‘এক ডালি কবিতা’ শিরোনামে বাংলাদেশের বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ-এর একক আবৃত্তিসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হলো গত শনিবার, ১৩ আগস্ট, টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ-র গোল্ডেন এইজ সেন্টার মিলনায়তনে।

অন্যথিয়েটার টরন্টো ও অন্যস্বর টরন্টোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই একক আবৃত্তিসন্ধ্যায় ডালিয়া আহমেদ-এর সাথে মঞ্চে ছিলেন কন্যা দামিনী। দামিনী কিছু কবিতার ইংরেজি অনুবাদ আবৃত্তি করেন। কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন অনুবাদক রানা ঠাকুর। তিনি সম্পর্কসূত্রে ডালিয়া আহমেদের স্বামী ও দামিনীর পিতা।

মূল সংগঠক ও নির্দেশক আহমেদ হোসেন সূচনা বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডালিয়া আহমেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কথা এবং তাঁর ভাই সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল আবু তাহের বীর উত্তম তাঁকে সমরাস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
নীলাভ নিয়ন আলোয় মায়াবী এক আবহে মঞ্চে সফেদ কাপড়ে ঢাকা একটি উঁচু আসনে শৈল্পিক সজ্জায় লাল শাড়ি পরা ডালিয়া আহমেদ পদ্মফুলের মতোই পদ্মাসনে বসে কাজী নজরুল ইসলামের প্রার্থনা বচন আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শুরু করেন এক ডালি কবিতাসন্ধ্যা। কন্যা দামিনী কবিতাটির ইংরেজি অনুবাদ আবৃত্তি করেন।

‘প্রার্থনা’ শেষে দর্শকদের উদ্দেশ্যে ডালিয়া আহমেদ সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিশেষ অতিথি কবি আসাদ চৌধুরীর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং এই আবৃত্তিসন্ধ্যা আয়োজনের জন্য অনুজপ্রতিম আহমেদ হোসেন ও তাঁর সতীর্থদের প্রতি তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, চার বছর আগে টরন্টোর এই মঞ্চেই তিনি আবৃত্তি পরিবেশন করেছিলেন এবং সেই আয়োজনেরও উদ্যোক্তা ছিলেন আহমেদ হোসেন।

তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বিভিন্ন কবির মোট সতেরোটি কবিতার আবৃত্তি পরিবেশন করেন। এই কাব্যমালায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বাংলাসাহিত্যের বিখ্যাত কবি থেকে শুরু করে সমকালীন তরুণ প্রজন্মের কবি এবং একজন বিদেশি কবি – কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নির্মেলেন্দু গুণ, দেবব্রত সিংহ, সুবোধ সরকার, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিলা মোস্তফা, পূর্ণ পাত্র, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ও ব্রায়ান বিলসটন্স।

কবিতার নির্বাচনে ডালিয়া আহমেদের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঘুরে-ফিরে এসেছেন বারংবার জনপ্রিয় কবিতাগুলো নিয়ে যেমন, খেয়া কাব্যগ্রন্থ থেকে শুভক্ষণ ও ত্যাগ, মহুয়া থেকে সবলা, পরিশেষ থেকে প্রশ্ন, কড়ি ও কোমল থেকে প্রাণ, প্রভাত সঙ্গীত থেকে নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ উল্লেখযোগ্য। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান -এর প্রয়াণ দিবসকে স্মরণ করে নিবেদন করেন নির্মলেন্দু গুণ-এর কবিতা ‘সেই রাত্রির কল্পকাহিনী’। ব্রিটিশ কবি ব্রায়ান বিলসটন্স-এর ‘রেফিউজি’ কবিতাটির আবৃত্তি দর্শক-শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। পরিশেষে, সংস্কৃত ভাষার ‘শিব তান্ডব স্তোত্রম’ আবৃত্তি দিয়ে শেষ করেন প্রায় দেড় ঘন্টার একক আবৃত্তিসন্ধ্যার পরিবেশনা।

মিলনায়তন ভর্তি মুগ্ধ-শ্রোতার তুমুল করতালিতে ছিল অভিনন্দন ও প্রশংসার উষ্ণ আবেগ। টিকেট কেটে শুধু কবিতা আবৃত্তির আয়োজনে দর্শকমন্ডলীর এমন উপস্থিতি ও আগ্রহ দেখে অনেক শ্রোতাই তাদের মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এই পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের সাথে প্রশ্ন ও অভিব্যক্তির বিনিময় হয়। অতিথি কবি আসাদ চৌধুরী ডালিয়া আহমেদ ও তাঁর কন্যা দামিনী-এর আবৃত্তির প্রশংসা করেন এবং নতুন প্রজন্ম দামিনীকে উৎসাহিত করার জন্য সবাইকে করতালি দিতে আহবান করেন।

অন্যস্বর ও অন্যথিয়েটারের আয়োজনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “অন্যস্বর অনেক রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, অন্যথিয়েটারও তাই, তিনকন্যার উপাখ্যান-এর আমি মুগ্ধ দর্শক। অন্যস্বর আবৃত্তি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যে অনুষ্ঠানগুলো করে সেগুলো আমাকে আনন্দিত করে।”

দর্শক-শ্রোতার অনুরোধে ডালিয়া আহমেদ আবৃত্তিজীবনে প্রবেশ ও আবৃত্তি নির্মাণের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। একটি কবিতার ভালো আবৃত্তি পরিবেশনে কবিতাটির বিষয়বস্তুকে ভালোভাবে বুঝে নেয়া ও কবিতাটি মুখস্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “আমার মনে হয় একটি কবিতা যখন মুখস্ত করে ফেলব আমরা তখন বোধহয় আবেগটা ভালোভাবে দেয়া যায়”।

এক ডালি কবিতাসন্ধ্যার এই আয়োজনটিকে সাফল্যের সাথে মঞ্চায়নে সহযোগিতা করার জন্য সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী সদস্য ও পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ জানান আহমেদ হোসেন এবং স্মৃতি-ছবির জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি রেখা টানেন।