রীনা গুলশান : যদি ঘরের কাজ করতে না চাওতো, আমাকে চাকরি করা থেকে অব্যাহতি দাও, সেটাও তো পারো না।
: কি তুই আমাকে টাকার খোঁটা দিস? তোর মত একটা মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি, এটা তোর ১৪ গুষ্টির কপাল।
: তাই নাকি? এত বড় নবাব সাহেব তো, বউকে দিয়ে ইনকাম করাও কেন?
: কি? যত বড় মুখ নয়, ততো বড় কথা? আজ তোর একদিন কি, আমারি একদিন! তারপরই সে ঝড়ের মত এসে প্রিয়তা মুখের উপরে এত জোরে ঘুষি মেরেছে, যে দূর্বল, বিষন্ন প্রিয়তা নিজেকে সামলাতে পারেনি। মাথা ঘুরে পড়ে গেছে; পড়বার সময়ে বেড সাইড টেবিলে কপাল ঠুকে গেছে। তবু ফ্লোরে পড়বার পূর্ব মুহূর্তে হাত দুটো দিয়ে নিজেকে ঠেকিয়ে ছিল। নাহলে ভুট হয়ে পড়তো। কপাল ফুটো হয়ে দর দর করে রক্ত ঝরছিলো। প্রিয়তা জ্ঞ্যান হারালো। কতক্ষণ জানে না। নিজের থেকেই জ্ঞ্যান ফিরে দেখলো আশেপাশে কোথাও আতিক নাই। তখন সে নিজেই ধীরে ধীরে উঠে দেখলো বাসার কোথাও আতিক নাই। মানে কাপুরুষটা বৌ পিটিয়ে পালিয়েছে। একবার ভাবলো পুলিশ কল করবে। আবার নিজেকে নিরস্ত করলো। তারপর ধীরে ধীরে, গোছানো স্যুটকেস, ব্যাগ নিয়ে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে আম্মুদের বাড়ি চলে গেলো।
তারপর অনেক কিছু ঘটে গেছে এই ৪/৫ মাসে। তবু প্রিয়তা নিজের থেকে আতিককে ডিভোর্স দেবার কথা একবারও ভাবেনি। যদিও তার আব্বু / আম্মু ঘোষণা করেই দিয়েছে, জীবন থাকতে ঐ বাড়িতে আর যেতে দেবে না। আর আতিক একবারও নিজে এসে অথবা ফোন করে, এমন কি এস এম এস করেও ক্ষমা চাইবার চেষ্টা করেনি।
উহ আবারও ব্যাথাটা চরম আকারে এলো। এবারে প্রিয়তা কোকিয়ে উঠলো-
: উহ ডাঃ আর পারছি না।
আর এন আবারো চেক করলো এবং মাথা নাড়লো পজিটিভলি, ডঃ এর দিকে চেয়ে। ডাঃ জলদি করে প্রিয়তার মাথার কাছে এসে নরম সুরে বললো-
: প্রিয়তা তুমি একজন গ্রেট ফাইটার, তুমি এমনকি ‘ঊঢ়রফঁৎধষ’ও নাওনি… আর একটু নিজেকে ধরে রাখো প্লিজ… উহু এভাবে নয়। শ্বাসটা নীচের দিকে ঠেলে দাও। হ্যাঁ, গাল দিয়ে নয়, শ্বাসটা নীচের দিকে- হ্যাঁ … হ্যাঁ এইভাবে … বেবী, তোমার বুকের উপর আসার জন্য অস্থির হয়ে গেছে। ওহ! কি কষ্ট। উহ, এত্ত যন্ত্রণা … সে আতিকের দেওয়া সব কষ্ট মনে করার চেষ্টা করলো- আহ। আর যেন নিতে পারছে না- হঠাৎ গোটা হাসপাতাল নাকি সারা পৃথিবী কাঁপিয়ে, এক নবজাতক শিশুর ক্রন্দন ধ্বনিত হলো!
“মেয়েটি একদিন পাখি হতে চেয়েছিলো।
নীলাম্বরী আকাশে সে একটুখানি পাখা মেলার
আনন্দ চেয়েছিলো,
কিন্তু একদিন হঠাৎ আকাশ হয়ে গেলো।
সে হয়েছিলো সব পাখীদের উন্মুক্ত ঠিকানা!!!
(মহাদেব সাহা)
সমাপ্ত।