সোনা কান্তি বড়ুয়া : জানা বঙ্গাব্দের অজানা ইতিহাস! আমাদের জাতীয় বিবেকের জবাবদিহিতার শক্তি মরে ধর্ম নামক বিভিন্ন ভয়-ভীতির কবলে। প্রকৃতির অপরুপ রুপ নিয়ে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও! বাংলা ক্যালেন্ডারের নববর্ষ শুরু হয়েছে এবং আজ বাংলাদেশের আনন্দধারায় বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ! ২৫৬৫ বছর পূর্বে শ্রীলংকার মহাবংশ এবং দ্বীপবংশ শীর্ষক ঐতিহাসিক গ্রন্থদ্বয়ের মতে রাজা বিজয় সিংহ বাঙালি ছিলেন। আজ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ লেখা হয় হিজরি (১৪৪১) সালকে বিকৃত করে। আমরা আরব দেশে গিয়ে আজ ১৪২৮ হিজরি সাল বলতে পারি না! পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাংলা সাহিত্য গ্রন্থ চর্যাপদে বৌদ্ধদের ২৫৬৫ বাংলা (বুদ্ধাব্দ) সাল ছিল!

প্রসঙ্গত: প্রতি বছর নববর্ষ উপলক্ষে ১৪ বা ১৫ই এপ্রিল জুড়ে থাইল্যান্ড, লাওস, বার্মা, ভারত, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিংগাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় “পানি খেলাসহ বিভিন্ন উত্সব অনুষ্ঠিত হয়। ইংরেজিতে প্রথমে ঢাকা (Dacca) বানান ভুল ছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তা শুদ্ধ (Dhaka) করা হয়েছিল। প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে মনুষ্যত্ব! হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ সকল মানব সন্তান মিলে আমাদের মানবজাতি। রাজনীতি ও ধর্ম মানবাধিকারকে ধ্বংস করা অমানবিক অপরাধ বলে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাষায়, “গোত্র দেবতা গর্তে পুরিয়া, / এশিয়া মিলাল শাক্যমুনি (গৌতমবুদ্ধ)।”

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘মুজিব চিরন্তন’ জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর (50 Years) জয় বাংলা ধ্বনিত হয় হৃদয় স্পন্দনে এবং উদ্ভাসিত বাংলাদেশ! বাংলা নববর্ষ সম্বন্ধে অনেকেই মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন করে যে, জয় বাংলার ইতিহাসে বুদ্ধমূর্তি, সম্রাট অশোক, পাল রাজত্বকাল এবং বাংলা ভাষার আদিমতম নিদর্শন চর্যাপদের না বলা ইতিহাসের অভিব্যক্তি “হে ইতিহাস কথা কও।” হিন্দুরাজনীতির ব্রাহ্মণ্যবাদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের ২৫৬৫ বাংলা সাল (বুদ্ধাব্দ)কে বাদ দিয়ে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে ইসলামিক বঙ্গাব্দের জন্মদাতা হিজরি সালকে (১৪৪১) বিকৃত করে ১৪২৮ বঙ্গাব্দ বানিয়েছিল! সম্প্রতি বাংলা নববর্ষ সম্বন্ধে বিবিধ প্রবন্ধ পড়ে আমরা জানতে পারলাম যে ১৫৫৬ খৃষ্টাব্দ থেকে মোগল সম্রাট আকবর কর্তৃক বাংলাদেশে বাংলা সন প্রচলিত হয়।

