সুহেল ইবনে ইসহাক, টরন্টো, কানাডা : এ বছর অক্টোবর থেকে ঢাকা-টরেন্টো রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। টরেন্টো থেকে বিমানের যাত্রীদের নিউয়র্ক নিতে কানাডার রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স এয়ার কানাডার সঙ্গে চুক্তি করছে বিমান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সি.ই.ও. মো. মোকাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, ‘কানাডার সাথে আমাদের এয়ার এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী উইন্টার সিডিউলে কানাডার টরেন্টোর সাথে ফ্লাইট চালু করবো। তিনি আরো বলেন, “এয়ার কানাডার চুক্তি অনুসারে তারা টরেন্টো থেকে নিউইয়র্ক বা আমেরিকার যেকোন ডেস্টিনেশনে নিয়ে যাবে। আমরা শুধু ঢাকা থেকে টরেন্টো পর্যন্ত যাত্রী পৌছে দিবো”।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মুহিবুল হক বলেন, ‘ঢাকা-কানাডা হয়ে নিউইয়র্ক ফ্লাইট আগামী অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে শুরু করবো। এছাড়াও জাপানের ফ্লাইট চালু করবো। এ বিষয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
কানাডায় সপ্তাহে কয়টি ফ্লাইট যাবে, জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্হাপনা পরিচালক এবং সিইও বলেন, ‘এয়ার এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী মিনিমাম তিনটি ফ্লাইট চালানো যাবে। আমরাও মিনিমাম তিনটি চালাবো।’
ঢাকা থেকে জাপানেও খুব শিগগির বিমানের ফ্লাইট চালু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে জাপান সরকারের সাথে আমাদের চুক্তি রয়েছে।’ (সূত্র : ইউ.এন. বি./ ঢাকা ট্রাইবিউন)।
এই শুভ সংবাদে টরন্টোবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দ-উচ্চ্বাস। টরন্টোর কমিউনিটি নেতা ও ব্যবসায়ী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, টরোন্টোবাসী বাংলাদেশ বিমানের এহেন যৌক্তিক সিদ্ধান্তে খুবই আনন্দিত, তিনি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ জানান, তিনি আশা প্রকাশ করেন প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে বিমানের টিকেট ও সেবার মান অবশ্যই ভালো হবে ।
অন্টারিওর ব্রাম্পটন এলাকার কমিউনিটি নেতা, এয়ার কানাডায় দীর্ঘদিন চাকুরীরত বাংলাদেশী কানাডিয়ান মোতাহার হোসেন বাংলা কাগজকে জানান, বিমানের এই সিদ্ধান্তে তিনি খুবই উত্তেজিত, বাংলাদেশ বিমানের ক্রুদেরকে আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ট্রেনিং প্রদান করার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে আহবান জানান। তিনি আরো জানান যে, বাংলাদেশ বিমানকে ফ্লাইট সিডিউল যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে এবং এটা খুবই জরুরি। কারণ, এয়ার কানাডার মাধ্যমে টরন্টো থেকে আমেরিকার যাত্রীদের কানেকটিং ফ্লাইট মেনটেইন করা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অন্যথায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। তিনি জানান, বিমানের কোনো ভুলে যেন বাংলাদেশ বিমানের এই রুটটি বাতিল না হয়। “বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ টরন্টো,কানাডার” প্রেসিডেন্ট জাকির হোসেন বাংলা কাগজের এই সংবাদদাতাকে জানান, বাংলাদেশ বিমানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা রয়েছে সবসময়। তাই বিমানের এই সিদ্ধান্তে তিনি উৎসাহ ও আনন্দিত বোধ করছেন। ন্যায়, সততা ও নিষ্ঠার সাথে যদি বিমান এই রুটে যাত্রী সেবা দিয়ে যায়, অবশই বিমান লাভবান হবে এবং বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
