এইচ বি রিতা ও রোকেয়া দীপা : নিউইয়র্কে তীব্র তাপদাহ শুরু হয়েছে। ২০ জুলাই নিউইয়র্ক সিটি সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে, যা তাপমাত্রার ভিত্তিতে এদিন বছরের সবচেয়ে উষ্ণ একটি দিন ছিল। রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা অনেক বেশি উষ্ণ ছিল। এদিন তাপমাত্রা ৯৩ থেকে ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছেছিল। তাপমাত্রার প্রকৃত অনুভূতি ছিল আরও বেশি।

নিউইয়র্কে এমন দিনে আগের রেকর্ড ছিল ১৯৯৯ সালের ৬ জুলাই, ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এবার পরিস্থিতি আরও অসহ্য করেছে আর্দ্রতা। ৫০ শতাংশেরও বেশি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ২৩ জুলাই নাগাদ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে ৬০ শতাংশ। তীব্র এই ভ্যাপসা গরমে নিউইয়র্ক নগরের পার্ক, নদী ও সাগরের তীরে জনসমাবেশ ছিল লক্ষ্য করার মতো। বাসার ব্যাকইয়ার্ডেও শিশুরা এই গরম থেকে বাঁচার জন্য ওয়াটার পুলে সময় কাটিয়েছে। তবে এ সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আতঙ্কে অনেক বাঙালি আমেরিকানরা বাড়ি থেকে বের হননি। বয়স্কদের প্রতিবেশীদের বাড়ির সামনের বাগান বা রাস্তার পাশে হাঁটতে ও বসে থাকতে দেখা গেছে।

কুইন্সের ফ্লাশিংয়ে রুজভেল্ট এবং পারসন্সে বসবাসকারী মমতাজ বেগম একজন গৃহিণী। তিনি ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী। গরম আবহাওয়া তাঁর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তীব্র গরমে এসি থাকা সত্ত্বেও তিনি বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের ভয়ে তা কম ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় চার মাস ঘরে বন্দী। শরীর অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর এমন গরমে জীবন অতিষ্ঠ।’

স্ট্যাটেন্ট আইল্যান্ডে বাস করেন স্কুল শিক্ষিকা মুনিরা। তিনি বলেন, ‘অ্যাপার্টমেন্টের টপ ফ্লোরে থাকি। এসি ছাড়ার পরও বাসা ছিল বেশ গরম। ছাদের গরমের কারণে কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছিল না। সহ্য করতে না পেরে বাসার সামনে হার্ডসন রিভারের পাশে বসে ছিলাম দীর্ঘ সময়। এই গরমে রান্না করাও আমার কাছে কঠিন ছিল। সে কারণে খাবার অর্ডার করে এনেছি।’

রুজভেল্ট অ্যাভিনিউয়ে বসবাসকারী শেফা বেগম গৃহিণী। তিনি এক কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী গ্রোসারি স্টোরে কাজ করেন। প্রচণ্ড গরমে কয়েক দিন ধরে বিকেল হলেই মেয়েকে নিয়ে তাঁকে হাঁটতে দেখা যায়। তিনি জানান, আর্থিক সংকটের কারণে ঘরে তাঁদের এসি নেই। ফ্যান সারাক্ষণ ছেড়ে রাখলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। যদি সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করা হতো তাহলে তাঁরা উপকৃত হতেন। তিনি বলেন, ‘এই গরম সহ্য করা যাচ্ছে না। অতিমাত্রায় বিলের কারণে ফ্যান বন্ধ করে বিকেলে বাইরে হাঁটতে বের হই। অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে।’

ব্রঙ্কসে বাস করেন রাহুল রায়। তিনি বলেন, ‘গরম হওয়ায় ঝলসে যাচ্ছে নিউইয়র্ক। তাই আমি দুই বাচ্চা নিয়ে ১৮ জুলাই সারা দিন বাসায় কাটিয়েছি। অফিস বন্ধ থাকার পরও করোনার ভয়ে বাচ্চাদের নিয়ে কোনো ওয়াটার পার্ক বা বিচে যেতে সাহস পাইনি। প্রতি বছর সামারের জন্য অপেক্ষা করলেও এই বছর সামারের সব অনুষ্ঠান বাদ দিয়েছি করোনার ভয়ে।’

পারসন্স এবং ফরটিওয়ান অ্যাভিনিউয়ের কর্নারে থাকেন তিন সন্তানের মা আমেনা রহমান। বর্তমানে পার্ট টাইম কাজ করছেন ম্যানহাটন সাবওয়েতে। এ বছরের গরমে তিনিও অসুস্থবোধ করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ভয়ংকর গরমে পুড়ে যাচ্ছি মনে হচ্ছে। এই গরমে আমার ঘরে এসি থাকলেও সব সময় ব্যবহার করছি না বাড়তি বিলের কারণে। যা উপার্জন করছি পরিবার চালাতে তা যথেষ্ট নয়। সরকারের পক্ষ থেকে যদি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে কিছু সহযোগিতা করা হতো তাহলে উপকৃত হতাম।’

রুজভেল্ট অ্যাভিনিউ ও পারসন্স বুলেভার্ডের কর্নারে বসবাসরত আনোয়ারা বেগমকে দেখা গেল মাস্ক ও গ্লাভস পরে নিজের বাগানের সামনে বসে আছেন। তিনিও ডায়াবেটিক ও হাইপারটেনশনের রোগী। তিনি জানান, ‘জীবনে এমন গরম অনুভব করিনি। এমনিতেই করোনার ভয়ে মেয়ে আমার ঘর থেকে বের হতে দেয় না। তার ওপর আজকের ভ্যাপসা গরমে মনে হচ্ছে সেদ্ধ হয়ে গেলাম। এসিতেও গরম বাতাস। তাই বাইরে বসে আছি।’
উষ্ণ এই দিনটি প্রায় অনেকের জন্যই বিরক্তিকর। তবে উষ্ণতার চেয়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার আর্থিক সংকটও অনেকে বড় মনে করছেন।