বাংলা নববর্ষ সম্বন্ধে ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ! আরবীয় সভ্যতা ও ইসলাম ধর্ম বাংলাদেশে আসার পূর্বে আমাদের ছেলে বিজয় সিংহ শ্রীলংকা জয় করে ‘সিংহল রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করার ইতিহাস উক্ত দেশের ‘মহাবংশও দ্বীপবংশ’ নামক ইতিহাসদ্বয়ে সগৌরবে বিরাজমান। আমরা কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের drama “বিজয় সিংহ” ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় শ্রীলঙ্কা বিজয়ী সর্বপ্রথম বঙ্গবীর বিজয় সিংহ সম্বন্ধে পড়েছি, যিনি ২৫৬৫ বছর পূর্বে শ্রীলংকা জয় করে “সিংহল” নামে রাজ্য শাসন করতেন! ২৫৬৫ বছর পূর্বে শ্রীলংকার মহাবংশ এবং দ্বীপবংশ শীর্ষক ঐতিহাসিক গ্রন্থদ্বয়ের মতে রাজা বিজয় সিংহ বাঙালি ছিলেন। আজ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ লেখা হয় হিজরি (১৪৪১) সালকে বিকৃত করে। আমরা আরব দেশে গিয়ে আজ ১৪২৮ হিজরি সাল বলতে পারি না। এমন ভয়ঙ্কর মিথ্যা দিয়ে বঙ্গাব্দের ইতিহাস রচিত হ’লো অথচ আমাদের জাতীয় বিবেকের জবাবদিহিতার শক্তি মরে ধর্ম নামক বিভিন্ন ভয়-ভীতির কবলে।
আজও হিন্দুরাজনীতি পূজনীয় বুদ্ধাব্দ (২৫৬৫)কে বাদ দিয়ে প্রতিদিন সকালে আকাশবাণীতে সংস্কৃত ভাষায় সংবাদ পরিবেশনের সময় শকাব্দ (১৯৪৩) ঘোষণা করা হয়! মুসলমানদের বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির বানানোর মত হিন্দুরাজনীতি ইসলামিক হিজরি (১৪৪১) সালকে ভেঙে চন্দ্র বা ইংরেজিতে সূর্য ক্যালেন্ডারের নামে হিন্দুমার্কা বঙ্গাব্দ (১৪২৮) রচনা করেছেন।

নববর্ষ উপলক্ষে সর্বপ্রথম বঙ্গবীর বিজয় সিংহ (২৫৬৫ years ago) ও বঙ্গাব্দের ইতিহাস and Buddhist lands took over by Hindu and Muslim rulers! আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস জুড়ে বাংলা ভাষা চর্চায় চর্যাপদের দান বিরাজমান সত্বে ও বঙ্গাব্দ রচনায় বৌদ্ধ সভ্যতা এবং বাংলা ভাষার জনক গৌতমবুদ্ধকে বাদ দেওয়া হল কেন? এখন ১৪২৮ বঙ্গাব্দতে কীভাবে এলো?
রাজনীতির মাফিয়া চক্রে ধর্মের মস্তক বিক্রয় এবং হিন্দুরাজনীতি ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ইতিহাস ধ্বংস করতে বঙ্গাব্দের মিথ্যা ইতিহাস রচনায় ষড়যন্ত্র করেছিল। আজও প্রত্মতাত্বিক, ভূতাত্বিক, পুরাতত্ত¡, নৃতত্ব ও ভাষাতত্বের আলোকে বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং পালরাজত্বকালে বৌদ্ধদের অবদানে চর্যাপদের বঙ্গাব্দ ছিল ২৫৬৫ বঙ্গাব্দ (১৪২৮ নয়)।
অমর্ত্য সেনের বঙ্গাব্দে হিজরি প্রসঙ্গ! নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন ঢাকার বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলার (২১ ফেব্রুয়ারি ২০১১) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসেবে তাঁর ভাষণে চর্যাপদের (৪৯ নম্বর কবিতার মিথ্যা ব্যাখ্যা করেন) বাঙালি কবি ভুসুকুপাদকে অপমানিত করেন এবং বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে ইসলামিক হিজরি (১৪৩৭) সালকে হিন্দুত্বকরণে বঙ্গাব্দের (১৪২৩) মিথ্যা ইতিহাস বর্ণনা করেন (‘সাপ্তাহিক আজকালে পৃষ্ঠা ১৩, ফেব্রুয়ারী ৪, ২০১১ (সাল, টরন্টো)’! নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন, বাংলা একাডেমীর অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসেবে “ভাষা চেতনা বাঙালির গর্বের বিষয়” শীর্ষক ভাষণে বলেন, “অনেকেই মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন করে যে ১৪০০ সাল হলো কী ভাবে। এখন ১৪১৭ তে কী ভাবে এলো, ১৪১৭ হচ্ছে মক্কা থেকে মদীনায় মোহাম্মদের (সা.) যাওয়ার দিন থেকে গণনার স্মারক। প্রথম দিকে লুনার এবং তারপরে সোলার ক্যালেন্ডার এই দুটি মিলিয়ে করা।

