সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল : গত ১৮ই সেপ্টেম্বর, সোমবার বিকেলে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত টরন্টোর ২২ লেবোভিক এভিনিউ’র সিনেপ্লেক্স ওডেন এ আড়ম্বরের সাথে ৬ষ্ঠ মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর চারদিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও ১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম মহাপরিচালক জামিল চৌধুরী এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্ক্যারবরো সাউথ ওয়েস্ট এর এমপিপি ডলি বেগম। উল্লেখ্য, আগামী ১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৬ষ্ঠ টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২২ লেভেবিক এভিনিউ’র সিনেপ্লেক্স ওডেন এবং ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টারে। এবারের উৎসবে ২৪টি দেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মোট ৪২টি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ও স্বল্প দৈর্ঘ্য কাহিনি চলচ্চিত্র এবং প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খানের পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র ‘নকশী কাঁথার জমিন’। এছাড়াও উদ্বোধনী দিনে আরও ৯টি দেশের ৯টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ‘টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ এর আয়োজন করে আসছে। এই আয়োজনের অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন ভাষা এবং সংস্কৃতির স্বাধীন ও বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। টরন্টোর ফিল্ম ফোরামের সদস্যরা মনে করে, বর্তমান বিশ্বে চলচ্চিত্র অন্যতম প্রধান এক শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে আমাদের এই সমাজকে যথোপযুক্তভাবে তুলে ধরা সম্ভব। যেহেতু চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন প্রক্রিয়াটা কঠিন, ব্যয়বহুল এবং জটিল, সেহেতু বেশীরভাগ সৃষ্টিশীল এবং প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা পূর্ণ দৈর্ঘের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে ব্যর্থ হন। তাছাড়া প্রচলিত প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের যে ব্যবস্থা বিদ্যমান, সেটা সব নির্মাতার পক্ষে মেনে নেওয়া এবং গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। ফলে অধিকাংশ নির্মাতার নির্মিত চলচ্চিত্র সাধারণ দর্শকরা দেখতে পারেন না। ফলে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ২০১৪ সাল থেকে এমন সব চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটা প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে আসছে।
সেই সাথে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম এর সদস্যরা মনে করে, একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ বহুজাতিক সমাজ আমাদের সুন্দরভাবে বসবাস করার পথ তৈরি করে দিতে পারে। কানাডার বহুজাতিক সমাজ ব্যবস্থার সৌন্দর্য ও পারস্পারিক সৌহার্দ্যতা বাংলাদেশ থেকে আমরা যারা এই দেশে এসেছি, তাদের নিঃসন্দেহে মুগ্ধ করে। ফলে ২০১৭ সালে কানাডার পথ চলার ১৫০ বছরকে আমাদের পক্ষ থেকে স্মরণীয় করার জন্য আমরা সেই বছরই প্রথম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করি। তারপর করোনা অতিমারীর জন্য ২০২০ সাল ছাড়া প্রতি বছর আমরা এই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করে আসছি। ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর জন্য পাঠাচ্ছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর প্রদর্শিত চলচ্চিত্রসমূহ আমাদের সবাইকে বিভিন্ন সংস্কৃতিকে ভালোভাবে জানার সুযোগ করে দেবার সাথে সাথে বিভিন্ন দেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে আমাদের পরিচিয় করিয়ে দিচ্ছে। এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ থেকে প্রায় ৪০০০টি চলচ্চিত্র জমা পড়েছে, সেখান থেকে ২৪টি দেশের মোট ৫২টি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী করা হবে।
এবারের উৎসবের প্রধান স্পন্সর হচ্ছে বাংলাদেশ বিমান। ৬ষ্ঠ টরন্টোর মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ আয়োজনে স্পন্সর করছেন রিয়েল স্টেট ব্রোকার শেখ হাসিব হোসেন, ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত, ব্যারিস্টার ওমর হাসান আল জাহিদ, ব্যারিস্টার আরিফ হোসেন, ব্যারিস্টার রিজুয়ান রহমান, রিয়েল স্টেট এজেন্ট গৌতম পাল, রিয়েল স্টেট এজেন্ট রাইয়ান চৌধুরী, ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট মণীষ পাল, ব্যারিস্টার সাকিব আলম, মর্টগেজ এজেন্ট আনিসুর রহমান প্রমুখ। ৬ষ্ঠ টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর চলচ্চিত্র প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী নৃত্য পরিবেশন করেন ঋতুপূর্ণা চৌধুরী এবং কানাডার আদিবাসী সংগীত পরিবেশন করেন সান্টিয়াগো ও লরেঞ্জো। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিক। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিমান টরন্টোর স্টেশন ম্যানেজার মুশিকুর রহমান, বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত চলচ্চিত্র নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম এবং কানাডার চলচ্চিত্র নির্মাতা রোডা মেঢাট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি ও ৬ষ্ঠ টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর উৎসব পরিচালক এনায়েত করিম বাবুল।