টরোন্টোতে আরেক প্রবীণ বাঙালি কমিউনিটি নেতা আখলাক হোসেন জানান, বিমানকে দুর্নীতি মুক্ত ও অশুভের কালো হাত হতে দূরে রেখে যথাযথ সেবার মান নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। টরোন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের অফিস যেন দুর্নীতি মুক্ত হয়, বাংলাদেশিদের বাহিরেও অন্যান্য দেশের যাত্রীদেরকেও যেন সেবা দিয়ে বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধি করে, কর্তৃপক্ষকে সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখার দাবি জানান ।
মন্ট্রিয়লের সাংবাদিক সৈয়দ মেহেদী রাসেল বাংলা কাগজকে জানান, বাংলাদেশ বিমানের সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত প্রশংসার দাবি রাখে, ভবিষ্যতে বিমানের ফ্লাইট মন্ট্রিয়ল পর্যন্ত প্রসারিত করার জন্য বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি জোর দাবি জানান। টরন্টোর তরুণ কমিউনিটি নেতা জাকারিয়া রশিদ চৌধুরী বাংলা কাগজের এই সংবাদদাতার সাথে আলাপকালে জানান, বাংলাদেশ বিমানের এই সিদ্ধান্তটি তখনি সুসংবাদ হবে যখন বিমান দুর্নীতি মুক্ত, স্বজনপ্রীতিমুক্ত হয়ে যথাযত সেবা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিনি বিমানকে বিদেশী সংস্থার তদারকিতে অর্পণ করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার দাবি জানান। ফিনান্সিয়াল এডভাইজার ও কানাডা বাংলা টেলিভশন এর সি.ই.ও. ডক্টর হুমায়ুন কবির বাংলা কাগজকে জানান, “ঢাকা-টরন্টো রুটে বিমানের এই সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী ও প্রশংসনীয়, সকল বাংলাদেশিদের মতো আমিও আনন্দিত। বাংলাদেশ বিমানে আমার যাত্রা কখনও সুখকর নয়, বিমানের মেনটেন্যান্স, ফ্লাইট সিডিউলের ব্যাপারে যাত্রীরা যাতে বিড়ম্বনায় না পড়ে, সে ব্যাপারে বিমান কর্তৃপক্ষকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।”
টরোন্টোর এক কমিউনিটি নেতা ও সমাজকর্মী মিসবাহুল কাদির ফাহিম জানান, বাংলাদেশ বিমানের টিকেট সাশ্রয়ী ও সেবার মান উন্নত করা হবে এই রুটে বিমানের প্রথম কাজ। টরন্টোবাসি বাংলাদেশের একজন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বাংলা কাগজকে জানান, ঢাকা-টরেন্টো রুটে বাংলাদেশ বিমান ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্তটি একটি ভালো পদক্ষেপ, তিনি বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিভিন্ন রুটে বাংলাদেশ বিমানের সেবার মান নিয়ে যে সকল অভিযোগ রয়েছে, তা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ বিমান সর্বোচ্চ সেবার মান নিশ্চিত করবে।
ইংরেজি দৈনিক ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ এক প্রতিবেদন বাংলাদেশ বিমানের সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়ায় দিল্লি ও মদিনা, ম্যানচেস্টার রুটে ফ্লাইট শুরু করেছে বিমান। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ব্যাংকক হয়ে জাপান রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে বিমানের। এছাড়া ইস্তাম্বুলের সঙ্গে অনওয়ার্ড কানেকটিভিটি বাড়াতেও কাজ করছে এয়ারলাইন্সটি। সেখান থেকে অনওয়ার্ড কোড শেয়ারিংয়ে যাত্রীদের অন্য গন্তব্যে নেওয়া যাবে। টরেন্টো ফ্লাইট প্রসঙ্গে মোকাব্বির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও কানাডার এয়ার এগ্রিমেন্ট অনুসারে অক্টোবর থেকে টরেন্টোতে ফ্লাইট শুরু করবো। এরপর যাত্রীরা চাইলে সেখান থেকে নিউইয়র্ক যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে এয়ার কানাডা বিমানের যাত্রীদের নিউইয়র্কসহ অন্যান্য গন্তব্যে নিয়ে যাবে। প্রাথমিক ভাবে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।