অমর্ত্য সেন তাঁর উক্ত ভাষণের সর্বপ্রথমে বলেন, “যেমন একাদশ শতাব্দীতে চর্যাপদ। এটি বৌদ্ধ ধর্মীয় লেখা। এর মধ্যে ভুসুকু বলে একজন কবি ছিলেন। তিনি পদ্মা দিয়ে যাচ্ছিলেন নৌকাতে। পথে তার যাবতীয় সম্পত্তি ডাকাতরা নিয়ে যায়, তাকে মারধর করে। তারপর তিনি লিখছেন, নিজেকে নিয়েই যে, ভুসুকু তোমার সব সম্পত্তি ডাকাত নিয়ে গেছে। আমি (অর্মত্য সেন) সে যুগের বাংলা থেকে এ যুগের বাংলা করছি। তিনি (ভুসুকু) বলছেন তোমার সব সম্পত্তি নিয়ে গিয়ে তোমাকে ডাকাতরা মুক্তি দিয়েছে। তুমি এখানেই থেকে জাত বিচার বাদ দিয়ে একটি চন্ডাল মেয়ে বিয়ে করে পরিবার প্রতিষ্ঠা করো। তুমি সব হারিয়ে সত্যি বাঙালি হলে।”

ছিঃ! ছিঃ অমর্ত্য সেন ছিঃ! চর্যাপদের ৪৯ নম্বর কবিতার অর্থ ছিল, “ভুসুকু সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী বা সব ত্যাগ করে আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ হয়েছিলেন।” বৌদ্ধ বিদ্বেষী বৈদিক পন্ডিতগণ আলোকিত বাঙালি শব্দকে অবনমিত করে “বাঙালিকে পশু” বলেছেন (বাঙালি মানুষ নয়, লেজ নাই কিন্তু), এবং গৌতমবুদ্ধকে অপমান করে হিন্দী ভাষায় ‘বুদ্ধু’ বা হীন জঘন্য (বেকুব) শব্দ ব্যবহার করে। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন ঢাকার বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলার (২১ ফেব্রæয়ারী ২০১১) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসেবে তাঁর ভাষণে চর্যাপদের (৪৯ নম্বর কবিতার মিথ্যা ব্যাখ্যা করেন) বাঙালি কবি ভুসুকুপাদকে অপমানিত করেন এবং বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে ইসলামিক হিজরি (১৪৩২) সালকে হিন্দুত্বকরণে বঙ্গাব্দের (১৪১৮) মিথ্যা ইতিহাস বর্ণনা করেন। হিন্দুরাজনীতি বঙ্গাব্দের বাংলা পঞ্জিকা রচনায় হিজরি সালকে ভাড়া করে এনে সূর্য্য ক্যালেন্ডারের দোহাই দিয়ে বাঙালি মুসলমানদের চোখে ধোকা দেয় এবং ইসলামিক হিজরি সালকে বিকৃত করে বঙ্গাব্দ রচনা করার মিথ্যা ইতিহাস বর্ণনা করেছে। চান্দ্র ক্যালেন্ডারকে অনুসরণ করে দিওয়ালী, দূর্গা পূজাসহ সকল হিন্দু উত্সব সম্পন্ন হলে হঠাত করে ইসলামিক হিজরি সালের জন্য চান্দ্রমাস বাদ দিয়ে সূর্য ক্যালেন্ডারের নাম দিয়ে হিজরি সালকে হিন্দুত্বকরণ করে বঙ্গাব্দ করা হ’ল কেন? হিন্দুরাজনীতি সম্রাট অশোক ও পাল রাজত্বের বুদ্ধাব্দকে কবর দিয়ে ঢাকায় অমর্ত্য সেনের উক্ত ভাষণই রাজনৈতিক দলিল।

