জসিম মল্লিক : এ বছর টরন্টো বইমেলা ১৭ বছর পূর্ণ করছে। বলা যায় টরন্টো বইমেলা গনগনে তারুণ্যে পদার্পন করেছে। এখন টরন্টো বইমেলা একটা প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে গেছে। সর্বত্র্য পরিচিতি অর্জন করেছে। দেশে-বিদেশে টরন্টো বইমেলা একটি আলাদা মর্যাদায় দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সবচেয়ে বৃহৎ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবটি হচ্ছে নিউইয়র্কে। তারপরই টরন্টো বইমেলার নাম উচ্চারিত হয়। বর্হিবিশ্বে বাংলা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই বইমেলা অনন্য ভ‚মিকা পালন করছে। বিগত দিনগুলোতে অনেক খ্যাতিমান লেখক, প্রকাশক টরন্টো বইমেলায় অংশ নিয়েছেন। বইমেলাকে মহিমান্বিত করেছেন। বছরে দুইদিন শহরে একটি উৎসবের আমেজ তৈরী হয়। লেখক, প্রকাশক আর পাঠকের একটি মহামিলন ঘটে। সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে বোদ্ধারা আলোচনা করেন।

নতুন প্রজন্ম আলোকিত হয়। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারে। স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের জন্য টরন্টো বইমেলা একটি আবেগের নাম, একটি শ্রদ্ধার নাম। দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে টরন্টো বইমেলা স্বীকৃতি পেয়েছে। ভবিষ্যতে টরন্টো বইমেলা আরো এগিয়ে যাবে, আরো প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, সার্বজনীন হবে এই প্রত্যাশা করি।

আমি বইমেলার একজন সাধারণ কর্মী হিসাবে জড়িত থাকতে পেরে নিজেকে গৌরাবান্বিত মনে করি। বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। আত্মার সাথে আমাদের সম্পর্ক। যেখানেই বইমেলা সেখানেই আমি থাকতে চেষ্টা করি। কখনও ঢাকা, কখনও নিউইয়র্ক, কখনও কোলকাতা, কখনও লন্ডন, কখনও ওয়াশিংটন ডিসি। ফি বছর ছুটে যাই বইমেলার টানে দেশে বিদেশে। লেখালেখি, বই বা বইমেলার জন্য আমি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। অনন্ত ত্যাগ। এমনকি আমি বরিশালও ছেড়েছিলাম লেখালেখির জন্য। এক অনিশ্চিত জীবন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছিল। আমি কখনও পিছনে ফিরে তাকাইনি। সাহিত্যকে ভালোবেসে আমার সবটুকু শ্রম এর পিছনে দিয়েছি। আজকে টরন্টো বইমেলা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। কিন্তু এর শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না। অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে টরন্টো বইমেলা তার অভিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য দুই বাংলা মিলে সারা পৃথিবীতে এখন প্রায় দেড় কোটির মতো বাঙালি বাস করছে। ভাষা চর্চার ব্যাপারটি সর্বত্র্যই লক্ষ্য করা যায়। বাংলা ভাষা পৃথিবীর ৫ম বৃহত্তম ভাষা। পৃথিবী থেকে অনেক ভাষারই বিলুপ্তি ঘটেছে। আরো বিলুপ্তি ঘটবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু বাংলা ভাষা কোনোদিন হারিয়ে যাবে না। ভাষা আছে বলেই বাংলা সাহিত্যের বিশ্বায়ন ঘটেছে। এখন আর ভৌগলিক সীমার মধ্যে কোনোকিছু বন্দী নেই। অনেক নাম করা সাহিত্যিকরা এখন ছড়িয়ে পড়েছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে। তারা তাদের অবদান রেখে চলেছেন। রবীন্দ্রনাথের পরে আর কেউ সেভাবে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে না পারলেও নিজের জাতি গোষ্ঠির মধ্যে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের যথেষ্ঠ প্রতিযোগিতা আছে এবং তা অতি উচ্চ মানের। যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি।

ভবিষ্যতে টরন্টো বইমেলা আরো অনন্যা উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিদেশে বসে লেখালেখি বা সাহিত্য চর্চ্চার কাজটি যথেষ্ট কঠিন। যারা এই কাজটি করেন তারা নমস্য। বাঙালির ঘরে বাংলা বই থাকবে না তা হতে পারে না, বাংলা ভাষায় নতুন প্রজন্ম কথা বলবে না তা হতে পারে না। এই কাজটি আমাদের করে যেতে হবে। বাংলাভাষার এই যে বিশ্বায়ন বইমেলা তার একটি উদাহরণ। আর কাজটি নিষ্ঠার সাথে করছেন, অন্যদের একসুতোয় বেঁধেছেন যিনি তিনি হচ্ছেন টরন্টো বইমেলার আহবায়ক সাদী আহমেদ। তাঁদের ধন্যবাদ।