অনলাইন ডেস্ক: তারেক রহমানসহ ২১ আগস্টের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের এই মেয়াদে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে পঁচাত্তরের খুনিদের মত ২১ আগষ্টের খুনিদেরও বিচারের রায় কার্যকর করা হবে। যারা বিদেশে আছে, বিশেষ করে তারেক রহমানসহ খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার ষষ্ঠদশ বার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভার স্বাগত বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করেন ও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতিহাস বড় নির্মম। শেখ হাসিনাকে যারা সেদিন টার্গেট করেছিল, তার হাত দিয়েই শুরু হয় নির্মমতার বিচার। ঐতিহাসিক রায় হয়েছে। মামলাটি এখন উচ্চআদালতে রয়েছে আপিল নিষ্পত্তির আশায়।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের পথের বাধা এক এক করে অপসারিত হচ্ছে। দেশের ভাগ্য বদলের ম্যাজিকাল ট্রান্সফর্মেশন হচ্ছে। আর ওইদিকে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশ-বিদেশে গুজব, ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার আর মিথ্যাচারের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘একাত্তরের লাখো শহীদের রক্তে যে মাটি ভিজেছিল, যে মাটি বঙ্গবন্ধুর রক্তে ভিজেছিল পঁচাত্তরে, সেই মাটিতে আবারও রক্তস্রোত, যা ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখেছে। সেদিন তাদের টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরের বুলেট ২০০৪ সালে ফিরে আসে প্রাণঘাতী গ্রেনেড হয়ে। নেতাকর্মীরা প্রাণপণ করে নেত্রীর সুরক্ষায় গড়ে তোলেন মানবঢাল। আল্লাহর অশেষ রহমতে আবারও বেঁচে যান শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে যা যা করার দরকার ছিল, তার সবই করেছিল তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দিয়ে করা হয় এক সদস্যের কমিশন। সে কমিশন হাস্যকরভাবে এই হামলার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশকে দায়ী করে দায়িত্ব শেষ করে। এভাবে এদেশে বিচারব্যবস্থাকে প্রহসনে রূপান্তরের অপচেষ্টা চালায় তারা।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে পঁচাত্তরে এদেশে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করে যাচ্ছেন। এ কথা প্রমাণিত যে, এদেশে সততা ও ত্যাগের প্রতীক বঙ্গবন্ধু পরিবার। জাতির পিতার কন্যা হয়েও শেখ হাসিনার যে সংগ্রামী জীবন, তা সমসাময়িক বিশ্বে বিরল।
গ্রেনেড হামলার ষষ্ঠদশ বার্ষিকী পালিত: আলোচনা সভার আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও শ্রদ্ধা জানান। পরে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম প্রমুখ।
পরে ১৪ দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বিএমএ এবং বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন নেতারা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানবন্ধন করেছে জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি কাজী আব্দুল কাইউম, সাধারণ সম্পাদক এম এইচ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আহমেদ চোধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল জুল জাবাদান প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে আলোচনা সভা করেছে। সংগঠনের সভাপতি খবির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আবদুল মোতালেব প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।