আকবর সোলার ক্যালেন্ডারে বিশ্বাস করতেন। এটি কিন্তু বাংলা ছাড়া সাব কন্টিনেন্টের কোনো অঞ্চলে আর থাকেনি।” বাঙালির জাতির অস্তিত্বের স্বাক্ষর বঙ্গাব্দকে নিয়ে হিজরির কথা তো আমাদের ভাষা আন্দোলন সমর্থকগণ আজও ভেবে দেখার অবকাশ বা গবেষণার সূচনা হয়নি। কারন হিন্দুরাজনীতি আমাদের বাংলাদেশে নদীর জল থেকে জীবন নিয়ন্ত্রণ করার স্বপ্নে বিভোর। রাতারাতি ইতিহাস তৈরী হয় না এবং আমাদের বগুড়ার ঐতিহাসিক অশোকস্তম্ভ কোলকাতায় যাদুঘরে রেখে অমর্ত্য সেন ঢাকায় এসে তাঁর ভাষণে ইতিহাসের নামে ছেলে ভুলানো ছড়া বলেছেন। হিন্দুরাজনীতি ইসলামিক হিজরি সালকে অপমানিত করে চন্দ্র বা সূর্য ক্যালেন্ডারের নামে বৌদ্ধদের বুদ্ধাব্দ এবং ইসলামের হিজরি সালকে পরিহার করে হিন্দুমার্কা বঙ্গাব্দ রচনা করেছেন। কবি শঙ্খ ঘোষের ভাষায়, “সমস্ত মাঠের বিন্দু আমারই ধর্মের ধান বোনা / সুচ্যগ্র মাটি ও আমি অন্য কোনো শরিকে দেব না।”

চর্যাপদের অপাপবিদ্ধ সিদ্ধপুরুষ কবি ভুসুকু ‘বাঙালি’ শব্দের আবিষ্কারক ছিলেন। পাল রাজত্বের চারশত বছরকে (৮ম শতাব্দী থেকে ১১ শতাব্দী) বাঙালি জাতির এনলাইটেনমেন্ট যুগ বলা হয় এবং সেই যুগে বুদ্ধাব্দই (গৌতমবুদ্ধের জয়ন্তি সাল) বঙ্গাব্দ ছিল। ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী (ভুসুকু আজ আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হলেন)” থেকে ঐতিহাসিক ‘বাঙালি’ শব্দের অভূতপূর্ব সংযোজন হয়েছিল এবং (দি বুক অব এনলাইটেনমেন্ট) ৪৯ নম্বর কবিতায় সর্বপ্রথম ‘বাঙালি শব্দ’ মহাকবি ভুসুকু কর্তৃক আবিস্কৃত হল। পূজনীয় ব্যক্তির প্রতি সন্মান প্রদর্শন বাঞ্ছনীয়।

