সোনা কান্তি বড়ুয়া : পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামি পার্বত্য চট্টগ্রাম বানষতে স¤প্রতি হিজরত জঙ্গিদের ভয়ঙ্কর ষড়য়ন্ত্র! পার্বত্য চট্টগ্রামে চিটিংবাজ ধর্মান্ধ রাজনীতির জাল-জালিয়াতি প্রত্যহ ব্যাপকতর, প্রকটতর এবং নির্লজ্জতর! ইচ্ছাশক্তির নবউত্থান ঘটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। গত ২৬ নভেম্বর ২০২২-এ প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বৈঠকের বিষয় নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স¤প্রতি জঙ্গিরা দেশে যে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বৈঠকে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে আপনারা দেখেছেন, একটি দলকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। (প্রথম আলো, ২৭ নভেম্বর ২০২২)। হিজরতের নামে ( হরকাতুল জিহাদ, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসার আল ইসলামের কিছু সদস্য মিলে ) ২০১৭ সালে নতুন করে এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। চিটিংবাজ ধর্মান্ধ এই সংগঠনটি মূলত তরুণদের দলের সদস্য হিসেবে সংগ্রহ করে এবং জিহাদের কথা বলে চরাঞ্চলে ও সীমান্তবর্তী পাহাড়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্ত বিষয়েই ধর্মান্ধ জিহাদের ধর্মের সুড়সুড়ি কেন? মুসলিম রাজনীতির ভীতির কবলে চট্টগ্রাম হিজরত জঙ্গিগোষ্ঠীর হরিলুট! গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে পাহাড়ীদের বেঁচে থাকার অধিকার ধ্বংস করতে জেনারেল জিয়াউর রহমান সরকার সমতল জেলা থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ (১১ লক্ষ) বাঙালি মুসলমান সেটেলার পাহাড়ি অঞ্চলেনিয়ে আসে, যেখানে আদিবাসী জুম্ম জাতি কয়েক শতাব্দী ধরে বসবাস করছে এই সেটেলাররা আদিবাসীদের ব্যাপক ভূমি অবৈধভাবে দখল করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্ত বিষয়েই ঘুরে ফিরে সেই চিটিংবাজ ধর্মান্ধ জিহাদের ধর্মের সুড়সুড়ির শেষ কোথায়? মুসলিম রাজনীতির ভীতির কবলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে পাহাড়ীদের মনুষ্যত্ব কেড়ে নিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ীদের ভিটে-মটিতে পাঁচ লক্ষ মুসলমান সেটেলার! মুসলমান সেটেলাররা এবং জঙ্গিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের ব্যাপক ভূমি অবৈধভাবে দখল করে চলেছে।
বাংলাদেশী আদিবাসী জুম্ম জাতি এবং বৌদ্ধগণ বিষাদ সিন্ধু বুকে নিয়ে বিরাজমান! দুর্নীতি দমন কমিশন শ্বেতপত্রে বাংলাদেশ নিয়ে রাজাকার ভন্ডদের ‘ইসলামধর্ম অপব্যবহারের’ বীজ আজ মহীরূহ হয়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীর এতো উলঙ্গ দর্প বাংলাদেশে কেন? সকল ধর্মের বিশ্বমৈত্রীতে মুসলমান রাজনীতির বিদ্বেষটাই ধর্মান্ধদের অধর্ম! পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমির সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে মুসলমান রাজনীতির ভীতির কবলে হিন্দু, বৌদ্ধ ও চাকমা, মারমাসহ ১৪ উপজাতি! পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ করতে হবে।
পাকিস্তানিকরণ এবং উন্নয়ন-অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বাঙালির ইচ্ছাশক্তিকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু মুজিব হত্যার মূল চক্রী অনৈতিক কর্মে প্রবৃত্ত খন্দকার মোশতাক, জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদ- এই তিন শাসক মিলে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিকে পাকিস্তানিকরণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায়। ’৭৫-পরবর্তী ছয় বছর বিদেশে বিপন্ন জীবন অতিক্রম করে স্বদেশের মাটিতে ফিরে এসে বাঙালিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলেন। ইচ্ছাশক্তির নবউত্থান ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আদিবাসীদের ভূমি দখলে পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলমান সেটেলার কেন?
