অনলাইন ডেস্ক : সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার ডলিয়া এলাকায় ১৫ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠে লিটিল লন্ডন সিটি প্রকল্প। উদ্যোক্তাদের সিংহভাগই যুক্তরাজ্য প্রবাসী তথা লন্ডনি। প্রকল্পটি পরিচালনা করছে প্রবাসী এবং দেশি কয়েক জনের সমন্বয়ে ২০০২ সালে গঠিত ল্যান্ড লিংক প্রাইভেট লিমিটেড নামের কোম্পানি। কিন্তু সম্প্রতি কোম্পানির পরিচালনা কমিটির দুজন সদস্যের বড় ধরনের আর্থিক ঘাপলা ও জালিয়াতিতে বেকায়দায় পড়েছে প্রবাসীদের স্বপ্নের এই প্রকল্পটি।
আর্থিক অসংগতি ও জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লে কোম্পানির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) লাভু মিয়া ও সাবেক ফাইন্যান্স ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম সিপুকে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু তারা বহিষ্কারের বিষয়টি গোপন করে জাল কাগজের মাধ্যমে কোম্পানির ভূমি বিক্রয়সহ নানা অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। একই সঙ্গে বুঝিয়ে দিচ্ছেন না বিগত সময়ের হিসাব ও যাবতীয় অর্থ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পে প্রবাসী পরিচালকদের প্রত্যেকের নামে রয়েছে এক বিঘা করে জমি। কোম্পানির ভূমির রেকর্ড সংশোধন ও প্রত্যেক সদস্যের নামে ওই এক বিঘা করে জমি রেজিস্ট্রেশন ও প্রকল্প উন্নয়ন কাজে দেওয়া সদস্যের ৯০ লাখ টাকা জমা ছিল তৎকালীন এমডি লাভু মিয়া ও ফাইন্যান্স ডাইরেক্টর সাইফুল ইসলামের কাছে। কোম্পানির প্রবাসী পরিচালকরা সাইফুল ইসলামকে বিশ^াস করে টাকা জমা দেন; কিন্তু ওই টাকা কোম্পানির ফান্ডে না রেখে তারা নিজেরা আত্মসাৎ করেন।
এ ছাড়াও গোপনে জাল কাগজের মাধ্যমে লাভু মিয়া, সাইফুল ইসলাম, আজমল আলি ও শফিক উদ্দিন কোম্পানির ক্রয়কৃত ভূমি থেকে ৯ বিঘা ভূমি ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।
এসব টাকা তারা বর্তমান কর্তৃপক্ষকে সমজিয়ে দিচ্ছেন না; বরং লাভু মিয়া ও সাইফুল ইসলামের নির্দেশে স্থানীয় সন্ত্রাসী দুলাল আহমদ, কয়েস সিকদার ও নুরুল আমিন গং দিয়ে দখলের উদ্দেশে গত ২৩ জুন প্রকল্পের ভেতর কয়েকটি সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলে। সংবাদ পেয়ে কোম্পানির বর্তমান কর্তৃপক্ষ উপস্থিত হলে সন্ত্রাসীরা তাদের প্রাণে মারার হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় গত ৪ জুলাই একটি জিডি (নং-১১৮) করা হয়। এর আগে লাভু মিয়াকে বেআইনি কার্যক্রম ও আর্থিক দুর্নীতি এবং বিভিন্ন জালিয়াতির কারণে বহিষ্কার করার পরও তার অপতৎপরতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন (নং ৪৯/২০২০) করা হয়। শুনানি শেষে আদালত লাভু মিয়াকে কোম্পানি যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন। কিন্তু চক্রটি কোম্পানির জাল কাগজ সৃষ্টি করে আরও কিছু জমি বিক্রি করে। এ নিয়ে স্পেশাল জজকোর্টের ৬/২০২০ নম্বর মামলা দুদকে তদন্তাধীন অবস্থায় আছে।
এ বিষয়ে কোম্পানির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজারুল আলম চৌধুরী শিমু বলেন, লাভু মিয়ার নানা কারসাজির কারণে পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ সাধারণ সভায় গত বছরের ১৭ নভেম্বর তাকে কোম্পানি আইন ১০৬ ধারা মোতাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে কোম্পানিতে তাদের শেয়ার বহাল রয়েছে। পরবর্তীতে লাভু মিয়া ও সাইফুল ইসলাম গংরা কোম্পানির দলিল জাল করে ভুয়া নামজারি ও খাজনা রশিদ বানিয়ে ২ দশমিক ৭৩ একর ভূমি তাদের মেয়ে, স্ত্রী আত্মীয় ও নিজেদের নামে বিক্রয়ের মাধ্যমে জাল দলিল সৃষ্টি করায় লাভু মিয়া ও অন্যদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছেন না, উপরন্তু সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করে বসে আছেন।
কোম্পানির পক্ষ থেকে সর্বশেষ ২ জুলাইয়ের মধ্যে সব কিছু নতুন এমডি বরাবর জমা দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হলেও তারা তাতে কর্ণপাত করছেন না।
যোগাযোগ করা হলে রিটকারীর আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট শেখ খায়রুল আনাম বলেন, আদালতের নির্দেশনা এখনো বহাল রয়েছে। যদি এই আদেশ কেউ অমান্য করেন তা হলে তা হবে আদালত অবমাননার শামিল। প্রতিপক্ষকে অবশ্যই আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। বিষয়টি যেহেতু সর্বোচ্চ আদালতের দৃষ্টিতে আছে, তাই নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ওসি শাহাদাত হোসেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম সিপুর যুক্তরাজ্যের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কল ও সাংবাদিক পরিচয়ে খুদেবার্তা দেওয়া হলে তিনি তাকে বিরক্ত না করার জন্য ফিরতি খুদেবার্তা পাঠান। লাভু মিয়া কল রিসিভ করলেও এ প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি না হয়ে কল কেটে দেন।