বিনোদন ডেস্ক : বছরের শুরুতে মিরপুরে একটি শুটিংবাড়িতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন ছোটপর্দার অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। ওই বিস্ফোরণে গুরুতর দগ্ধ হন অভিনেত্রী। হাত, পা, চুলসহ শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায়। বাঁচার সম্ভবনা খুব একটা নেই বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন তখন। তবে মাস দুয়েক জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে আঁখি সুস্থ হওয়া শুরু করেন। তারপর থেকে বাসায় চিকিৎসা নিয়ে একটু একটু করে সেরে উঠছেন তিনি।
এবার সামাজিক মাধ্যমে আঁখি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সংগঠনের বিরুদ্ধে। ডিরেক্টরস গিল্ড ও অ্যাক্টর ইকুইটির সদস্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছিল বলে জানান আঁখি। কিন্তু নয় মাসেও সেই কমিটির কাজের কোনো অগ্রগতি পাননি বলে নেতমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী।
নিজের ফেসবুকে আজ শুক্রবার এক দীর্ঘ পোস্টের শুরুতে আঁখি লিখেছেন, ইদানিং একটু আধটু বের হচ্ছি। কাছের মানুষজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে, কথা হচ্ছে, আর ঘুরে ফিরে একটা প্রশ্ন আসছে— অভিযোগ করলাম না কেন? অভিযোগ করলে আমি নাকি ন্যায়বিচার পেতাম। তাহলে আপনরা মেনে নিচ্ছেন অন্যায় অবশ্যই হয়েছে। শুধু বিচারটা হয়নি। ধন্যবাদ আপনাদের।
এরপর লেখেন, আমি অভিযোগ করিনি এটা ভুল তথ্য। আমি যখন হাসপাতালে আমার পরিবার তো সংগঠন এ গেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সংগঠনে হাজির করেছে। তার সামনে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি দায়িত্ব তো ওই কমিটি আর সংগঠনের। এখন সংগঠনের কাজ যে অন্যায়টা হয়েছে তার একটা দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা তৈরি করা। এটা কি আমার কাজ? নাকি এখন প্রতি পদে পদে এই জবাবদিহি আমাকেই করতে হবে? তাহলে নিজেদের দায় এড়াতে আমাকে কেন অভিযুক্ত করছেন? আমার পরিবার সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি?
তিনি আরও লেখেন, আবার অতি উত্তেজিত হয়ে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী জানতে চাচ্ছেন, আমি ক্ষতিপূরণ চাইলাম না কেন? সংগঠন নাকি ব্যবস্থা নিতে পারত। একটা মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হলে সবার আগে মাথায় আসে কয় টাকা ক্ষতিপূরণ পেল বা কত টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা করল। আমি কি একবারও বলেছি ক্ষতিপূরণ চাই? আমি কি একবারও বলেছি মামলা করতে চাই? আমার ক্ষতিপূরণ লাগলে আমি সংগঠনের কাছে কেন যাব? যাব তো কোর্টে। ২/১ কোটি টাকার মামলা করতাম, মামলা জেতার দরকার নাই, শুধু ১০ বছর মামলা টানলেই হতো।
অভিনেত্রী লিখেছেন, আমি সামাজিক মাধ্যমে, বিভিন্ন ইন্টারভিউতে, প্রেস ব্রিফিংয়ে, যখন যেখানে কথা বলতে পেরেছি বারবার বলেছি ক্ষতিপূরণ না অন্যায় যেটা হয়েছে তার একটা দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা তৈরি করুন। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনার শিকার আর কেউ যেন না হয়। আমার ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলেন তো ক্ষতিপূরণ দিয়ে আমার ক্ষতি পোষাতে পারবেন কেউ? এই ক্ষমতা কি এই সমাজের আছে? আমাকে এমন লোভী বানানোর অধিকার কে দিছে আপনাদের?
এ সময় আঁখি লেখেন, একটা তো কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গিল্ড আর ইকুইটি সেই কমিটি গঠন করে দিয়েছে। সংগঠন থেকে কমিটিকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে না? কমিটি কি রিপোর্ট দিয়েছে? কোথায় সেটা, দেখান? আজ তো ৯ মাস। কোথায় সেই কমিটি? কমিটি হয়ে যাওয়ার পর কমিটির পেছনে কি আমার পরিবার সরকারি অফিসের মতো বারবার গিয়ে ঘ্যানঘ্যান করবে? কী হলো ভাই…? কী করলেন…? অগ্রগতি কী…? নাকি সংগঠন সেই কমিটিকে ফলোআপ করবে? নিয়ম অনুযায়ী কমিটি কমিটির মতো করে তার রিপোর্ট পেশ করবে। ওই কমিটিতে ইমরাউল রাফাত, ইমেল হক, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, মাহমুদ নিয়াজ, চন্দ্রদ্বীপ আপনারা নাকি ছিলেন? আর কে কে ছিলেন জানি না। দেন আপডেট দেন কী করলেন এই ৯ মাসে? নাকি সংগঠন আপনাদের কোনো সময় বেঁধে দেয়নি কতদিনের মধ্যে কী করবেন? কোনো মিটিং নাই, কার সভাপতিতে হলো কমিটি, কে কমিটির আহবায়ক? কে কাকে ফলোআপ করবেন?