মুসলমান যে মানব, আদিবাসী জুম্ম জাতি এবং অখন্ড মানব জাতি সেই মানব! গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কী ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী অবৈধভাবে দখল করছে? ইসলাম ধর্মে রিপুর তাড়নায় মানুষ যেন বিভ্রান্তি, অসত্য, অনৈতিক কর্মে প্রবৃত্ত না হয়, সুপথ যেন পরিত্যাগ না করে কখনো, পবিত্র কুরআন শরীফের শিক্ষা মূলত ইহাই। ১৯৬০ সালে কোন আইনে পাকিস্তান সরকার পাহাড়ীদের বেঁচে থাকার অধিকার ধ্বংস করতে পুরানো রাঙামাটি শহর পানির নীচে ডুবিয়ে দিয়ে কাশ্মীরের ও প্যালেষ্ঠাইনের মানুষের অধিকারের জন্য কুমিরাশ্রু বর্ষণ করে! বাংলাদেশী আদিবাসী জুম্ম জাতি এবং বৌদ্ধগণ বিষাদ সিন্ধু বুকে নিয়ে বিরাজমান; একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার ১০ বছর আগে পাকিস্তান সরকার ইচ্ছা করে গুঁড়িয়ে দিয়েছে চাকমা রাজবাড়ীসহ পুরানো রাঙামাটি শহর! মারমা, মুরং, খ্যাং সকল পাহাড়ীদের মাথার উপরে থাকা এক চিলতে টিনের ছাউনি দেয়া বসত বাড়ি। পানির অতল তলে তলিয়ে দিয়েছে গ্রাম্য বাজার, লোকালয়। কিশোরির চিরচেনা স্কুল, বুদ্ধমন্দির, বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় এবং স্বপ্নের সিঁড়ি সব কিছু সলিল সমাধি।
ঘটনা- এক (SAMAKAL, 2 DECEMBER 2022)! গত অক্টোবরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ছিল হিন্দাল শারক্কিয়া’ গঠনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে যখন বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল তখন হরকাতুল জিহাদ, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জেএমবি, আনসার আল ইসলামের কিছু সদস্য মিলে ২০১৭ সালে নতুন করে এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।
এই সংগঠনটি মূলত তরুণদের দলের সদস্য হিসেবে সংগ্রহ করে এবং জিহাদের কথা বলে চরাঞ্চলে ও সীমান্তবর্তী পাহাড়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) টাকার বিনিময়ে ওই উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্যদের রাঙামাটি ও বান্দরবানের সীমান্তসংলগ্ন পাহাড়ে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। উল্লেখ্য যে, কেএনএফ একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এবং তাদের কার্যক্রমে মিয়ানমার ও উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিচালিত হয়।
হিজরতের নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করা নতুন একটি জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরি, আবার একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সঙ্গে আপস করে বাংলাদেশের পাহাড়ি জনপদে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, এক ধরনের অশনিসংকেত দেয় এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ভাষায় স্পষ্ট যে, তখনও সবাইকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তাই আশঙ্কা রয়েই যায়।
গত জুন মাসে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে হানাহানি বন্ধে ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নামক একটি গ্রুপ মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে সরকারকে একটি লিখিত প্রস্তাবনামা দেয়। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এরকম প্রস্তাব প্রাপ্তি বা আনুষঙ্গিক বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
এটি অনস্বীকার্য যে, যুগের পর যুগ ধরে পাহাড়ে চলা সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এএসএস) চুক্তির একটি যুগান্তকারী অর্জন। এই চুক্তিকে ‘শান্তিচুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পাহাড়ে শান্তির পরিবেশ তৈরি হবে বলে সংশ্নিষ্ট সকল মহলের আশা ছিল। এটি নির্দ্বধিায় বাল যায়, এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি অনেকাংশে অর্জিত হয়েছে। তারপরও চুক্তি ও চুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংগঠন ভেঙে গেছে। আমরা এখন দেখতে পাই যে, চুক্তি স্বাক্ষরকারী গ্রুপ জেএসএস দুই গ্রুপে বিভক্ত, আবার তৎকালীন শান্তিচুক্তিবিরোধী গ্রুপ ইউপিডিএফও আলাদা নেতৃত্বের দ্বারা দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছে (একটি ইউপিডিএফ ও অন্যটি ইউপিডিএফ-সংস্কারপন্থি)।
