদের হাতে নিগৃহীত হলেন, মন্দির ভাঙার উন্মাদনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী হয়ে ব্যথিত হলেন এবং গত শারদীয়া দূর্গাপূজায় জীবন দিলেন, অপমানিত হলেন, গৃহহীন হলেন, অন্যায়ের বিচার পেলেন না আজও এই স্বাধীন বাংলাদেশের কাছে।)
স্বাধীনতা তুমি বলে যাও
স্বাধীনতা তুমি
কৃষকের বুকে সোনালী ধানের শীষের দোলা
সবুজ মাঠের স্নিগ্ধ শাদ্বল।
স্বাধীনতা তুমি
আকাশ জুড়ে রামধনুকে রাঙিয়ে নিয়ে
চৈত্র মাসের বৃষ্টি বাদল
স্বাধীনতা তুমি
পাগল করা গানের সুরে নৌকা বাওয়া
জারি সারি খনার বচন।
স্বাধীনতা তুমি
নদীর ক‚লে আকাশ নীলে ঘুড়ি উড়াই
মন উচাটন মলয় পবন।
স্বাধীনতা তুমি
বিপিন দাসের কিশোরী মেয়ের
হাতখানি ছুঁয়ে লাজুক প্রেমের প্রথম প্রকাশ
স্বাধীনতা তুমি
রাখাল বালক রহিম শেঠের বাঁশির সুরে
উদাস হাওয়ার সাঁঝের আকাশ
স্বাধীনতা তুমি
মহুয়া বনের নুতন কুঁড়ির প্রাণের মাঝে
সুপ্তি আনার উদ্দীপনা
স্বাধীনতা তুমি
ভুলে যাওয়া কত রমা চৌধুরীর
বুক ভাঙা কান্না
স্বাধীনতা তুমি
রক্তে ছোঁয়া একাত্তরের চিঠির মাঝে
মুক্তি মায়ের আনমনা, চেতনা
স্বাধীনতা তুমি
(শহীদ) নিপা লাহিড়ীর আগুনে পুড়ে
দুঃখিনী মাকে রক্ষা করার রক্ষাকবজ, মাটির কণা
স্বাধীনতা তুমি
জয়নুলের সেই দুর্ভিক্ষের চিত্রপটে
নিঃসহায়ের সহায় হওয়ার অভয়দাতা
স্বাধীনতা তুমি
অপশক্তিকে দলিত করে
উচ্চ শিরে পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিদাতা
স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের “এসো হে আর্য, এসো হে অনার্য,
হিন্দু মুসলমান”
স্বাধীনতা তুমি
বলে যাও আজি- মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নাহি
গায় যেন ওরা সাম্যের জয়গান
স্বাধীনতা তুমি
আবার এসো এই বাংলার প্রতিটা ঘরে,
নব দিগন্তের সূর্য উঠার কঠিন অঙ্গীকারে।
বনানী বাবলি
ডিসেম্বর ১০, ২০২১