তদানিন্তন ব্রাহ্মণ শাসিত সমাজে মহাকবি ভুসুকু অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে বলেছিলেন, “আমি আজ বাঙালি হয়ে ‘অহং’কে জয় করে সিদ্ধপুরুষ হয়েছি।” বৌদ্ধ পালি ভাষায় যার নাম ‘সউপাধিশেষ নির্বান লাভ’ বা রক্ত মাংসের শরীর নিয়ে পরমার্থ জীবন যাপন। ধর্ম বা ব্রাহ্মণ নিয়ন্ত্রিত সমাজে মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচার করার মানসে বৌদ্ধধর্মের প্রয়োজন আজও বিরাজমান। চর্যাপদ এবং বঙ্গাব্দ প্রসঙ্গ নিয়ে সন্মানিত অতিথি অমর্ত্য সেন ঢাকায় একুশের বইমেলা অনুষ্ঠানে আলোচনা করেছেন। আমরা মনযোগ দিয়ে তাঁর লেখা পড়েছি। উক্ত বিষয়ে তথ্য জানা ও পাওয়া বাংলা ভাষাভাষী জনতার মৌলিক অধিকার আছে বলে আমরা মনে করি। দুর্ভাগ্যবশত: চর্যাপদের ৪৯ নম্বর কবিতায় জিতেন্দ্রীয় সিদ্ধপুরুষ কবি ভুসুকু সম্বন্ধে অমর্ত্য সেনের আলোচ্যমান গল্পের সাথে আকাশ পাতাল তফাত পরিলক্ষিত হয়। চন্ডাল মেয়ে বিয়ে করে বা সব হারিয়ে নয়, ভুসুকু ষড়রিপু সব জয় করে মহাজ্ঞানী ও মহামানব হয়েছিলেন। সম্রাট আকবরের আমলে হিজরি সালকে (চান্দ্র ক্যালেন্ডার) অনুসরণ করে জানা বঙ্গাব্দের অজানা ইতিহাস আমরা হিন্দু রাজনীতির (সৌর ক্যালেন্ডার) ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রে ভুলে আছি। ১৪৪১ হিজরি ১৪২৮ বাংলা বা বঙ্গাব্দ হয় কি করে? যুজুর ভয়ে নৌকা পাহাড়ের উপর দিয়ে চলে।

যীশু খৃষ্ঠের নামে খৃষ্ঠাব্দ আছে এবং গৌতমবুদ্ধের নামে বুদ্ধাব্দ আছে! ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে গৌতমবুদ্ধ বিশ্বশান্তির উত্স! বিশ্বশান্তির জনক গৌতমবুদ্ধের ধর্মচক্র (অশোক চক্র) ভারতের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় এমব্লেম বা সরকারি স্মারক চিহ্ন রুপে বিরাজমান!
বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃষ্ঠা ৬৫) রাজপুত্র সিদ্ধার্থের (গৌতমবুদ্ধ) বঙ্গলিপি (৬৪ লিপি) অধ্যয়ন করার ঐতিহাসিক প্রমাণ বিরাজমান এবং ২৬০০ বছর পূর্বে গৌতমবুদ্ধ বঙ্গলিপিকে (Hindi, Assamese, Tamil, etc, 64 several লিপি) ব্রাহ্মণদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন (দেশ 01 February 1992, Kolkata)। বাংলা বর্ণমালার ইতিহাস বিজয়ী পাঠক হয়ে ও গৌতমবুদ্ধের নামে বাংলাদেশের পঞ্জিকায় (ক্যালেন্ডারে) বুদ্ধাব্দ লেখা হলো না কেন?

সন্মানিত প্রবক্তা অমর্ত্য সেনের ভাষনে কোথায় ভুল ছিল তা আমরা জানতে পারি চর্যাপদের উক্ত ৪৯ নম্বর কবিতায় এবং পরম শ্রদ্ধেয় কবি ভুসুকু লিখেছিলেন, “বজ্রনৌকা পাড়ি দিয়ে পদ্মানদীতে গেলাম। নির্দয় দস্যু দেশ লুট করে নিয়ে গেল। নিজের গৃহিনীকে (কামতৃষ্ণাকে) চন্ডালে নিয়ে যাবার পর ভুসুকু আজ তুমি বাঙালি হলে। পঞ্চপাটন (৫ উপাদান স্কন্ধ) দগ্ধ, ইন্দ্রিয়ের বিষয় বিনষ্ঠ। জানি না আমার চিত্ত কোথায় গিয়া প্রবেশ করলো। আমার সোনা রুপা কিছুই থাকলো না, নিজের পরিবারে মহাসুখে থাকলুম। আমার চৌকোটি ভান্ডার নিঃশেষ হলো, জীবনে মরণে আর ভেদ নেই।”