এই চারটি গ্রুপ নিজেদের মধ্যে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সংঘর্ষে লিপ্ত আছে। পাহাড়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য (যেমন- হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি) এই গ্রুপগুলো একে অন্যকে দায়ী করে আসছে। এখন আসি ইউপিডিএফের দেওয়া প্রস্তাবনামার বিষয়ে। প্রস্তাবের বিষয়ে জানা যায়, ৬৬ পৃষ্ঠার প্রস্তাবটিতে ৮ ভাগে মোট ৮৭টি দাবি জানানো হয়। একটি ঐতিহাসিক চুক্তি হবার ২৫ বছর পর তৎকালীন চুক্তিবিরোধী গ্রুপ কর্তৃক এমন একটি প্রস্তাবনামা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। পাহাড়ে একটি গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের দ্ব›দ্ব, দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস ও আস্থার অভাবের কারণে নতুন এই কার্যক্রম (শান্তি প্রস্তাব) বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিগত ২৩ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কিছু ধারা-উপধারা বাস্তবায়িত হলেও এখনো দুই-তৃতীয়াংশ ধারা অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ হয় সম্পূর্ণ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে নতুবা ত্রুটিপূর্ণভাবে আংশিক বাস্তবায়িত করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের পরিবর্তে সরকার চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের পরিবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র জোরদার করা হয়েছে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত পূর্ণাঙ্গ পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠনের পরিবর্তে ডিসেম্বরে দলীয় সদস্যদের দিয়ে অন্তর্বর্তী পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তার মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক ও দলীয়করণের ধারা আরো জোরদার করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরুদ্ধে ২০০০ সালে জনৈক বদিউজ্জামান ও ২০০৭ সালে এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম কর্তৃক পৃথক দু’টি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে চলমান মামলা মোকাবেলার ক্ষেত্রে ২০২০ সালেও সরকার উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে নির্লজ্জ নিলিপ্ততা প্রদর্শন করেছে। মার্চ মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহকে পাশ কাটিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সীমান্ত সড়ক ও স্থলবন্দর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন যা ছিল পার্বত্য চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন।
চুক্তি মোতাবেক অবশিষ্ট চার শতাধিক অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের পরিবর্তে ডিসেম্বর মাসে খাগড়াছড়ি সফরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পার্বত্য চুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চুক্তির পর প্রত্যাহৃত ক্যাম্পগুলো পুনরায় স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। লামা উপজেলায় অবৈধভাবে ৩,০০০ একর জমি বেদখল করেছে মেরিডিয়ান কোম্পানী। এপ্রিল মাসে লামা উপজেলায় মেরিডিয়ান কোম্পানির দায়েরকৃত সাজানো মামলায় জড়িত করে পুলিশ উপজেলার সরই ইউনিয়নের ঢেঁকিছড়া নোয়াপাড়ার কার্বারী লাংকুম ম্রো (৪৮) ও অপর এক বাসিন্দা রিং রং ম্রো (৫০) নামে দুইজন ম্রো গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে, যাতে করে মেরিডিয়ান কোম্পানী নির্বিঘ্নে ভূমি দখল করতে পারে।
১১৯২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র হিন্দু রাষ্ট্রধর্মের নেতা হয়ে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে ‘শেক শুভোদয়া ’ শীর্ষক বই লিখেছিলেন। তিনি তাঁর (হলায়ুধ মিশ্র) রচিত দিনলিপির (ডায়েরী) উক্ত বইতে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে মুসলিম তুর্কী মিশনের যোদ্ধাদের সাথে মহামন্ত্রীর (হলায়ুধ মিশ্র) গোপন ষড়যন্ত্র এবং রাজা লক্ষণ সেনকে সরিয়ে বখতিয়ার খিলজিকে বাংলার সিংহাসন আরোহনের নীলনক্সার পুঞ্জীভূত লোমহর্ষকর বাস্তব ঘটনাবলী অকপটে রচনা করে স্বীকার করলেন।
