অনলাইন ডেস্ক : প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক বর্ষণ ও তার ফলে সৃষ্ট বন্যায় ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপভূখণ্ড মিন্দানাওয়ের বিভিন্ন গ্রামে ও শহরে নিহত হয়েছেন মোট ১১ জন এবং এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন আরও ১৯ জন।
এছাড়া বন্যার কারণে দ্বীপটির নানা অঞ্চল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৬ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ফিলিপাইনের আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা এএফপিকে জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহের প্রবল বর্ষণে মিন্দানাওয়ের নদী-নালা ও অন্যান্য জলাশয়ে পানি বাড়ছিল। শেষে গতকাল রোববার বন্যা শুরু হয় দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম ও শহরগুলোতে।
মিন্দানাওয়ের মিসামিস অক্সিডেন্টাল প্রদেশের গভর্নর হেনরি ওয়ামিনাল এএফপিকে জানান, রাজধানী ওরোকুইয়েটাসহ প্রদেশের অধিকাংশ গ্রাম ও শহর বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘ওরোকুইয়েটাতে ৭২ হাজার মানুষের বাস। শহরের হাট-বাজার-অফিস-আদালত-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বাড়িঘর সব জায়গায় বন্যার পানি ঢুকেছে। অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, এমনকি টেলিফোন ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না।’
‘ঝড়-বৃষ্টি-বন্যা আমাদের দেশে নিয়মিত দুর্যোগ। বছরজুড়েই এই দুর্যোগ আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। তবে এবার যে বৃষ্টি ও বন্যা আমরা দেখছি, তা ইতিহাসে এই প্রথম।’
মিন্দানাওয়ের জিংগুগ শহরের কোস্টগার্ড সদস্য রবিনসন ল্যাকরে এএফপিকে বলেন, আজ সোমবার থেকে বৃষ্টি থেমেছে সেখানে, কিন্তু শহরের অধিকাংশ এলাকায় এখনও বুক সমান পানি।
‘জিংগুগ শহরের মোট বাসিন্দা প্রায় ৪৫ হাজার ৭০০। গত সাত দিনে তাদের মধ্যে অন্তত ৩৩ হাজার মানুষকে আমরা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছি,’ এএফপিকে বলেন ল্যাকরে।
বন্যার পানিতে ডুবে জিংগুগের পার্শ্ববর্তী তিন শহর ক্ল্যারিন-জিনামেজ-তুদেলায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। এছাড়া বন্যার পানিতে নৌকাডুবে মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জের লেইতে দ্বীপে নিহত হয়েছেন আরও ৪ জন। তাদের মধ্যে একটি শিশু কন্যাও আছে।
ঝড়ো আবহাওয়া ও প্রবল ঢেউয়ের কারণে মিন্দানাওয়ের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জামবোয়ানগার উপকূলে রোববার দুটি মাছধরা নৌকা ডুবে গেছে। দূর সমুদ্র থেকে তীরের দিকে ফিরছিল নৌকা দু’টি।
ফিলিপাইনের কোস্টগার্ড বাহিনী এএফপিকে জানিয়েছে, নৌকা দু’টি থেকে মোট ২৩ জন মৎসজীবীকে উদ্ধার করতে পেরেছেন তারা। বাকি ১৯ জন এখনও নিখোঁজ।
৩ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ফিলিপাইন মূলত বেশকিছু দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। ভৌগলিক অবস্থান এবং বছরজুড়ে ঝড়-বৃষ্টি-বন্যার কারণে ইতোমধ্যে এই দেশটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
ফিলিপাইনের মোট জনসংখ্যা ১১ কোটি এবং ৮৮ শতাংশই খ্রিস্টান। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন উপলক্ষে গত এক সপ্তাহ ধরে ছুটি চলছে দেশটিতে; কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার ফলে সৃষ্ট প্রাণহানি-জনজীবন বিপর্যয়ের কারণে চলতি বছরের বড়দিনের ছুটিতে শোক বিরাজ করছে ফিলিপাইনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে দুর্যোগ কবলিত এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে উদ্ধারের বিভিন্ন ছবি।