আরও লিখেছেন, আচ্ছা মেনে নিলাম একটা জরুরি পরিস্থিতিতে তখন গিল্ড আর ইকুইটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এর অনুপস্থিতিতে কমিটি করেছেন, পরবর্তী সময় তো ওই কমিটির একটি কাঠামো দাড় করাতে হবে। নাকি সাংগঠনিক এই বিষয়গুলো আমি একটা অসুস্থ মানুষ আপনাদেরকে বলে দেব? এখন যদি কমিটিকে খুঁজতে যান সেই কমিটি -ই তো খুঁজে পাবেন না। কে কার কাছে জবাবদিহি করবে। আর ওইদিন হাউজ মালিককে রাহাত ফোন করে সংগঠনে নিয়ে আসেন । এরপর আপনাদের সঙ্গে বসিয়ে দেওয়া হয় কথা বলার জন্য। ওই লোকের সামনেই তো কমিটি হলো। এরপর থেকে দেখা হলেই অভিযোগ করেন আমার পরিবার যোগাযোগ করেনি দেখে আপনারা কিছু করেননি। কী হাস্যকর! এই কথা বলে কোন দায় এড়াতে চান বুঝি না।। আমার পরিবার আপনাদের ফলোআপ করবে না ভাইয়া, গিল্ড আর ইকুইটির এক্সেকিউটিভ বডি ফলোআপ করবে। এটাই তো সাংগঠনিক নিয়ম।
তিনি লেখেন, গত ৯ মাস ধরে প্রতি মাসে ৩০/৪০ হাজার টাকা যেখানে আমর চিকিৎসা খরচ, যেই ভয়ংকর মানসিক দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে আমার পুরো পরিবার এক একটা দিন পার করছে, যে ট্রমার মধ্যে দিয়ে আমি আর রাহাত সব সামলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি কীভাবে আশা করেন এতো বড় একটা দুর্ঘটনার পর খুব ক্ষতিপূরণ চাই বলে বার বার আপনাদের কাছে যাব?
এরপর আঁখি লিখেছেন, সংগঠন বিচার করার জন্য না। দুই সংগঠন সারাবছর বিচার করতে করতে মনে হয় মাইন্ড সেট হয়ে গেছে সংগঠনের কাছে সবাই বিচার চায়। সংগঠনের কাজ কি শুধু বিচার আচার করা? সংগঠনের কাজ শিল্পী কলাকুশলীদের কাজের পরিবেশ সুন্দর করা। আমার কাজের পরিবেশ সুন্দর ছিল না। কাজের ক্ষেত্রটা অনিরাপদ ছিল। জীবনের নিরাপত্তা ছিল না। এগুলা ঠিক করেন। হাউজ মালিককে ডেকে জবাবদিহিতায় আনেন। নাহলে শুটিং হাউজে কালকে আরও ২/৪ টা শিল্পী মরুক, কেউ আগুনে পুড়ে, কেউ ছাদ থেকে পড়ে, কিংবা শুটিংয়ের ভারি লাইট মাথায় ভেঙে মরুক, দুই একটা বিগ শট মরুক। তখন হয়তো সংগঠনের টনক নড়বে। তারপর দেখি সংগঠন কী করে। (আল্লাহ মাফ করুক এমন যেনও কিছু না হয়)।
সবশেষে আঁখি লিখেছেন, আমি কোনো বিচার চাই না। আমার অবস্থান আমি পরিষ্কার করলাম আবারও। গণমাধ্যমের অবস্থান পরিষ্কার দুর্ঘটনার দিন থেকে। তারা ভিউ চায়, ক্লিক বিট চায়, তারা চাইলে কলমের খোঁচায় দফা রফা করে ফেলতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তাই তাদের কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই। সহকর্মীদের অবস্থান ক্লিয়ার, সহমর্মিতা দেখাবে, কিন্তু প্রতিবাদ করবে না। আমার চামড়ার দাম তো কম, চামড়ার বাজার মূল্য প্রতি প্রজেক্ট ৭০/৮০কে হলে দৃশ্যপট ই ভিন্ন হতো। কিন্তু সংগঠনের আসলে অবস্থানটা কী আমি ক্লিয়ার না। কিসের ভয় নিজ উদ্যোগে হাউজ মালিককে ডেকে তার গাফিলতির জন্য ক্ষমা চাওয়ালো। চাওয়া তো এটুকুই। এতটুকু করতে পারছেন না। এটা করতে কমিটি লাগে? জুজুর ভয়টা কোথায়?
শারমিন আঁখি এক দশক ধরে অভিনয় করছেন। তিনি বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। মঞ্চ থেকে তার অভিনয়ের শুরু। পরবর্তীতে টিভি নাটকে কাজ করেও আলোচনায় আসেন তিনি।