লোভের লোলা সহ হিংসা বিদ্বেষ ও মোহ চরিতার্থ করার নাম ইসলাম ধর্ম নয়। আমাদের মন বলে, “বিধির বিধান কাটবে তুমি, / তুমি কি এমনি শক্তিমান? একাত্তরের পরাজিত শক্তি, ঘাতক, দালাল, নারী নির্যাতন কারী জামাত বর্তমান সরকারের পথপ্রদর্শক নয়।রাজাকার ধর্মব্যবসায়ীদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে রাজাকারদের ধর্মব্যবসা থামেনি। এরা এখনও ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজাকারদের ধর্মান্ধ ইসলামি রাজনীতির এতো উলঙ্গ দর্প বাংলাদেশে কেন? জয় সত্য ও মানবতার জয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাথে হিন্দু বৌদ্ধ রাষ্ঠ্রদ্বয় (ভারতও ভুটান) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশের বিজয় হয় : (১) গণতস্ত্র (২) জাতীয়তাবাদ (৩) সমাজতস্ত্র এবং (৪) ধর্মনিরপেক্ষতা।
মানবাধিকারের আলোকে জামায়াতের উগ্র সা¤প্রদায়িকতার বাহক শক্তিটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জনগণের সম্পদ হরিলুট করেছে! পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি হত্যাকান্ডের পর, বাঙালি হত্যাযজ্ঞই কি বাংলাদেশে পাকিস্তানী ইসলাম?
কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী জঙ্গি মৌলবাদী ও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস রাজাকার ও জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশের সামরিক প্রশাসকগন রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন। ধর্মবিদ্বেষের অভিশপ্ত রাজনীতি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম নয়। সরকার মুসলমান সেটেলার নিয়ে আসে কেন? মুসলমান সেটেলার মুসলিম রাজনীতির ভীতির কবলেপার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীগণ! আদিবাসীদের ভূমি দখলে মুসলমান সেটেলার জঙ্গিবাদের নব উত্থান স¤প্রতি জঙ্গিরা দেশে যে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে!
ঘটনা- দুই! গত জুন মাসে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে হানাহানি বন্ধে ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নামক একটি গ্রুপ মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে সরকারকে একটি লিখিত প্রস্তাবনামা দেয়। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এরকম প্রস্তাব প্রাপ্তি বা আনুষঙ্গিক বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
এটি অনস্বীকার্য যে, যুগের পর যুগ ধরে পাহাড়ে চলা সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এএসএস) চুক্তির একটি যুগান্তকারী অর্জন। এই চুক্তিকে ‘শান্তিচুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পাহাড়ে শান্তির পরিবেশ তৈরি হবে বলে সংশ্নিষ্ট সকল মহলের আশা ছিল। এটি নির্দ্বধিায় বাল যায়, এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি অনেকাংশে অর্জিত হয়েছে। তারপরও চুক্তি ও চুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংগঠন ভেঙে গেছে। আমরা এখন দেখতে পাই যে, চুক্তি স্বাক্ষরকারী গ্রুপ জেএসএস দুই গ্রুপে বিভক্ত, আবার তৎকালীন শান্তিচুক্তিবিরোধী গ্রুপ ইউপিডিএফও আলাদা নেতৃত্বের দ্বারা দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছে (একটি ইউপিডিএফ ও অন্যটি ইউপিডিএফ-সংস্কারপন্থি)।
এই চারটি গ্রুপ নিজেদের মধ্যে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সংঘর্ষে লিপ্ত আছে। পাহাড়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য (যেমন- হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি) এই গ্রুপগুলো একে অন্যকে দায়ী করে আসছে। এখন আসি ইউপিডিএফের দেওয়া প্রস্তাবনামার বিষয়ে। প্রস্তাবের বিষয়ে জানা যায়, ৬৬ পৃষ্ঠার প্রস্তাবটিতে ৮ ভাগে মোট ৮৭টি দাবি জানানো হয়। একটি ঐতিহাসিক চুক্তি হবার ২৫ বছর পর তৎকালীন চুক্তিবিরোধী গ্রুপ কর্তৃক এমন একটি প্রস্তাবনামা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। পাহাড়ে একটি গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের দ্ব›দ্ব, দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস ও আস্থার অভাবের কারণে নতুন এই কার্যক্রম (শান্তি প্রস্তাব) বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।