আলোচ্যমান চর্যায় কবি ভুসুকু কামতৃষ্ণা বা বিয়ে করার ইচ্ছাকে গৃহিনী বলেছেন, “আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী (আজ বাঙালির ইতিহাসে ভুসুকু কামতৃষ্ণাকে জয় করে সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হল), নিঅ (নিজ) ঘরিনী (কাম তৃষ্ণার লোভ লালশা বা গৃহিনী) চন্ডাল লেলী (চন্ডালে নিয়ে গেল)।” কবি ভূসুকুই সর্বপ্রথম “বাঙালি” শব্দের আবিষ্কারক এবং পাল সম্রাটগণের ৮ম শতাব্দী থেকে ১১ শতাব্দী ৪০০ বছর পর্যন্ত চর্যাপদে বুদ্ধাব্দকে (২৫৫৫ বুদ্ধাব্দ) বঙ্গাব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও :
“এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার
আজি প্রাতেসূর্য ওঠা সফল হলো কার !
কাহার অভিষেকের তরে সোনার ঘটে আলোক ভরে
উষাকাহার আশিস বহি হলো আঁধার পার !
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হলো কার
এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হলো কার
বোনে বোনে ফুল ফুটেছে দোলে নবীন পাতা
কার রিদয়ের মাঝে হলো তাদের মালা গাঁথা !
বহু যুগের উপহারে বরণ করিনি লোকারে
কার জীবনে ২ প্রভাত আজি ঘোচায় অন্ধকার
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হলো কার
এদিন আজি কোন ঘরেগো খুলে দিল দ্বার
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হলো কার
আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও
আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকাধুইয়ে দাও
আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও !
যেজন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে
আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে
এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও ।
বিশ্বহৃদয়হতে-ধাওয়া আলোয় পাগল প্রভাত হাওয়া
সেই হাওয়াতে হৃদয় আমার নুইয়ে দাও \
আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও
আজ নিখিইলের আনন্দধারায় ধুইয়ে দাও,
মনের কোণের সব দীনতা মলিনতা ধুইয়ে দাও ।
আমার পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান-
তার নাইকো বাণী, নাইকো ছন্দ, নাইকো তান ।
তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও ।
বিশ্বহৃদয়-হতে-ধাওয়া প্রাণে-পাগল গানের হাওয়া,
সেই হাওয়াতে হৃদয় আমার নুইয়ে দাও \

ধর্মের অপব্যবহার করে লেখাকে নরকের দ্বার স্বরূপ ফতোয়া জারি করে বৈদিক ব্রাহ্মণগণ বিধান দিলেন, “স্বরস্বতী বাগদেবী, লিপির দেবী নয়। দেবভাষায় কোন লিপি নেই (দেশ. ১৪ পৃষ্ঠা, কলকাতা, ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২)।” গৌতমবুদ্ধ দক্ষিন এশিয়ার এই সামাজিক বিকৃতির হাত থেকে জনতাকে রক্ষা করেন। বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে বঙ্গাব্দের ঐতিহাসিক বিকৃতির জবাবদিহিতা কোথায়? লেখক শৈলেন্দ্র ঘোষের মতে, “এই জটিলতা নিরসনের জন্য পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে গৌড়েশ্বর হোসেন শাহ তাঁর উজির পুরন্দর খাঁ, মুকুন্দ দাস, এবং মালাধর বসু প্রভৃতি সভাসদদের পরামশক্রমে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন।” সম্রাট আকবরের আমলে সর্বপ্রথম বঙ্গাব্দ দিয়ে সরকারী কর্ম শুরু হলে ও কিন্তু বাংলাদেশে সোনার গাঁ এর শাসক ঈশা খাঁ বিভিন্ন কারনে সেনাপতি মানসিংহের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছিলেন। বাংলা বর্ণমালার হাতধরেই বাঙালি জাতির সভ্যতার যাত্রা এবং প্রথম বাংলা বইয়ের নাম “চর্যাপদ।”’ জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!