টরন্টোর পরিচিত সংগঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মী সবিতা সোমানি’র গ্রন্থ ‘পার্পল রেইনবো’ এই মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় লিখিত এই গ্রন্থে উপস্থাপিত হয়েছে একজন তরুণ বাংলাদেশী মুসলিম মেয়ের হৃদয় বিদারক গল্প, যে পরিবার এবং নিজস্ব কমিউনিটির সামাজিক অত্যাচারের শিকার হয় তার সেক্সুয়াল অরিয়েন্টশন অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হওয়ার কারণে।
হোমোফোবিয়া, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, এবং সামাজিক ও পারিবারিক প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত সে আত্মহত্যা করে।
‘পার্পল রেইনবো’ একটি মুসলিম পরিবারের মানসিক টানা পোড়নের গল্প, বিশেষত একজন মায়ের গল্প যেখানে সমাজ সবকিছুর জন্য তাঁকেই দোষারোপ করে। রুম্পার জীবন একটি অপ্রত্যাশিত মোড় নেয় যখন তার মেয়ে নিশা সাহসের সাথে তার যৌন অভিযোজন সম্পর্কে সত্য কথা বলে। এই একটি সত্য পুরো পরিবারের সমস্ত সম্পর্কগুলোকে ভিন্ন মাত্রা দেয়, বন্ধনগুলোকে চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দেয়।
আমরা তথাকথিত স্বাভাবিকেরা আমাদের ভাষায় অস্বাভাবিক প্রান্তিক যৌনতার মানুষগুলোকে, যারা এলজিবিটিকিউ (LGBTQ) কমিউনিটির সদস্য তাদেরকে সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দেই। তাদের এবং তাদের পরিবারকে নানাভাবে সামাজিক নির্যাতন করি নানাবিধ দোহাই দিয়ে। অনেকেই এই কারণে দ্বৈত জীবন যাপন করেন, কারণ তারা জানেন, তাদের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন প্রকাশ হয়ে পড়লে তারা বা তাদের পরিবার নিগৃহীত হবে। সমকামিতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থাকার পরও আমরা অনেকেই এই বিষয়টা নিয়ে লিখি না সেটা বোধকরি সমাজে নিজেদের সম্মান বাঁচিয়ে রাখার জন্যই। অনেকেই উদার যুক্তির কাছে পরাস্ত হয়ে ‘প্রাকৃতিক’ বলে স্বীকার করে নিলেও ভিন্ন সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন দেখলে নাক সিঁটকান, যাঁদের কাছে সন্তানের চাইতেও সম্মান বড়, এই গ্রন্থটি তাদের জন্যই লেখা। সমাজের অনেকেই দাবী করে, সন্তানের প্রতি আমাদের ভালোবাসা শর্তহীন, কিন্তু সত্যি কি তাই? তাহলে সেই ঘষাপেটা পারিবারিক সম্মান কিভাবে সন্তানের চেয়ে বড় হয়ে যায়?
একটু সহযোগিতা, একটু স্বীকৃতি একজন মানুষের জীবন পাল্টে দিতে পারে, তাদের কষ্টের পরিমাণটা কমে যেতে পারে বহু গুণ। আমরা সবই বুঝি, সবই জানি, শুধু স্বীকার করে নিতে জানি না। সবিতা সোমানি এই বিষয়টি নিয়ে লেখার আগে অনেক ভেবেছেন, তাঁর এই বইকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য আমাদের কমিউনিটি এখনও তৈরী কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়া এখনও কঠিন। তারপরও তিনি উদ্যোগী হয়ে এমন একটা বই প্রকাশ করেছেন, সে কারণে তিনি নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষের চেয়ে চিন্তা ভাবনা এবং পদক্ষেপে অনেক এগিয়ে আছেন। নিশ্চয় ইতিহাস এর বিচার করবে। আশা করি, এমন একটি গ্রন্থকে পাঠক খোলা চোখে পড়বেন এবং আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষকে আরও বেশী খোলা চোখে মূল্যায়ন করবেন।
সবিতা সোমানি’র জন্ম বাংলাদেশে এবং বেড়ে উঠা রাজশাহী ও ঢাকাতে। প্রায় দুই দশক তিনি বাস করেছেন টরেন্টোতে। টরেন্টোতে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত নানাবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে। ‘ইউনাইটেড মম’ নামক একটা সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা সবিতা সোমানি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মা’দের সাথে, পরস্পরকে সাহায্য করার জন্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য। তিনি কাজ করছেন বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে একটা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে। কোভিড অবরুদ্ধ গত দিনগুলোতে কমিউনিটিকে সাহায্য করার জন্য ‘কমিউনিটি ক্রাইসিস সাপোর্ট এন্ড সার্ভিসেস’ (CCSS) নামে যে গ্রুপটা কমিউনিটির সাহায্যে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখে সে গ্রুপ’টার প্রতিষ্ঠা সদস্যদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
সবিতা সোমানি’র ‘পার্পল রেইনবো’ গ্রন্থটি এখন ‘আমাজন’এ পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহী পাঠক গ্রন্থটি সংগ্রহ করতে নীচের লিংক এ যোগাযোগ করতে পারেন :