ভারতের দুর্ধর্ষ জঙ্গী ড. মুফতি ওবায়দুল্লাহর (জনকন্ঠ, ১৮ই জুলাই, ২০০৯) ঢাকায় গ্রেফতার হলো এবং তার স্বীকারোক্তিতে পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠন লস্কর – ই তৈয়বা ও সামরিক গোয়েন্দা আই এস আইয়ের ১৫ বছরে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ৫টি কওমি মাদ্রাসায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী ট্রেনিং দিয়ে “জিহাদী ভাই” নামক রাষ্ঠ্রদ্রোহী সন্ত্রাসী দল তৈরী করে চলেছে।
ঘটনা- তিন! ২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচানোর জন্য মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময় জীবন বাঁচানোর তাগিদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে এসেছে। বর্তমানে সরকারি হিসাবমতে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে কিছু কিছু গ্রুপ এসেছে, যারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তাছাড়া তারা হত্যা, অপহরণ, মাদক ও চোরাচালান, চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। এসব গ্রুপ ক্যাম্পের ভেতরে, আবার বাইরে (কক্সবাজার ও বান্দরবানসংলগ্ন পাহাড়ে বা মাঝে মাঝে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘড় গধহং খধহফ (নো ম্যানস ল্যান্ড) অবস্থান করে বলে অনেক সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়। বাস্তুচুক্তি ও শরণার্থীবিষয়ক লিটারেচার বিশ্নেষণ করলে জানা যায় যে, যখন অনেক সংখ্যক লোক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্য একটি দেশে আসে তখন তাদের মধ্যে জঙ্গি গ্রুপ, উগ্রবাদী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ ও অজ্ঞাতভাবে যারা আশ্রয়দানকারী দেশে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদী কার্যক্রম ঘটায়। তারা প্রয়োজনে আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ ও উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ সরকার তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এসব গ্রæপকে কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন ও আইনের আওতায় আনছে। তারপরও ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা দেখে মনে হয় বিষয়টি নিয়ে অবহেলার সুযোগ নেই। এই ঘটনাগুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার তথা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যে কোনো সময় দেশীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলো বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং তারা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতাও তৈরি করতে পারে।
তাছাড়া দেশীয় ও আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী অথবা জঙ্গি সংগঠনগুলো কোনোভাবেই যাতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, সুবিধা প্রতিস্থাপন বা কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে পাঠানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি একটি টেকসই রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনা পলিসি বা ম্যানুয়াল তৈরি করা এখন খুবই প্রয়োজন। এটি একটি সমন্বিত পদ্ধতি হবে, যার আলোকে রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হবে।
সর্বোপরি বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে সমাজের সকল স্তরের লোকদের বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের সোচ্চার হতে হবে। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। আবার আসি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কথায়। তিনি এই ব্রিফিংয়ে আরও বলেন, জঙ্গিরা যাতে কোনোভাবে কোথাও আশ্রয় নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, বাস্তবিক এবং প্রাসঙ্গিক !
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি