অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে যেমন সাধারণ মানুষ রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন তারকারাও। তারকাদের কাছ থেকে এর আগেও এ ধরনের প্রতিশ্রুতি এসেছিল।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের নির্বাচন আগেরবারের চেয়ে আলাদা নয়। গেলবার লিনা ডানহাম, জন স্টুয়ার্ট, স্যামুয়েল এল জ্যাকসনের মতো তারকারা বলেছিলেন, নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবেন। এবার এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া তারকার সংখ্যা অগণিত না হলেও কম নয়। বিষয়টি দেখে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই কিছুদিন আগে মজা করে বলেছেন, বাইডেন বিজয়ী হলে তাঁকে দেশ ছাড়তে হবে।

মার্কিন নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখে ভোট শুরু হতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। এ অবস্থায় তারকাজগতের অনেকেই তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছেন। তাঁরা এখনো স্থিরপ্রতিজ্ঞ—ট্রাম্প বিজয়ী হলে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাবেন।

ব্রুস স্প্রিংস্টিন

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুরো চার বছরের মেয়াদকালে ট্রাম্পের কড়া সমালোচক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছেন ব্রুস স্প্রিংস্টিন। এ সমালোচনার কাজে তিনি নিজের ই স্ট্রিট রেডিও প্রোগ্রামকে কাজে লাগিয়েছেন। ৭১ বছর বয়সী এই রক তারকা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান প্রেসকে বলেছেন, ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি অস্ট্রেলিয়া চলে যাবেন।

একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফ ও ডেইলি মেইলকেও। অস্ট্রেলিয়াকে ভালোবাসেন জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, বিজয়ের একেবারে কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও কোনোভাবে যদি শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প জিতে যান নির্বাচনে, তবে পরের ফ্লাইট ধরেই তিনি অস্ট্রেলিয়া চলে যাবেন।

টমি লি

মার্কিন হ্যাভিমেটাল ব্যান্ড মোটলি ক্রুয়ের ড্রামার টমি লিও একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনে জো বাইডেনকে ট্রাম্প পরাজিত করে পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

বিনোদন পত্রিকা দ্য বিগ ইস্যুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টমি লি বলেন, নির্বাচনের ফল ট্রাম্পের পক্ষে গেলে তিনি তাঁর জন্মস্থান গ্রিসে ফিরে যাবেন। তবে তার আগে লন্ডন যাবেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা এটা যদি হয়ই, তবে আমি যুক্তরাজ্যে তোমাদের কাছে যাব আগে। আমি আমার মাতৃভূমিতে ফিরে যাব। গ্রিসের কোনো এক দ্বীপে বাড়ি কিনে থাকব।’

টমি লির ভাষ্যমতে, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের কাছে অনেক ছোট করেছে। ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলেছে দেশকে।

টমি লি ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর এতটাই বিরক্ত যে, প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি টুইটে লিখেছিলেন, ‘এটা কর্মফল।’

রিকি মার্টিন

লাতিন পপতারকা রিকি মার্টিনও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর বীতশ্রদ্ধ। একই সঙ্গে জো বাইডেনের প্রকাশ্য সমর্থক তিনি। মায়ামিতে বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার সমাবেশেও তিনি হাজির হয়েছিলেন।

বহু গানের জনপ্রিয় এই শিল্পী খোলাখুলিই বলেছেন, ‘আমি বাইডেনের সব সময়ের সমর্থক।’ ভ্যারাইটির ‘দ্য বিগ টিকিট’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমার মতে আমাদের হাতে থাকা একমাত্র বিকল্প তিনি (বাইডেন)। তিনি দারুণ। পুরো জীবনই তিনি রাজনীতিকে দিয়েছেন।’

ওই একই সাক্ষাৎকারে রিকি মার্টিন বলেন, তিনি ও তাঁর জীবনসঙ্গী শিল্পী জোয়ান ইয়োসেফ ট্রাম্প বিজয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

তবে এখন নিজের এই অবস্থানে আর দৃঢ়ভাবে নেই রিকি মার্টিন। বরং বলছেন, ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলেও তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

জন লিজেন্ড ও ক্রিসি টিজেন

জন লিজেন্ড ও ক্রিসি টিজেন ২০১৯ সালেই জানিয়েছিলেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর এতটাই বিরক্ত যে, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। বিনোদন পত্রিকা কসমোপলিটনকে লিজেন্ড বলেন, ‘আমাদের পুরো পরিবারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। ফলে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের জন্য খুব কঠিন। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি এমনই। একজন নেতা যখন পুরো দেশ ও গণতন্ত্রকে ধ্বংসের কাজে মেতে ওঠেন, তখন এ ছাড়া আর কী করার থাকতে পারে, তা আমার জানা নেই।’

জন লিজেন্ড এখানেই থামেননি। তিনি বলেছেন, ‘তারপরও যদি এমন কিছু ঘটে (ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে) তাহলে আপনাকে এমন কোনো জায়গায় যাওয়ার কথা ভাবতে হবে, যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র আছে। আছে আইনের শাসন ও মানবাধিকার। যুক্তরাষ্ট্র যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত নেয়, তবে মানুষের এ ধরনের বিকল্পের কথা ভাবা উচিত।’

গত নির্বাচনের আগে আগেও বহু তারকা ট্রাম্প বিজয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়বেন বলে জানিয়েছিলেন। এ তালিকায় ছিলেন মাইলি সাইরাস, স্যামুয়েল এল জ্যাকসন, স্নুপ ডগ, লিনা ডানহাম, ব্রায়ান ক্র্যানস্টন, অ্যামি শুমার, র‌্যাভেন সায়মন, জর্জ লোপেজের মতো তারকারা। এদের কেউই শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাননি। এবারও যে তারকারা ট্রাম্পের বিজয়ে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার আগাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত কথা রাখেন কিনা, তা দেখতে অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই।